অবহেলা ও অযতেœ ইতিহাস ঐতিহ্যের বিবির পুকুরের সৌন্দর্য ম্লান অবহেলা ও অযতেœ ইতিহাস ঐতিহ্যের বিবির পুকুরের সৌন্দর্য ম্লান - ajkerparibartan.com
অবহেলা ও অযতেœ ইতিহাস ঐতিহ্যের বিবির পুকুরের সৌন্দর্য ম্লান

3:23 pm , November 17, 2018

জুবায়ের হোসেন ॥ নগরীর প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক ‘বিবির পুকুর’। এই পুকুরকে ঘিরেই ক্রমে প্রসারিত হয়েছে বরিশাল নগরী। বাংলাদেশের অন্য কোনো বিভাগীয় শহরের প্রানকেন্দ্রে এ ধরনের পুকুর নেই। এটি বরিশাল নগরীর অন্যতম সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত। তবে বর্তমানে তদারকী ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই বিবির পুকুর এর সৌন্দর্য এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। এই পুকুরটির সৌন্দর্য বর্ধনের অসমাপ্ত কাজগুলোও এখন ক্ষতিগ্রস্থ। যা শীঘ্রই নজরে না আনলে আমাদের গর্বের বিষয় এই বিবির পুকুর তার জৌলুস হারাবে অবশ্যই। সূত্র মতে, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারকরা (মিশনারি) বরিশালে আসেন। জানা যায়, উইলিয়াম কেরি পর্তুগিজ দস্যুদের কাছ থেকে জিন্নাত বিবি নামের এক মুসলিম মেয়েকে উদ্ধার করে তাকে লালন-পালন করেন। পরে এক মুসলিম যুবকের কাছে জিন্নাত বিবিকে বিয়ে দেয়া হয়। উইলিয়াম কেরি জিন্নাত বিবিকে জেনেট বলে ডাকতেন। ১৯০৮ সালে জিন্নাত বিবি জনগণের পানির কষ্ট দূর করার জন্য পুকুর খননের উদ্যোগ নেন এবং এ অনুযায়ী নগরীর সদর রোডের পূর্বপাশে ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮৫০ ফুট প্রস্থ একটি পুকুর খনন করা হয়। তখন থেকেই পুকুরটি ‘বিবির পুকুর’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
এক সময় কীর্তনখোলা নদীর সাথে এ পুকুরের দু’টি সংযোগ ছিল এবং এতে নিয়মিত জোয়ার ভাটা প্রবাহমান ছিল। সংযোগ দু’টির একটি বরিশাল সার্কিট হাউজ হয়ে মৃতপ্রায় ভাটার খালের মাধ্যমে কীর্তনখোলায় এবং অন্যটি নগরীর গির্জা মহল্লার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিলুপ্ত খালের মাধ্যমে কীর্তনখোলা নদীর সাথে যুক্ত ছিল। বরিশাল পৌরসভা স্থাপনের পর থেকেই বিবির পুকুরটি বিভিন্নভাবে সংস্কার ও পুনর্খনন করা হয়। ৯০-এর দশকে পৌর চেয়ারম্যান আহসান হাবিব কামাল পুকুরটির ঐতিহ্য রক্ষায় বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন করলেও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৩ সালে অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার মেয়র থাকাকালে বিবির পুকুরের চারপাশ পাকা করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়।
২০০৮ সালে শওকত হোসেন হিরণ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিবির পুকুরের ঐতিহ্য রক্ষা এবং সৌর্ন্দর্য্য বর্ধনে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেন। এর মধ্যে পুকুরের চারপাশে ঝুলন্ত পার্ক, বিশ্রাম নেয়ার জন্য বেঞ্চ, অত্যাধুনিক গ্রিল ও পুকুরটির শোভা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের লাইটিং স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করেন। পাশাপাশি বিবির পুকুরের পাশেই উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র পাবলিক স্কয়ার (বর্তমানে হিরণ স্কয়ার নামে পরিচিত) এবং পুকুরের মধ্যে ফোয়ারা স্থাপন করেন।
বর্তমানে বিবির পুকুর বর্তমানে নাগরিক বিনোদনের একটি স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিকেলে ও সন্ধ্যায় জনগণ আড্ডা ও অবসর সময় কাটানোর জন্য পুকুর পাড়ে ও হিরণ স্কয়ারে জড়ো হয়। ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর জনগণের জন্য পুকুরের চারপাশ ও হিরণ স্কয়ার এলাকায় ফ্রি ওয়াই-ফাই সুবিধা যুক্ত করা হয়। পুকুরটি শহরের কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় এবং যাতায়াত সুবিধা ভালো থাকায় অনেক রাত পর্যন্ত এখানে মানুষ ভিড় করে। পুকুরের পাশে বাহারি রকমের মুখরোচক খাবারও পাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে চটপটি, ফুচকা, বুটমুড়ি, পিয়াজু ও নানান ধরনের চপ। ২০১২ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ও গ্রামীণফোনের অর্থায়নে বিবির পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে পুকুরের চারপাশে ঝুলন্ত পার্ক, বসার বেঞ্চ, অত্যাধুনিক গ্রিল ও পুকুরের শোভা বৃদ্ধির জন্য লাইটিংকরণ, পুকুরটির ইতিহাস সংবলিত বিলবোর্ড, পুকুর ঘিরে বৃক্ষরোপণ, উন্নত ওয়াকওয়ে ও রঙিন ফোয়ারা স্থাপন।
এক কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুকুরটির সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও প্রকল্পের অনেক কিছুই এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। যেটুকু করা হয়েছে তার অনেকটাই এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে। বহুদিন ধরেই পুকুরের মধ্যকার রঙিন আলোর ফোয়ারাটি অচল হয়ে আছে। যাচ্ছেতাই বিলবোর্ড স্থাপনের কারণে পুকুরটির সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া বড় বড় রাজনৈতিক ব্যানারের ভারে বেশ কয়েকটি স্থানের ওয়াকওয়ে রেলিং ভেঙ্গে পড়েছে। বেশ কয়েকটি ল্যাম্পপোস্ট ভেঙ্গে পরে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া পুকুরটি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নেই কোন বাধ্যবাধকতা। যেমন তেমন ভাবে ব্যবহার ছাড়াও ময়লা আবর্জনা ফেলাও হচ্ছে কখনও কখনও।
নগরীর প্রান এই বিবির পুকুরটির এমন অবস্থার বিষয়ে নাগরিক সমাজের নেতাদের সাথে আলাপকালে তারা বলেছেন, বিবির পুকুরটি নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে তবে তা কখনই শতভাগ বাস্তবায়িত হয়নি। এছাড়া আমাদের এই ঐতিহ্যের নিদর্শনটির মর্ম সম্পর্কে আমরাও অতটা সচেতন না তাই বারবার একে আমরা নষ্ট করে ফেলি নিজেদের অসচেতনতায়। তাই বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লার মত দায়িত্ববান কাউকেই এখন আমাদের বরিশাল নগরীর এই অনন্য পরিচয় বিবির পুকুর রক্ষণাবেক্ষণের গুরুদায়িত্ব নিতে হবে বলেও জানান তারা।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT