মৈমনসিংহের মহুয়া সুন্দরী এখন বরিশালে! মৈমনসিংহের মহুয়া সুন্দরী এখন বরিশালে! - ajkerparibartan.com
মৈমনসিংহের মহুয়া সুন্দরী এখন বরিশালে!

3:16 pm , November 16, 2018

সাঈদ পান্থ ॥ ঘরের দাওয়ায়, কখনো ধান কাটা মাঠে গা-শিউরানো বাতাসের চাঁদোয়ায়, চন্দ্রালোকে ভিজে অথবা হয়তো হ্যাজাক বাতির অল্প আলোতে আর বাকিটা আঁধারে ঢাকা কোনো রহস্যঘেরা রাতে গাওয়া গীতিকাব্যের মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’। এই গীতিকার এক অমর প্রেমকাহিনী ‘মহুয়া’ পালা প্রায় ৪’শ বছর আগেকার। সেই কাহিনী নিয়ে বরিশালে অন্যতম নাট্য সংগঠন খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটার সৃস্টি করেছে ৯৭ তম প্রযজনা। এই নাটকটি শনিবার থিয়েটার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। নাটকটির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।
নাটকটির কাহিনী সংক্ষেপে বলা যায়, ৬ মাসের পথের দূরত্বে গারো পাহাড়ের ওপর হিমানী পর্বত। এর উত্তরের সাগর পাড়ের চান্দ সূরুজ নাই আন্দারিতে ঘেরা গভীর বনে বাস করে ডাকাত সর্দার বেদে হুমরা বাইদ্যা। ১৬ বছর আগে ধনু নদীর পাড়ের কাঞ্চনপুর গ্রামের এক ব্রাহ্মণের ছয় মাসের কন্যাকে চুরি করে আনে সে। তাকে লালন-পালন করে বড় করে, বিভিন্ন কসরত শেখায় আর খেলা দেখিয়ে বেড়ায়। উপচে পড়া রূপ ‘আন্দাইর ঘরে থুইলে কন্যা জ্বলে কাঞ্চা সোনা’ নাম মহুয়া সুন্দরী। একবার বামনকান্দা গ্রামের ব্রাহ্মণ নদ্যার চান ঠাকুরের বাড়িতে খেলা দেখাতে যায় বাপ-বেটি। মহুয়ার কসরতে মুগ্ধ রূপবান নদ্যার ঠাকুর হুমরা বাইদ্যার দলকে উলুইয়াকান্দা নামক স্থানে বসতের অনুমতি দেন।
‘নয়া বাড়ী লইয়ারে বাইদ্যা লাগাইল বাইঙ্গন।
সেই বাইঙ্গন তুলতে কইন্যা জুড়িল কান্দন।’
এখানেই এক সন্ধ্যাবেলা জলের ঘাটে নদের চাঁদ ঠাকুরের সঙ্গে মহুয়ার মন দেয়া-নেয়া হয়। কিন্তু অসম অবস্থানের প্রেম নিয়ে হুমরা বাইদ্যার মনে জেগে ওঠে ভয় আর শঙ্কা। পরিস্থিতি এড়াতে সে গভীর রাতে মহুয়া আর দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়। ওদিকে মহুয়ার বিরহে চাঁদ ঠাকুরের পাগলপ্রায় দশা। তীর্থের নামে সে বেরিয়ে পড়ে মহুয়ার খোঁজে। বহু দেশ ঘুরে অবশেষে সে দেখা পায় মহুয়ার, কংসাই নদীর পাড়ে। হুমরা এবার মহুয়ার হাতে তুলে দেয় বিশলক্ষের ছুরি। বাপের শপথের পরও জিতে যায় মহুয়া প্রেম। সে মারতে পারে না চাঁদকে। তারা পালিয়ে যায়। পথে খর¯্রােতা পাহাড়ি নদী পার হওয়ার জন্য তারা ওঠে সওদাগরের এক নায়ে। কিন্তু সেখানে আরেক বিপদ। মহুয়ার রূপে মুগ্ধ হয়ে সওদাগর চাঁদকে নদীতে ফেলে দেয়। উপায়ান্ত না দেখে মহুয়া সওদাগরের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার ভান করে। তার কাছে থাকা পাহাড়ি তক্ষকের বিষ মিশিয়ে পান বানিয়ে খাওয়ায় ডিঙ্গার সবাইকে। সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়লে পালিয়ে যায় সে। বাঘ-ভালুক, দেও-দানো, সাপখোপের ভয় না করে সে খুঁজে বের করে মৃতপ্রায় চাঁদকে। এক সন্ন্যাসীর সাহায্যে সে চাঁদকে সুস্থ করে তোলে। এদিকে সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী মহুয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। সেখান থেকেও দুর্বল চাঁদকে কাঁধে নিয়ে মহুয়া পালায়। এভাবে কাটে ছয় মাস। তারা এখন বনেই পেতেছে সুখের সংসার। কিন্তু প্রেম যেখানে খর¯্রােতা, ভাঙনও সেখানেই মারাত্মক। একদিন সে বনেই হাজির হয় হুমরা বাইদ্যার দল। শিকারি কুকুরের সাহায্যে তারা খোঁজ পেয়ে যায় মহুয়ার। এবার সামনে দাঁড়িয়ে মহুয়ার হাতে বিষলক্ষার ছুরি তুলে দেয় হুমরা চাঁদকে মারার জন্য। অসহায় মহুয়া ছুরি নিজের বুকেই বসিয়ে দেয়, আ বেদের দল হত্যা করে চাঁদকে। অবশেষে দুজনের মিলন হয় একত্রে মাটিচাপা পড়ে- ‘হুমরার আদেশে তারা কয়বর কাটীল।
একসঙ্গে দুইজনে মাটী চাপা দিল।’
বিরহের ভেতরেই মিলন ঘটল দুই হতভাগ প্রেমিক-প্রেমিকার। আর এভাবে শেষ হয় পালাটি। ময়মনসিংহের এক পালাকার ব্রাহ্মণ দ্বিজ কানাই তার কুঁড়েঘরে বসে যে পালা লিখেছেন তাই একদিন এক দেশ থেকে অন্য দেশে বয়ে যায়, সময়ের পাখায় চড়ে, ভাষা পরিবর্তন করে ইউরোপের কালজয়ী রোমান্স ‘ট্রিস্টান অ্যান্ড ইসল্ড’ হয়ে।
মহুয়া পালায় মোট ৭৫৫ ছত্র আছে। দীনেশচন্দ্র সেন এই পালাকে ২৪টি অধ্যায়ে বিভক্ত করেছেন। এই নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন অপূর্ব কুমার রায় অপু। লোকসংস্কৃতি সাধনায় খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটারের ৯৭তম প্রযোজনা মহুয়া। থিয়েটারের সভাপতি এ্যাড. নজরুল ইসলাম চুন্নু আশা প্রকাশ করেছেন, এক ঝাঁক নবীন ও তরুণ নাট্যকর্মীর দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল মহুয়া দর্শকদের আপ্লুত করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT