3:11 pm , November 16, 2018

খান রুবেল ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বরিশালের ৬টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে চলছে আলোচনার ঝড়। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে আলোচনার ডাল-পালাও ততটা ছড়িয়ে পড়ছে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছেন বর্তমান এমপিরা। আবার পরিবর্তনের আশংকাও করছেন অনেকে। কয়েকটি আসনে নতুনদের আগমনে আওয়ামী লীগের বর্তমান কয়েকজন এমপি বাদ যেতে পারেন মনোনয়নের তালিকা থেকে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আর তাই আগামী ১৯ নভেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় বেঁধে দিয়েছে ইসি। সে অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ের বাকি মাত্র ৩দিন। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং জমা কার্যক্রম শেষ হয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে সাক্ষাতও করেছেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন শুধু নৌকা প্রতীকের জন্য মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণার অপেক্ষা। আজ অথবা কালের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থীদের নাম ঘোষনার আশা করছেন দলীয় নেতারা। এদিকে মনোনিত প্রার্থী ঘোষনার পূর্বে দেশের অন্যান্য সংসদীয় আসনের ন্যায় উৎকন্ঠার শেষ নেই বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি সংসদীয় আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে। বিশেষ করে বরিশাল জেলার ৬টি আসনের মধ্যে ৫টি আসনে মনোনয়ন নিয়ে ভাবনার অন্ত নেই প্রত্যাশী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক এমনকি সাধারণ মহলেও। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে হবেন আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি সেটাই এখন প্রধান আলোচনার বিষয় তাদের কাছে।
অপরদিকে প্রার্থী ঘোষণা না হলেও বরিশাল সদর সহ ৫টি আসনে নৌকার মাঝি’র আলোচনায় উঠে এসেছে কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম। এদের মধ্যে থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষনা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। বরিশাল সদর আসনে এমন আলোচনায় সবার আগেই রয়েছেন বর্তমান এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ। নারী কোটার অগ্রাধিকার এবং কেন্দ্রের শক্তিশালী লবিং এর কারনে বিগত চার বছরের জনবিচ্ছিন্ন এই এমপিকেই পুনরায় নৌকার মাঝি করার আলোচনা চলছে। তবে তিনি একাই নন, সদর আসনে আলোচনায় রয়েছেন আরো দু’জন। এরা হলেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) সহ অপর এক নেতা। রাজনীতিতে ত্যাগ ও তাদের পূর্ব আমলনামার কারনেই সদর আসনে মনোনয়ন আলোচনায় এড়িয়ে আছেন এ দু’জন। তাছাড়া তাদের নির্বাচনের বিষয়ে রয়েছে পূর্ব অভিজ্ঞতাও।
এদিকে বরিশাল-১ আসনে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতই একাদশেও একক প্রার্থী আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ-এমপি। তাই তিনিই এই আসনে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন। বরিশাল-২ আসনে পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। তৃণমূলের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে আসনটিতে বানারীপাড়া-উজিরপুরের নেতাদের মধ্যে থেকেই কাউকে নৌকার মাঝি করা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এমন আভাসে অনিশ্চয়তায় পড়ে যান এই আসনের বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস-এমপি। আসনটিতে আলোচনায় আছেন শেরই-বাংলা একে ফজলুল হক এর দৌহিত্র একে ফাইয়াজুল হক রাজু ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী গণ অভূত্থানের অন্যতম নেতা শাহে আলম। তবে বরিশাল-২ আসনে চমক দেখাতে পারেন শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এর কনিষ্ঠ পুত্র খোকন সেরনিয়াবাত। তার প্রার্থীতার উপর নির্ভর করছে বর্তমান এমপি’র মনোনয়নের বিষয়টি। অবশ্য আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন- বরিশাল-২ আসনে তালুকদার ইউনুসকেই পুনরায় বেছে নিবেন দলের হাইকমান্ড।
বরিশাল-৩ আসনে আলোচনায় আছেন দু’জন। যার মধ্যে একজন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা ও সাবেক সচিব সিরাজ উদ্দিন আহমেদ। অপরজন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক মিজানুর রহমান। এদের মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন সিরাজ উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু জোটগত সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হয় তাকে। সেদিক বিবেচনা করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ভাগ্য খুলতে পারে তার।
বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী বর্তমান এমপি পঙ্কজ নাথ। নানান আলোচনা-সমালোচনা এবং বিতর্কের মধ্যেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলোচনার শীর্ষে তিনি। যদিও তার বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন একাধিকবার বঞ্চিত নেতা মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এড. আফজালুল করিম। আসন্ন নির্বাচনে আসনটিতে এই দুই নেতার মধ্যে একজন নৌকার মাঝি হবেন বলে কেন্দ্রীয় সূত্রে জানাগেছে।
বরিশাল-৬ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে এদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন মেজর (অব:) হাফিজ মল্লিক। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জোটগত নির্বাচন এবং কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান হাফিজ মল্লিক। অবশ্য আসনটিতে আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল হক মঞ্জুও। আবার শোনা যাচ্ছে বরিশাল-২ আসনে নতুন প্রার্থী আসলে বরিশাল-৬ আসনে স্থানান্তর হতে পারেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস। তবে এসব আলোচনা এবং গুঞ্জনের আবসান ঘটবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষনার মধ্যে দিয়ে। এমনটাই দাবী করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।