বিসিসি’র চতুর্থ পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত দূর্নীতিমুক্ত নগর ভবন করবেন মেয়র সাদিক বিসিসি’র চতুর্থ পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত দূর্নীতিমুক্ত নগর ভবন করবেন মেয়র সাদিক - ajkerparibartan.com
বিসিসি’র চতুর্থ পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত দূর্নীতিমুক্ত নগর ভবন করবেন মেয়র সাদিক

3:18 pm , November 14, 2018

মর্তুজা জুয়েল ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেছেন নগর ভবন আমার ঘর, এটি আমার ব্যবসা কেন্দ্র নয়। আমি মনে করি এটা নগরবাসীর সেবা করার স্থান। আমি এখানে এসেছি নগরবাসীর সেবা করার জন্য। ব্যবসা করার জন্য জন্য নয়। বর্তমান নগরীর যে অবস্থা তা লুকানোর কিছু নেই, এজন্য আমি প্রকাশ্যে আজকের এই সভা সকলের জন্য উন্মুক্ত রেখেছি । বর্তমানে নগরীর বাহিরের যে অবস্থা তার তুলনায় নগর ভবনের ভিতরের অবস্থা আরো বেশী খারাপ ।
গতকাল নগর ভবনে অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশনের ৪র্থ পরিষদের প্রথম সভায় তিনি এসকল কথা বলেন। নগর ভবনের সভাকক্ষে বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতির বক্তৃতায় নবনির্বাচিত মেয়র আরো বলেন, আমার দায়িত্ব গ্রহনের পর বলা হয়েছিল ৩৫০ কোটি টাকা দেনা রয়েছে । কিন্তু আমি হিসাব করে দেখলাম এ দেনার পরিমাণ আরো অনেক বেশি। পূর্বে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন পরিকল্পনা অনুযায়ী এবং সততা ও দক্ষতার সাথে কাজ না করায় এ ধরনের গরমিল তৈরি হয়েছে । এ ধরনের গড়মিলের বিষয়গুলোকে অডিট এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে আমি কাজ শুরু করব ।
নগর ভবনের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত আমি আমার গাড়ির জ্বালানি তেলও ব্যক্তিগত খরচে বহন করছি । এখন পর্যন্ত নগর ভবনের পয়সায় চা পান ছাড়া অন্য কোন ব্যয় আমি করিনি । হিসাব করে দেখেছি নগর ভবনের যে আয় তা দিয়ে নগরীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয়া সহ অন্যান্য কাজ সুন্দরভাবে পরিচালনা করা যায়। কিন্তু বিগত দিনে যারা ছিলেন তারা কেন পারেননি তা এখন সামনে চলে এসেছে । সভায় উপস্থিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদ্দ্যেশে মেয়র বলেন,কর্পোরেশনের যারা দায়িত্বরত আছেন তাদের কোন ডাটাবেজ নেই, বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ হলেও এখানে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়না। যারা সিটি কর্পোরেশনে এর কাজ করবেন, তাদের সকলের ছবি সহ ডিজিটাল ডাটাবেজ থাকতে হবে । প্রত্যেকের ব্যাংকের একাউন্টে টাকা জমা দেওয়া হবে । এ সময় তাদের উদ্দেশ্যে হুশিয়ারি দিয়ে মেয়র বলেন, আমি জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ছাড়া কারো কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই। আমি এখানে দুর্নীতির দায় নিতে আসিনি। এজন্য আমার কোন ভয়ও নেই। সুতরাং কাউকেই ছাড় দেয়া হবেনা।
বিগত দিনের দূনীর্তির প্রসঙ্গে মেয়র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেক সময় বলা হয়ে থাকে পুকুর চুরি হয়েছে। কিন্তু আমি এখানে এসে দেখলাম আসলে সমুদ্র চুরির মতো ঘটনা ঘটেছে । ইতিপূর্বে যারা নেতৃত্বে ছিলেন তাদের সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জড়িত ছিলেন । যতক্ষণ না পর্যন্ত দূনীর্তির অমীমাংসিত সকল বিষয় সম্পর্কে আমি সন্তুষ্ট না হব ততক্ষণ পর্যন্ত আমি বাজেট ঘোষণা করতে পারছি না । পুরনো দূর্নীতির বাজেটকে আমি বৈধতা দিতে পারিনা। ইতিপূর্বে যে অডিট হয়েছিল সেখানে ২৬ টি বড় ধরনের অসঙ্গতি ধরা পড়েছে । এ সময় কর্মকর্তারা মেয়রকে জানান, ষ্টল বরাদ্দে ১৫ % ভ্যাট এবং ৫০ % আয়কর না নেয়ায় কর্পোরেশনের বিপুল রাজস্ব ক্ষতি করা হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের জনবলের অসঙ্গতির চিত্র তুলে ধরে মেয়র বলেন, বিধি বহির্ভূতভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে । আউটসোর্সিং এর জন্য আমার কাছে আড়াই কোটি টাকার চেক সই করার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। আমি তাদেরকে বলেছি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিটি কর্মচারী টাকা পাবে । যার টাকা তার ব্যাংকে জমা দেয়া হলে স্বচ্ছ হিসেব থাকবে।
নগর উন্নয়নের বিষয়ে মেয়র বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার প্রতি আস্থা রেখে তার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন । আমি এই প্রতিষ্ঠানকে আমার নিজের মনে করি । এখানে আমি জনগণের সেবা করতে এসেছি । এ সময় তিনি সিটি করপোরেশনের হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা কে উদ্দেশ্য করে বলেন আমি আপনাকে আগেও বলেছি, আপনি ঠিক থাকলে অনেক কিছুই ঠিক থাকবে। অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া আমি কোন আর্থিক বিষয় এ মুহূর্তে ছাড় করতে চাই না । তিন চার মাস পূর্বে যে সকল রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়েছে তা এখন ভেঙ্গে গিয়েছে । আমি কি সেই পুরনো অনিয়মকে বৈধতা দেয়ার জন্য আবার তার উপরে কাজ করব ? এজন্য আমি সকলকে বলেছি যারা আমাকে সড়ক নির্মাণ করার পর ৪ বছরের গ্যারান্টি দিতে পারবেন আমি তাদেরকে দিয়ে কাজ করাব । অন্যথায় সিটি কর্পোরেশন নিজ দায়িত্বে এ সকল কাজ করবে । এ সময় মেয়র দৃঢ় আশাবাদ ব্যাক্ত করে আরো বলেন, আমি যে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েছি তা অনেকেই চিন্তা করতে পারবেন না । আমি আমার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। বর্তমানে কীর্তনখোলা নদীর তীর আমি সম্প্রসারণ করে বাবুগঞ্জ পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার সম্প্রসারণ করতে চাই । এখানে একটি রিংরোডের মত স্থাপন করা হবে । এ প্রকল্পের সাথে আরও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বিদ্যমান থাকবে । কিন্তু এজন্য আমাদের সুদক্ষ কর্মকর্তা দরকার । আমি এখানে এসে দেখলাম যে পদের জন্য যে যোগ্য সেখানে সে পার্থী আছে কিনা ? আমার মনে হলো অনেক পদেই যোগ্য ব্যক্তি নেই । আপনারা ইতিমধ্যে দেখেছেন আমাদের নগরীতে বিদেশী রাষ্ট্রদূতগণ পরিদর্শন করে গেছেন । আমি নগর উন্নয়নের জন্য তাদের নিকট সহায়তা চেয়েছি। নগর উন্নয়নে কোন ধরনের জনদুর্ভোগ মেনে নেওয়া হবে না বলে তিনি সকলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন রাস্তা কেটে যদি কোন ড্রেজার পাইপ নেওয়া হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে । রাত ১১ টার পর নগরীতে ময়লার গাড়ী না চলানোর জন্য পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন তিনি। বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়াম, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লোট, সিসি ক্যামেরা, সেবক কলোনি সহ নির্মাণাধীন যে সকল প্রকল্প রয়েছে তা বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল এনে পর্যবেক্ষণ করানো হবে । এ সকল বিষয়েও অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বর্তমানে নগরীতে ২৬”শত ও জনবল রয়েছে । যাদের অনেকেই কোন কাজ করেন না । তাদেরকে কিভাবে বেতন দেব ? যারা কাজ করেন তাদেরকে বেতন দেওয়া যাচ্ছে না ,আর যারা কাজ করেন না তারা বেতন নেবেন এটা আমি হতে দেবো না ।
খুব দ্রুত ইমারত নির্মাণ বিধিমালা প্রনয়ন করা হবে । বর্তমানে নগরীতে একটি বিল্ডিং ইমারত নির্মাণ আইন অনুযায়ী করা হচ্ছে না। খুব শীঘ্রই সিটি কর্পোরেশনের নতুন অর্গানোগ্রাম প্রনয়ন করা হবে বলে ঘোষনা দেন মেয়র সেরনিয়াবাত সদিক আবদুল্লাহ। সিটি করপোরেশনের অনুমতি ছাড়া ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড প্রদর্শন না করার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া টাউন হল এবং বিবির পুকুর পাড়কে সবসময়ই ব্যানার ও বিলবোর্ড মুক্ত রাখার নির্দেশ দেন। এ সময় নগরবাসীর নিকট নগর উন্নয়নে সহায়তা চান তিনি ।
এর আগে সভার শুরুতে কোরআন তেলাওয়াাত ও গীতা পাঠ করা হয়। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর,জাতীয় ৪ নেতা ,শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাদসহ ১৫ই আগষ্ট নিহতদের স্মরনে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ নবনির্বাচিত মেয়রকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এরপর পর্যায়ক্রমে কাউন্সিলরগণকে এবং সিটি কর্পোরশন সদ্য যোগদানকারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল হাসান । পরে সভায় মুক্ত আলোচনায় অ অংশ নেন সিনিয়র সাংবাদিক ও আইনজীবী এডভোকেট নজনুল ইসলাম চুন্নু, দৈনিক আজকের পরিবর্তন পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক এবং দৈনিক কীর্তনখোলা পত্রিকার প্রকাশক কাজী মিরাজ মাহমুদ, সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ, এটিএন বাংলার স্টাফ রিপোর্টার হুমাযুন কবির, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস । এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল, সাবেক সাধারন সম্পাদক পুলক চ্যাটার্জি, সিটি কর্পোরেশন ৪০ জন কাউন্সিলর ,ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT