স্কুল ছাত্রী অথৈকে হত্যা করেছে বাবা স্কুল ছাত্রী অথৈকে হত্যা করেছে বাবা - ajkerparibartan.com
স্কুল ছাত্রী অথৈকে হত্যা করেছে বাবা

2:53 pm , November 7, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের সাপানিয়া গ্রামের আলোচিত শিশু সাবিহা ইসলাম অথৈ (১১) হত্যাকান্ডের ২৪ ঘন্টা না যেতেই রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। সেই সাথে ঘটনার মুল হোতা অথৈর বাবা বিসিসি’র পানি শাখার পাম্প অপারেটর কাজী গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। পাওনাদারদের ফাঁসিয়ে দেনার দায় থেকে মুক্তি পেতেই একমাত্র আদরের শিশু কন্যা অথৈকে নিজ হাতে শ্বাসরোধে হত্যা করে সে। গ্রেপ্তারের পরে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করে পুলিশকে এমনই কথাই জানিয়েছে পাষন্ড বাবা কাজী গোলাম মোস্তফা। তাছাড়া আদালতেও একই স্বীকারক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। গতকাল বুধবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আনিছুর রহমান ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন।
এর আগে আলোচিত হত্যাকান্ডের বিষয়টি নিয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত ব্রিফিংএ পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত আইজিপি) মোশারফ হোসেন বলেন, আলোচিত এই হত্যাকান্ডের ঘটনা পূর্নাঙ্গ ভাবে উদঘাটনে পুলিশ চেষ্টা করছে। আশা করা যাচ্ছে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তা উদঘাটন হবে। অবশ্য প্রাথমিক তদন্তে আমরা যতটুকু বুঝতে পারছি তাতে নিহত অথৈ’র বাবাই মুল অভিযুক্ত। সেই মেয়েকে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, অথৈ’র বাবা বিসিসি’র পাম্প অপারেটর কাজী গোলাম মোস্তফা ১০/১২ লাখ টাকার মত দেনা রয়েছেন। পাওনাদাররা তাকে টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। এতে সে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে। এজন্যই দেনা থেকে মুক্তি পেতে মেয়েকে হত্যা করে পাওনাদারদের ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেছিলো। এমনকি মঙ্গলবার সকালে অথৈকে সদর রোডে বিসিসি’র পাম্প হাউসের একটি কক্ষে এনে মেয়ের জামা গলায় পেচিয়ে শ্বাস রোধে হত্যা করে।
মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোশারফ হোসেন আরো বলেন, এই ঘটনায় আপাতত গোলাম মোস্তফাকেই গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। বাকি যাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিলো তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় শিশুর মা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তাছাড়া বিষয়টি পুর্ণাঙ্গ ভাবে তদন্ত করে বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান, উপ-পুলিশ কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান সহ বিএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার ওসি সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে কাউনিয়া থানার দায়িত্বশিল একটি সূত্র জানিয়েছেন, নিহত অথৈ’র বাবা কাজী গোলাম মোস্তফার এলোমেলো কথার কারনে প্রথম দিকেই তার প্রতি সন্দেহের সৃষ্টি হয়। যে কারনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। এর পর ধীরে ধীরে হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে। প্রথম দিকে গোলাম মোস্তফা পুরো বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও পরবর্তীতে সে হত্যার দায় স্বীকার করে নেয়।
কাজী গোলাম মোস্তফা জানিয়েছে, চরবাড়িয়ার সাপানিয়া এলাকার বাসিন্দা রানা শরীফ নামের ব্যক্তির কাছে ৭ লাখ টাকা মূল্যে কিছু পরিমান জমি বিক্রি করে। এজন্য তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা অগ্রিমও নেয় মোস্তফা। তাদের চুক্তি অনুযায়ী মঙ্গলবার তাকে দলীল দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তা তা দিতে না পারলেও অগ্রিম নেয়া এক লাখ টাকা খরচ করে ফেলে। দলীয় এবং টাকা না দিতে পারার চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়ে গোলাম মোস্তফা। এজন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়। সূত্রটি আরো জানায়, হাসপাতালে থাকাবস্থাতেই সাপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনিরুজ্জামান মোস্তাফার কাছে ফোন করে অথৈর ছবি পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলে। এর পরই দেনা পরিশোধ না করার জন্য বিকল্প চিন্তা মাথায় আসে মোস্তফা। সে নিজের মেয়েকে হত্যা করে পাওনাদার রানা শরীফকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করে। সেই অনুযায়ী সকালে মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাবার কথা বলে মোটর সাইকেলে ঘর থেকে বের হয়। তাকে স্কুলে না নিয়ে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল যোগে নগরীর সদর রোডের সাউথইষ্ট ব্যাংকের পাশে বিসিসি’র পানির পাম্প হাউসের পাশে থাকা রুমে নিয়ে যায়। সেখানেই নিজ হাতে আদরের একমাত্র কন্যা অথৈকে শ্বাস রোধে হত্যা করে পাষন্ড বাবা কাজী গোলাম মোস্তফা। শুধু তাই নয়, হত্যার পরে সিএনজি ভাড়া করে অথৈ’র লাশকে একটি বোরকা পড়িয়ে নিজ এলাকায় নিয়ে লেবু বাগানের মধ্যে ফেলে রেখে আসে। এমনকি সেই সিএনজি নিয়েই গোলাম মোস্তফা তার নিজ বাড়িতে যায়। যা স্থানীয় কয়েকজ ব্যক্তির চোখে পড়ে। পরে অবশ্য ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে মোস্তফা তার স্ত্রীকে ফোন করে মেয়েকে খোঁজার জন্য বলেছিলো বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে সাপানিয়া এলাকার ছাদওয়ালা বাড়ি সংলগ্ন লেবু বাগান থেকে সাপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সাবিহা আক্তার অথৈ’র লাশ উদ্ধার করে তার মা শিউলী আক্তার রুমা। পরে লাশ শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেলা সাড়ে ১১টায় জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মাহবুবুর রহমান তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বাড়ী থেকে কন্যাকে নিয়ে বের হয়ে যে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলে স্কুলে যাওয়ার কথা জানিয়েছে মোস্তফা, সেই মোটর সাইকেলের চালক মো. বাদল বিএসএল নিউজকে জানায়, কাগাশুরা বাজার থেকে মোস্তফা তাকে ভাড়া করে। পরে বাড়ীর সামনে এসে তাকে অপেক্ষা করতে বলে বাসায় যায় মোস্তফা। পৌনে ৯টার দিকে কন্যাকে নিয়ে বের হয়ে সদর রোড সাউথইষ্ট ব্যাংকের সামনে নামে। তাকে বিদায় দিয়ে কন্যাকে নিয়ে ব্যাংকের পাশের গলিতে চলে যায়।
মোস্তফাকে বহনকারী অপর মোটর সাইকেল চালক রাসেল জানায়, সকাল ১০ টা ২৭ মিনিটে তাকে (রাসেলকে) ফোন করে বাড়িতে ডেকে নেয় গোলাম মোস্তফা। রাসেল মোস্তফাকে বাড়ীর সামনে থেকে নিয়ে আবার সাউথইষ্ট ব্যাংকের সামনে নামিয়ে দেয়। কিছু সময় পর মোস্তফা ফিরে এসে পুনরায় তাকে নিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হয় বলে জানিয়েছে চালক রাসেল।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT