12:10 am , November 6, 2018

খান রুবেল ॥ দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশদ্বার গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া। এ দুটি উপজেলা নিয়েই শুরু জেলার সংসদীয় প্রথম আসন। অর্থাৎ বরিশাল-১। আসনটিতে মহাজোটের মনোনয়ন নিয়ে কাড়াকাড়ি নেই। তবে তার পুরো উল্টোটা চিত্র ২০ দলীয় জোটে। এই আসনে শুধুমাত্র বিএনপি থেকেই একাধিক নেতা দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ তালিকায় বেশ কয়েকজনের নামের সাথে যোগ হয়েছে আরো একজন প্রভাবশালী নেতার নাম। তিনি হলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও সংস্কার পন্থি নেতা এম জহির উদ্দিন স্বপন। আসনটির সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন পুনরায় মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে ধারনা অনেকের। আবার অনেকে বলছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানের কথা।
সূত্রমতে, গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার স্থানীয় বিএনপি তিন ধারায় বিভক্ত। দীর্ঘ বছর ধরেই দলের মধ্যে গ্রুপিং চলে আসছে। তবে তা প্রকটতা ফুটে ওঠে সংসদ নির্বাচন এলে। সেই সুযোগ নেয় আওয়ামী লীগ। আর তাই আসনটিতে বিএনপি বা অন্য যেকোন দলের থেকে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পরিসংখ্যানই বেশি। যে কারনে আসনটিতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ।
এদিকে বরাবরের মতই ত্রিধাবিভক্তি বিএনপিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রকাশ্য বিরোধ শুরু হয়েছে। সেই বিরোধের কারনেই এই আসনে বিএনপি’র একাধিক প্রার্থী মনোনয়নের জন্য লড়ছেন। তাদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সাবেক সাংসদ এম জহিরউদ্দিন স্বপন, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান, কার্যনির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য এ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান। সম্প্রতি সময়ের আলোচনায় ইঞ্জিনিয়ার সোবাহন এবং আকন কুদ্দুসের নাম উঠে আসে মনোনয়ন প্রশ্নে। কেননা বিগত আন্দোলন সংগ্রামে হামলা-মামলার পাল্লায় ভারি হচ্ছে আকন কুদ্দুসের নামটি। অন্য নেতারা থাকলেও তৃনমূলে দ্বন্দ্বের কারনে মনোনয়নের দিক থেকে পিছিয়ে যান তারা। তাছাড়া সম্প্রতি কেন্দ্রের আহ্বানে দলে ফিরে এসেছেন বিএনপি’র সংস্কার পন্থি নেতা এম জহির উদ্দিন স্বপন। যে কারনে পূর্বের সব আলোচনা পাল্টে গেছে। তাছাড়া নির্বাচনে গৌরনদী-আগৈলঝাড়া আসনে প্রার্থী করার বিষয়ে গ্রিন সিগনালও পেয়েছেন বলে দাবী করছেন স্বপন।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে আসনটিতে পিছিয়ে ছিলো বিএনপি। যার কারনে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের দুটি নির্বাচনে কাজী গোলাম মাহবুবের মতো হেভিওয়েট প্রার্থী করার পরেও শুধু নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে বিজয়ী হতে পারেনি দলটি। পরবর্তীতে ৯০ এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম রূপকার সাবেক ছাত্রনেতা জহির উদ্দিন স্বপন বিএনপিতে যোগদান করেন। তার পরেই স্থানীয় বিএনপি সাংগঠনিক কাঠামো যথেষ্ট শক্তিশালী ভিত্তি পায়। ২০০১ সালের নির্বাচনের বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জহির উদ্দিন স্বপনের কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। যে কারনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপি থেকে এম জহির উদ্দিন স্বপনকে প্রার্থী করার সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
দলীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, সাবেক চিফ হুইপ হাসনাত আবদুল্লাহ’র দুর্গে বিএনপির একমাত্র প্রার্থী স্বপন হানা দিয়েছিলেন। তার বিজয়ের নেপথ্যের দুটি কারন নিশ্চিত হয়। একটি স্বপনের অঞ্চলিকতা, অন্যটি বাম রাজনীতি। গৌরনদীর ৭টি ইউনিয়নের মধ্য ৫টিতেই রয়েছে তাঁর ভোট ব্যাংক। ফলে স্বপন বিএনপি প্রার্থী হলে উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ভোটারদের মধ্য দল-মত নির্বিশেষে অলিখিত ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই ঐক্যের ফলে ২০০১ সালে নির্বাচিত হন। তবে ১/১১-এর পর বিএনপি থেকে ছিটকে পড়ায় আসনটি ছাড়তে হয় বিএনপিকে।
এদিকে স্বপনের অনুপস্থিতির কারনে ১/১১ এর পর থেকেই বিএনপি ফের বিভক্তির রাজনীতি চলে আসছে। ২০০৯ সালের শেষের দিকে বিএনপির বিভক্তির সূচনা হয়েছিল। পরাজিত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহানকে আহ্বায়ক করে ৪৬ সদস্যবিশিষ্ট গৌরনদী উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে দলীয় বিভক্তির সুত্রপাত। নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছিল, আগৈলঝাড়ার বাশাইল গ্রামের বাসিন্দা সোবাহান ইঞ্জিনিয়ারের গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হওয়া নিয়ে। এমন প্রতিকূল পরিবেশে ছাত্রদলের গৌরনদী পৌর আহ্বায়ক কমিটি ও আগৈলঝাড়া উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিরোধ চুড়ান্ত পর্যায়ে রুপ নেয়। এতিন আহ্বায়ক কমিটিতে সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপনের কোনো সমর্থককে রাখা হয়নি। জেলা উত্তর বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম-আহ্বায়ক আকন কুদ্দুসুর রহমানের হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন সমর্থক স্থান পায়। এ অবস্থায় বঞ্চিতরা সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ৩ কমিটি প্রত্যাখ্যান এবং পাল্টা কমিটি গঠনের ঘোষনা দেন। গৌরনদী উপজেলা আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান ও পৌর আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পরবর্তিতে ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে বঞ্চিতরা আন্দোলনে নামে। প্রতিরোধ আন্দোলনের মধ্যেই আহ্বায়ক কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। পাশাপাশি আবদুস সোবাহান পৌর ও ইউনিয়ন আহবায়ক কমিটি গঠন করে। তবে নতুন সেই কমিটিতেও স্থান হয়নি স্বপন কিংবা কুদ্দুস অনুসারীদের। সেই থেকে শুরু হওয়া বিরোধ বিএনপিতে এখনো চলমান রয়েছে। তাই সুষ্ঠু ভোট হলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফলাফল কোন দিকে যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে স্থানীয় বিএনপির ত্রিধাবিভক্তি দূর না হলে সহায়ক হবে আওয়ামী লীগের। এমনটাই মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।