12:05 am , November 6, 2018

মর্তুজা জুয়েল ॥ এক সময়ের কুংফুু খেলাই আজকের আধুনিক মার্শাল আর্ট বা উশো। মার্শাল আর্ট কিংবা উশো গেমসে ইতিপূর্বে বরিশাল থেকে কোন নারী খেলোয়ার অংশ না নেয়নি। তবে বর্তমানে নারী শিক্ষার্থীদের এ ইভেন্টে অংশগ্রহন শুরু হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লাল সবুজ সোসাইটির উদ্যোগে নগরীর নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেয়া হচ্ছে মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষন। জেলা উশো এসোসিয়েশনের আওতায় চলছে নারীদের প্রশিক্ষন। সাম্প্রতি নগরীর ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার নারী শিক্ষার্থীকে মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষন দেয়া হলেও যারা বেশী আগ্রহী তাদের দুই মাস ব্যাপী প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। সরেজমিনে বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজ প্রাঙ্গনে গিয়ে দেখা যায় ৫০ জন নারী শিক্ষার্থীকে মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষনার্থীরা জানান, তারা শুধূ আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবেই নয়, শারীরিক ব্যায়াম ও বিনোদন হিসেবেও এ প্রশিক্ষন গ্রহন করছেন। প্রশিক্ষন মাঠে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অবিভাবকদেরও দেখা যায় সেখানে তাদের উৎসাহ প্রদানে। তারা জানান, মেয়েরা বাহিরে একা বের হলে আমরা অনিরাপদ বোধ করে। পাশাপাশি ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাকার ফলে তাদের মধ্যে হীনমন্যতা তৈরী হয়। একারনে আমরা নিজেরাই সন্তানদের এখানে নিয়ে আসছি। মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষনের দায়িত্বে থাকা লোকমান হাওলাদার জানান, বর্তমানে মার্শাল আর্ট, কারাতো ও উশো গেমসে নারীরা অংশগ্রহন করছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্লাক বেল্ট প্রতিযোগীতায়ও অংশ নিচ্ছে। কিন্তু নগরীর নারীরা এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। লাল সবুজ সোসাইটির তাহসিন উদ্দিন ও আরিয়ানা শর্মি জানান, মেয়েরা বাসার বাইরে বের হলে অনেক সময়েই তারা ইভটিজিং সহ বিভিন্ন নীপিড়নের শিকার হয়। অন্তত আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে তাদেরকে আমরা বিনামূল্যে স্কুলে স্কুলে গিয়ে এ প্রশিক্ষন প্রদান করছি। এখন অনেকেই আগ্রহী হয়ে নিয়মিত এ প্রশিক্ষন নিতে চাচ্ছে। প্রশিক্ষন মাঠে উপস্থিত থাকা ইউনিসেফের বরিশাল আঞ্চলিক প্রধান তৌফিক আহম্মেদ জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষন একটি অসাধারন উদ্যোগ। এর ফলে শুধুমাত্র আত্মরক্ষাই নয় আমাদের মেয়েরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। এদিকে মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষনের জন্য উপযোগী পাকা মাঠ না থাকায় খুবই ছোট পরিসরে তাদের অনুশীলন করতে হচ্ছে। এজন্য ক্রীড়া সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সহযোগীতা চেয়েছেন মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষনার্থীরা। বিকেএসপির বরিশাল শাখার উশো বিভাগের কোচ সৈয়দ হেদায়েতুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন সংকট থাকলেও মূলত মাঠ এবং মাঠের পরিবেশ অনূকুলে থাকলে এ সকল প্রশিক্ষন প্রদান ও গ্রহন করা সম্ভব। মার্শাল আর্ট, কারাতো, কিংবা উশো একই শ্রেনীর খেলা। এগুলো আমাদের দেশে নতুন হলেও এটি পৃথিবীতে ৫ হাজারের বছরের পুরানো একটি খেলা। কুম্ফুকে আধুনিক করে উশোতে রুপান্তরিত করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞানকে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । এ খেলার বিভিন্ন কলাকৌশলে পদার্থ বিজ্ঞান ও ঘূর্নন গতির বিভিন্ন সূত্র যোগ করায় শরীর চর্চায় এ খেলা অত্যন্ত নিরাপদ ও উপযোগী একটি বিষয় । নগরীর নারী শিক্ষার্থীরা এখন মার্শাল আর্ট ও উশো প্রশিক্ষনে অংশ নিচ্ছে এটা অনেক ইতিবাচক দিক। তারা প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের হয়ে অনেকেই প্রতিনিধিত্ব করতে চান। উশো এসোসিয়েশনের জেলার কোচ মো. পনির আলম শাহীন জানান, জেলায় বাইরের কোন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক না থাকা সত্বেও উশোর মূল দুইটি ইভেন্ট থাউলু ও ছান্দা তারা নিজেরাই আয়ত্ব করেছেন । গত বছর জেলায় উশো চালূ হওয়ার প্রথম বছরেই তারা সর্বশেষ অনুষ্ঠিত বিকেএসপি কাপ প্রতিযোগীতায় তৃতীয় স্থান ও তামা অর্জন করেন। এছারা সর্বশেষ ন্যশনাল গেমসেও তারা অংশ নিয়েছেন। সরঞ্জাম না থাকায় অনুশীলন করতে সমস্যা হচ্ছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব নুরুল আলম নুরু জানান , জেলা ক্রীড়া সংস্থা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। তাই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা সম্ভব না। আমরা সামনে তাদেরকে সহযোগীতা করার চেষ্টা করবো। উল্লেখ্য গত এক বছর ধরে বাংলাদেশ উশো এসোসিয়েশনের বরিশাল জেলা শাখা চালু হওয়ার প্রথম বছরেই নিয়মিত প্রশিক্ষনার্থী রয়েছে অর্ধশত। এছাড়াও অনিয়মিত প্রশিক্ষনার্থী আছে আরো শতাধিক। বর্তমানে জেলায় সবচেয়ে বেশী সংখ্যক নারী খেলোয়ারের অংশগ্রহন এখন উশো খেলায়। উশোর পাশাপাশি আচ্যারী(তীরন্দাজ) ও বক্সিং খেলায়ও দেখা মিলছে নারীদের ।