নির্ধারিত সময়ে নির্মান সম্পন্ন হচ্ছে না জুডিসিয়াল ভবন নির্ধারিত সময়ে নির্মান সম্পন্ন হচ্ছে না জুডিসিয়াল ভবন - ajkerparibartan.com
নির্ধারিত সময়ে নির্মান সম্পন্ন হচ্ছে না জুডিসিয়াল ভবন

10:23 am , November 4, 2018

ওয়াহিদ রাসেল ॥ নির্দিষ্ট সময় পার হলেও আদালত পাড়ায় নির্মিতব্য বিচারবিভাগীয় (জুডিসিয়াল ভবন) আদালতের বহুতল ভবনের নির্মান কাজ এখন চলছে। সময় বাড়ানোর অনুমতি না নিয়ে বর্ধিত সময়ে চলছে জুডিসিয়াল আদালত ভবনের নির্মান কাজ। ভবনটি নির্মানে ৩০ মাসের সময় নির্ধারন করা ছিল। কিন্তু এখন প্রায় ৩৬ মাস পার হয়েছে। ভবনের সম্পূর্ন কাজ সম্পন্ন করতে আরো ৬ মাসের অধিক সময়  প্রয়োজন হবে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে। তবে এই অতিরিক্ত সময়ের জন্য মন্ত্রনালয় থেকে অনুমতি না নিয়েই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পলি ইঞ্জিনিয়ারিং (কেএসডিএলজিডি) তাদের কাজ পরিচালনা করছে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়ায় তারা জানায় অনুমতির জন্য কগজপত্র তৈরী করা হচ্ছে। তবে এখনো জমা দেয়া হয়নি।

এদিকে কাজ শুরুর প্রায় তিন বছর পার হয়ে গেলেও এখনো চলছে নির্মানাধীন ভবনের আনুষাঙ্গিক কাজ। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ভবনটি জজশীপে হস্তান্তর করার থাকলেও কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সেই সময় বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। তবে এখনও প্রায় ৩০ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে বলে আদালত সুত্র জানায়। এর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো, পাওয়ার সাব স্টেশনের কাজ, ভবনটির ইলেকট্রনিক্স ফিটিং, সেনেটারি ফিটিংস, টাইলস স্থাপন, আদালতের এজলাস কক্ষ ফিটিংস, লিগ্যাল এইড ও মালখানার কাজও অসম্পূর্ন রয়েছে।

সুত্র আরো জানায়, ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি শুরু হয় ১০ তলা বিশিষ্ট জুডিসিয়াল ভবন নির্মান কাজ। ওই দিনে আইনমন্ত্রী মো. আনিসুল হক আনুষ্ঠানিকভাবে ভবন নির্মান কাজের উদ্বোধন করেন। এর আগে ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মান কাজের অনুমোদন দেয়া হয়। ৩৫ কোটি ৮৫ লাখ ২৬ হাজার ২১৭ টাকার প্রজেক্টে ব্যয় নির্ধারন করা হয়। পরে ৩১ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ৪৭৫ টাকায় কাজটি অনুমোদন দেয়া হয়। ওই অনুমোদনে ৩০ মাসের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়। সেই অনুযায়ি ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি কাজ শুরু করার পরেও এখনও শেষ করা সম্ভব হয়নি ভবন নির্মান। চলতি বছরের শুরুর দিকে ভবন নির্মানের বিষয়ে বরিশাল গনপুর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলি রিপন কুমার রায় জানান ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ভবনটি জজশীপকে হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু বছরের শেষে এসে কাজ শেষ না হওয়ায় সেই সময় বাড়িয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সম্ভাব্য দিনক্ষন দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে ভবনটির নির্মান কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন হলে বিচারকদেরসহ আদালত সংশ্লিষ্ট সকলের ভোগান্তির সমাধান হতো। ভবনের অভাবে একটি কক্ষের মধ্যেই জুডিসিয়াল কয়েকটি আদালতের কাজ একসাথে সম্পন্ন করতে হচ্ছে। যার ফলে বিচারকগন সহ বিচারপ্রার্থী ও বিচারসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রয়েছে বিপাকে।

এছাড়াও ভবনটি নির্মান সম্পন্ন হলে চীফ জুডিসিয়াল আদালতের ১১ টি এজলাস এই ভবনে আনা হবে। একই সাথে অন্য আদালতের আরো দুইটি এজলাসসহ লিগ্যাল এইড, মালখানা ছাড়াও পার্কিং ব্যবস্থা করা হবে। ভবনের অভাবে যে সব এজলাস এখন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে রয়েছে তা সব এদিকে নিয়ে আসা হবে। আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা জজশীপ চত্বরের মধ্যে থেকেই সব কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। বিচারকাজের জন্য তাদের ছোটাছুটির কষ্টও লাঘব হবে।

ভবন নির্মানের বিষয়ে বরিশাল গনপুর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলি রিপন কুমার রায় জানান, নির্মিত  ১০ তলা বিশিষ্ট এই ভবনের প্রথম দুটি ফ্লোরের আয়তন ১৩ হাজার ৯১২ ও পরের ৮টি ফ্লোর ১২ হাজার ১৫৩ স্কয়ার ফিট করা হয়েছে। ভবনে বিচারক ও বিচারপ্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। ১০ তলা এ ভবনে ১৩ টি এজলাস থাকবে। এর পাশাপাশি বিচারকদের খাস কামরা, শিক্ষানবীস বিচারকদের জন্য আলাদা কক্ষ, কনফারেন্স কক্ষ, নামাজের কক্ষ, গাড়ি পাকিং এর ব্যবস্থা। এছাড়াও বিচারপ্রার্থীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুরীকরনে প্রতিটি ফ্লোরে রাখা হয়েছে ৫টি টয়লেট, এজলাসের থেকে একটু দুরে রাখা হয়েছে বিচারপ্রার্থীদের জন্য বসার জায়গা। আরো রয়েছে বিচারপ্রার্থীদের সাথে আসা ছোট শিশুদের খাওয়ানোর ও রাখার জন্যও সুব্যবস্থা। একই সাথে এই ভবনের ওঠা নামার জন্য দেয়া হয়েছে তিনটি লিফট ও চারটি সিড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনটি লিফটের মধ্যে একটি বিচারকদের জন্য ও অপর দুইটি আদালতের অন্যান্য কর্মচারি ও বিচারপ্রার্থীদের জন্য থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ভবনটির নির্মানকাজ দেরীতে সম্পন্ন করার বিষয়ে রিপন কুমার রায় জানান, বড় ভবন নির্মান করার সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বিশেষ করে কাঠ ও পরিবহন সমস্যার কারনেও কাজ দেরীতে সম্পন্ন হচ্ছে। তবে ভবনের ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন শুধু ইলেকট্রিক্যাল সাব-স্টেশনের কাজ, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স ফিটিং সহ ফিনিসিং কাজ বাকি রয়েছে। জুন মাসের আগেই ভবনটি জজশীপে হস্তান্তর করা যাবে বলে তিনি আশা করেন।

আরো জানান, সাব-স্টেশন ও আদালতের আসবাবপত্রের জন্য আলাদা দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এবং তা সম্পন্ন হয়েছে। অতি শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে। তিনি ব্যয়ের বিষয়ে জানান, প্রাক্কালন ব্যয় যা নির্ধারন করা হয়েছিলো তাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে তিনি আশা করেন।

 

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT