3:20 pm , October 30, 2018
মর্তুজা জুয়েল ॥ বরিশাল বিভাগের বৃহৎ ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে এ অঞ্চলের জীবনযাত্রা। চলমান এ প্রকল্পগুলোর কয়েকটির নির্মান কাজ প্রায় শেষের দিকে। সকল প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ৯৩৭ একর ভূমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। আরো কয়েকটি প্রকল্পের জন্য ভুমি অধিগ্রহন প্রক্রিয়া শেষের দিকে।
প্রকল্পগুলো হচ্ছে সেনানিবাস স্থাপন, অর্থনৈতিক অঞ্চল, পায়রা সমুদ্র বন্দর, আইসিটি পার্ক (হাইটেক পার্ক), কোষ্টগার্ডের রিজিওনাল সদর দপ্তর, বিটিভির পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচার কেন্দ্র স্থাপন, বরিশাল বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সদর দপ্তর স্থাপন, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ট্রাক টার্মিনাল, বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার ।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহন শাখা সূত্রে জানা গেছে, মানব কল্যান ও জনমুখী ভুমি সেবা জনগনের দোরগোড়ায় পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এ প্রকল্প গুলোর জন্য ভূমি অধিগ্রহনের কাজ শুরু হয়। এ জন্য ৯৩৭ একর জমি অধিগ্রহন সম্পন্ন হয়েছে। সামরিক ভূ-সম্পত্তি প্রশাসনের উদ্যোগে ও বরিশালে সেনানিবাস স্থাপনের লক্ষে বরিশাল-পটুয়াখালী জেলার মধ্যবর্তি পায়রা নদীর তীরে (লেবুখালী ফেরিঘাট সংলগ্ন) ৫৭৮ দশমিক ১১৫ একর ভুমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সেনানিবাসের কার্যক্রম চালু হয়েছে। পুর্নাঙ্গ সেনানিবাসের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগৈলঝাড়ায় স্থাপন করা হচ্ছে অর্থনেতিক অঞ্চল। ইতোমধ্যে সেখানে ৩০০ একর জমি অধিগ্রহন সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সম্প্রতি প্রকল্পের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেছেন। খুব শীঘ্রই প্রল্পের কাজ শুরু করা হবে। পদ্ম সেতুকে কেন্দ্র করে আগৈলঝাড়ায় অর্থনেতিক জোন অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এখানে চাহিদা অনুযায়ী বৃহৎ শিল্প গড়ে তোলা হবে। এর ফলে বরিশালের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। উৎপাদিত পন্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানীর পরিকল্পনাও রয়েছে।
কীর্তনখোলা নদীর পাড় সংলগ্ন বরিশাল পটুয়াখালী সড়কের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর উত্তর পাশে স্থাপণ করা হবে বরিশাল কোষ্টগার্ডে রিজিওনাল সদর দপ্তর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সেখানকার ২০ একর ভুমি অধিগ্রহন করেছে। নদীর অপর প্রান্তে বিটিভির পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচার কেন্দ্র স্থাপনের জন্য অধিগ্রহন করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬৪ একর ভুমি। টিভি কেন্দ্রটি নগরীর ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন র্কীতনখোলার পাড়ে স্থাপিত হবে। এ টিভি কেন্দ্রটি বরিশালে স্থাপিত হলে এ অঞ্চলের মানুষের শিল্প-সাহিত্যে আরো বিপ্লব ঘটাতে পারবে। এমনকি অনুষ্ঠান করতে আর রাজধানী মুখি হতে হবে না তাদের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার স্থাপন করা হবে কীর্তনখোলা নদীর তীরে বরিশাল সদর উপজেলার চরআইচা এলাকায়। ওই এলাকার ১০ একর জমি অধিগহন করা হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প কর্পোরেশন। নগরীর নবগ্রাম রোডে বরিশাল বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সদর দপ্তর স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে এ প্রকল্পের জন্য ৩ একর জমি অধিগ্রহন প্রস্তাব দাখিল করলে প্রক্রিয়াটি তদন্তাধীন রয়েছে বলে ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
নগরীর কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের অদূরে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি থেকে ৫ একর জমি নির্ধারন করা হয়েছে বরিশাল চন্দ্রদীপ ক্লাউড চর আইসিটি পার্ক স্থাপনের জন্য। এজন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রাণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের টিম একাধিকবার পরিদর্শন করেছে এলাকাটি। খুব শিঘ্রই দরপত্র আহবান করা হবে বলে জানাগেছে। আইসিটি পার্কে গড়ে উঠলে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পাশাপাশি বিদেশী আইটি কোম্পানীর বিনেয়োগ ও কার্যক্রম আরম্ভ হওয়ার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র তৈরী হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ২৩ হাজার বেকার যুবক-যুবতী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। আইসিটি পার্কে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, কম্পিউটার সফ্টওয়্যার, কমিউনিকেশন হার্ডওয়্যার, কমিউনিকেশন সফ্টওয়্যার, আইটি ভিত্তিক সেবা, ডিজাইন এন্ড কনসালটেন্সি, বায়োইনফরমেটিকসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।
বিভাগ প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ২৫ বছর পর সাম্প্রতি ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে নগরীর কাশিপুর এলাকায় শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ট্রাক টার্মিনাল স্থাপন করার জন্য ৭ দশমিক ৭৯ একর ভুমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। যা কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে অবস্থিত। এ প্রকল্পটির নির্মান কাজ প্রায় শেষের দিকে। ট্রার্মিনালটি স্থাপনের ফলে নগরীর বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি রাখা ট্রাক থেকে মুক্তি পাবে বরিশালবাসী। অনেকাংশেই দুর হবে যানজট।
এদিকে শিল্প বিপ্লব ঘটাতে বরিশালে স্থাপিত হচ্ছে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)। এ প্রকল্পটিও ঢাকা বরিশাল মহাসড়কের সমবায় ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গড়ে উঠবে। ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রনালয়ের এ প্রকল্পের জন্য ৩ একর ভুমি অধিগ্রহনের কাজ করা হচ্ছে। দেশের তৃতীয় গভীর পায়রা সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
এদিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর প্রানের দাবি পদ্মা সেতুর কাজ । পদ্মা সেতুর মাধ্যম এসকল সুযোগ সুবিধা বরিশালে উচ্চমাত্রায় অর্থনৈতিক গতি সঞ্চার হবে বলে জানিয়েছেন বরিশালের বিদায়ী জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান। বর্তমানে বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন অথরিটির পরিচালক পদে দায়িত্বপালনকারী এই কর্মকর্তা আরো বলেন, প্রকল্পগুলো স্থাপনের ফলে বরিশালে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সময়ের ব্যাপর। এখানে সৃষ্টি হবে বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের। বর্তমানে জেলার বাসিন্দারা অন্য জেলায় কর্মসংস্থানের জন্য গেলেও এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে অন্যান্য জেলা থেকে এখানে মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য আসবে।