3:19 pm , October 30, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আদর যতেœ সন্তুষ্ট হয়ে বরিশাল নগরীর সিটি কলেজ ক্যাম্পাস গলি থেকে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে সদ্য সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপনের জিম্মায় দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার শিশুটির উপস্থিতিতে শুনানী শেষে শিশু আদালতের বিচারক মো. মিজানুর রহমান এ আদেশ দেন। একই আদেশে বিচারক উপস্থিত আইনজীবী ও বাচ্চা নিতে আগ্রহী ৭ আবেদনকারীকে অবহিত করেন ব্যক্তিগতভাবে তিনি (বিচারক) খোঁজ রেখেছেন বাচ্চাটির। তাদের লালন-পালনে সন্তুষ্ট হয়ে এ আদেশ দেয়া হলো। আর আবেদনকারীদের ওই দিন আবেদন করার নির্দেশ দেন। আদালত সূত্র থেকে জানা গেছে, কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটির খবর পেয়ে নগরীর নিউ সার্কুলার রোডের বাসিন্দা নিঃসন্তান আয়শা সিদ্দিকা শিশু আদালতের বিচারকের নিকট শিশুটিকে লালন-পালনের আবেদন করেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৪ অক্টোবর শুনানী শেষে শিশুটির লিগ্যাল অভিভাবক না পাওয়া পর্যন্ত বর্তমানে যাদের নিকট রয়েছে তাদের কাছে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। একই আদেশে গতকাল শিশুটির উপস্থিতিতে শুনানীর দিন ধার্য্য করা হয়। নির্ধারিত দিনে শিশুটির দায়িত্ব নেয়া রুপন শিশুটিকে নিয়ে আদালতে হাজির হন। এ সময় শিশুটিকে কিভাবে লালন-পালন করছেন তা দেখানোর জন্য শিশুর ব্যবহৃত জামাকাপড় থেকে শুরু করে খাবার এবং শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদ্বারা তিনবার চেকআপ করানোর ব্যবস্থাপত্র উপস্থাপন করা হয়। ওই ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধও আদালতের বিচারককে দেখানো হয়। এ সময় শিশুটিকে লালন-পালনের জন্য নিতে আগ্রহী বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলের এক চিকিৎসক, ঝিনাইদাহ’র ডাচ বাংলা ব্যাংকের ম্যানেজার এবং ব্যবসায়ীসহ ৭ জন আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদনকারী হাজির হন। ডাচ বাংলা ব্যাংকের ম্যানেজার ৫ লাখ টাকার বন্ড নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। নিঃসন্তান এ দম্পত্তি যে কোন মূল্যে শিশুটিকে নিতে চায়। কিন্তু তাদের আবেদন গ্রহণ করেননি বিচারক। শুনানী শেষে বিচারক জানান, বরিশালের গৈলা বেবীহোমের চেয়ে রুপনের নিকট শিশুটি খুব যতেœ রয়েছে। তাছাড়া রুপনের সন্তান থাকায় তিনি আবেদন করেননি। শিশুটি রুপনের কাছে আদর যতেœ লালিত-পালিত হওয়ায় আদালত সন্তুষ্ট হয়ে ১ জানুয়ারী পর্যন্ত তার জিম্মায় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর যারা শিশুটিকে লালন-পালন করতে আগ্রহী আবেদনকারীদের ওই দিন (১ জানুয়ারী) আবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। আবেদনকারীদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য করা হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে শিশুটিকে কোথায় দেয়া যায়। তবে কোন বেবীহোম ছাড়া কোন ব্যক্তিকে দেয়া হলে সে ক্ষেত্রে শিশুটির উজ্জল ভবিষ্যতের জন্য ১০ লাখ টাকার বন্ড দিয়ে নিতে হবে। ওই সময় সেখানে উপস্থিত আবেদনকারীদের মধ্যে একজন কোটি টাকা বন্ড দিয়ে হলেও শিশুটি নিতে রাজী। গত ১০ অক্টোবর রাতে বরিশাল নগরীর সিটি কলেজ এলাকার নবাব কোয়াটারের নাছির উদ্দিনের বাসার গৃহপরিচারিকা মিনারা বেগম বাসার ময়লা ডাস্টবিনে ফিলতে যান। ডাস্টবিনের যাওযার পূর্ব মুহূর্তে ৩টি কুকুর ডেকে যাচ্ছিল। বুয়ার সন্দেহ হলে তিনি সিটি কলেজের গেট পেরিয়ে ভিতরে দেখতে পান তোয়ালে পেচানো ফুটফুটে একটি শিশু কান্না করছে। শিশুটিকে কোলে তুলে মালিকের স্ত্রীর কাছে নিয়ে যান বুয়া। নাছির উদ্দিনের স্ত্রী তার নাত জামাই বিদায়ী মেয়র কামালের ছেলে রুপনকে অবহিত করেন। রুপন কোতোয়ালী মডেল থানাকে অবহিত করলে পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। একই সাথে সাধারণ ডায়েরী করে লিগ্যাল অভিভাবক অথবা আদালতের নির্দেশ না আসা পর্যন্ত রুপনের জিম্মায় দেয়। ওই সময় থেকে শিশুটি রুপনের শ্বশুড়বাড়ি নগরীর বাজার রোডের ব্যবসায়ী প্রয়াত মিরাজ আহমদের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা লালন-পালন করছেন। শিশুটির নাম রাখা হয়েছে আয়েশা।