3:23 pm , October 27, 2018

এনইউ সোহাগ, কলাপাড়া ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকী পালন এবং ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করা হবে। তাই ২০২০-২০২১ সালকে আমরা মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষনা দিয়েছি।’ এই মুজিব বর্ষের মধ্যেই বাংলাদেশ হবে ক্ষুদা ও দারিদ্র মুক্ত দেশ। বাংলাদেশের কোন মানুষের কোন কষ্ট থাকবে না। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে এদেশের সন্তানরা। গতকাল শনিবার দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক ও গৃহহারা পরিবারের মাঝে ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ আবাসন পল্লীর ১৩০টি পরিবারে মাঝে ঘরের চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ ঘোষনা দেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরো বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরে দেশ পুনর্গঠন করেছিলেন। তিনি তৃণমূল জনপদ উন্নত করার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে আমার বাবা, মা, ভাইসহ পরিবারের সকল সদস্যদের হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর সে পরিকল্পনা এবং আশা আকাঙ্খাকে হত্যা করা হয়। আমি অনেক বাধা বিপত্তির মাঝে দেশে ফিরে এসে ১৯৮৬ সালে উপকূলীয় সকল এলাকা ঘুরেছি। পদ্মার এপারের উপকূলীয় এই দক্ষিণাঞ্চল সবচেয়ে অবহেলিত ছিলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণাঞ্চল ছিলো সব সময়ই অবহেলিত। কিন্তু ৯৬’ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ শুরু করি। এরপর টান দুই বার প্রায় ১০ বছর ক্ষমতায় থেকে এ অঞ্চলের ভাগ্য উন্নয়নের কাজ করি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। কলাপাড়ায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান হচ্ছে আরো একটি হবে। পদ্মার এ পারে দক্ষিণাঞ্চলে একটি পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানসহ ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মান করার পরিকল্পনা আছে। এই অঞ্চলে শিল্প কলকারখানা স্থাপন হবে; উন্নত হবে এখানকার মানুষের জীবন যাত্রার মান। সৃস্টি হবে নতুন নতুন কর্মস্থল। এই ‘স্বপ্নের ঠিকানা’তে একটি মাল্টিপারপাস সাইক্লোন শেল্টার নির্মানের নির্দেশ দিচ্ছি। একই সঙ্গে পায়রা সমুদ্র বন্দরের অধিগ্রহনকৃত আবাসন এলাকায়ও একই ধরনের সাইক্লোন শেল্টার নির্মান করা হবে। কারণ প্রকৃতির খেলা বোঝা ভাড়। যে কোন সময় ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস হতে পরে এই এলাকায়। যাতে প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে এখানকার মানুষ রক্ষা পায়।
সুধি সমাবেশে প্রধান মন্ত্রী আরো বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট স্থাপন করা হয়েছে। এখন থেকে দেশের মানুষ ঘূর্ণিঝড়, শিক্ষা-গবেষনাসহ বিভিন্ন খুব সহজে ডিজিটাল পদ্ধতিকে দ্রত তথ্য পেতে পারবে। বাংলাদেশের ডিজিটাল করন করা হয়েছে। কলাপাড়ায় পায়রা সমুদ্র বন্দর এক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের জন্য জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। জমির মালিকদের জমির তিন গুন দাম দেওয়া হচ্ছে। কলাপাড়ায় একটি পুর্নাঙ্গ নৌঘাটি হচ্ছে, সেনা ঘাটি হচ্ছে, বিমান বাহিনীর ঘাটি হতে যাচ্ছে। এখানকার নদী খনন করা হবে। পায়রা সমুদ্রবন্দরকে গভীর সমুদ্র বন্দরে উন্নিত করা হবে। আমরা জাতির পিতার সোনা বাংলা গড়ে তুলবো।
২৮ মিনিটের বক্তব্য শেষে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় পটুয়াখালী বিভিন্ন উপজেলার ১৬ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন এবং পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পটুয়াখালী-৪ আসনের (কলাপাড়া) এমপি এবং সাবে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব মাহাবুবুর রহমান তালুকদার। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সড়ক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এমপি, কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিল্প মন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ, বাংলাদেশ এলজিইডি এর স্থায়ি কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নাসরুল আনোয়ার খান এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা ড. তাওহিদ এলাহী চৌধুরী প্রমূখ। এছাড়াও বিন্নি মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা, জন প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া মৌজার ১০০২ একর জমি অধিগ্রহন করা হয় ‘পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র’ নির্মানে জন্য। এতে সেখানকার কৃষক, জেলে এবং দরিদ্র পরিবাররা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোকে পুনর্বাসনের জন্য ১৬ একর জমিতে ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দাগ্রামে ক্ষতিগ্রস্থ ১৩০টি পরিবারের জন্য আধুনিক সুবিধা সংবলিত ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ নামে একটি আবাসন পল্লী নির্মান করা হয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ এবং উন্নত সকল ধরনের সুবিধা ও স্বার্থ সংশ্লিস্টগত ভাবে পল্লীটি নির্মান করা হয়েছে। এ পল্লীটি নির্মাণ করেন নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। একই ভাবে ‘পায়রা সমুদ্র বন্দর’ নির্মানের জন্য লালুয়া, চান্দুপাড়া (উত্তর), চান্দুপাড়া (দক্ষিণ), লেমুপাড়া, ধুলাসার ও লোন্দা মৌজায় ভূমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। এরফলে ক্ষতিগ্রস্থ ওই সকল পরিবারের জন্য ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ এর মতো আরো ছয়টি পুনর্বাসন প্রকল্পের নির্মান করা হবে বলে জেলা প্রশাসনসুত্রে জানা গেছে। কলাপাড়ার সুধী সমাবেশ শেষে প্রধান মন্ত্রী বিশেষ হেলিকপ্টার যোগে আকাশ পথে পার্শ্ববর্তী তালতলী উপজেলায় আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষনের উদ্দেশ্যে কলাপাড়া ত্যাগ করেন।