5:46 pm , October 10, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার রায়কে সরকারের প্রতিহিংসার রায় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ। রায় ঘোষনার পর পরই গতকাল বুধবার কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগর বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ তাদের প্রতিক্রিয়ায় এই অভিযোগ করেছেন। এর আগে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি লুৎফর রহমান বাবর সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে দেয়া রায় প্রত্যখ্যান করে নগরীতে ঝটিকা মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
এর আগে গ্রেনেড হামলার রায়কে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই সদর রোডে বিএনপি’র দলীয় কার্যালয় ঘিরে রাখে পুলিশ। পাশাপাশি রায়কে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানের কারনে বিপুল সংখক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয় টাউন হল সহ সদর রোড এলাকায়। তার মধ্যেই পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কিছু সংখ্যক নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেন বিএনপি’র বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ এ্যাড. বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিন। এসময় তার সাথে ছিলেন মহানগর মহিলা দলের সভানেত্রী শামীমা আকবর, জেলা বিএনপি’র দপ্তর সম্পাদক মন্টু খান, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সদস্য মুশফিক হাসান মাসুম, মো. মহসিনুল সহ ৭/৮ জন নেতা-কর্মী। রায় ঘোষনার পর পরই বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিন এর নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। রায় প্রত্যাখ্যানের শ্লোগান নিয়ে বের করা মিছিল পুলিশ বেরিকেটে আটকে পড়ে। কিন্তু পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করেই ৭/৮ জন নেতা-কর্মী নিয়েই সদর রোডে প্রতিবাদ মিছিল করেন শিরিন। তবে সদর রোডে আগরপুর রোডের সম্মুখে পৌছতেই কোতয়ালী মডেল থানার ওসি’র নেতৃত্বাধিন টিম তাদের বাঁধা দেয়। এমনকি বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিন ও অপর এক নারী নেতৃত্বে জোর করে রিক্সায় তুলে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ।
এদিকে গ্রেনেড হামলার রায় প্রত্যাখ্যান করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ। তারা এই রায় বাতিলের দাবী জানিয়েছেন। রায়ের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরওয়ার বলেন, একতরফা ভাবে এই রায় দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা রাজনৈতিকভাবে গ্রহন যোগ্য নয়। ঘটনাটি ভালো ভাবে খতিয়ে দেখা উচিত ছিলো। এর আগেও এ ধরনের ঘটনা রয়েছে। এর মধ্যে নারায়নগঞ্জের সাতখুন, রমনা বটমূলে হামলা উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এতো কিছু দেখার পরেও তারা তারেক রহমানের নাম প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, কোন সাক্ষিরা যেখানে তারেক রহমানের নাম বলেনি, তারপরও তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে। এরপরও বর্তমান সরকারদলীয় লোকজন তার ফাঁসির দাবী জানাচ্ছে। তারেক রহমানকে জড়িয়ে তারা যে ধরনের কথা বলছে এতে বিস্ময় প্রকাশ করে মজিবর রহমান সরোয়ার আরো বলেন, এটা একটি রাজনৈতিক দলকে ধংস করার প্রচেষ্টা। গনতন্ত্রের সমঝোতা না থাকার কারনে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাই আতঙ্কিত এই বাংলাদেশের ভবিষ্যত অন্ধকার রাজনীতি নিয়েও ভাবছেন বলে জানান সরওয়ার।
এদিকে বিএনপি’র বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিন বলেন, ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আসামী করা হয়েছে। কিন্তু ওই মামলায় চার্জশীটে তার কোন নাম ছিলো না। আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে মামলায় অন্তভূক্ত করেছে। আজ যে রায় প্রদান করা হয়েছে তা সরকারের প্রতিহিংসার রায়। রায়ে সরকারের হস্তক্ষেপ রয়েছে দাবী করে তিনি বলেন, বিচার বিভাগে সরকারের হস্তক্ষেপ করছে। যার প্রমান মিলেছে বেশ কয়েকদিন আগেই। প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে দিয়ে তারা প্রমান করেছে দেশে সুষ্ঠু বিচার বলতে কোন কথা নেই। বিএনপির আগামী দিনের ভবিষ্যত তারেক রহমান। তাকে মিথ্যে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসিয়ে বিএনপিকে নির্মূল করতে চাইছে। কিন্তু এ রায় বিএনপিসহ জাতি কখনো মেনে নেবে না।
বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ্ব এবায়েদুল হক চাঁন বলেন, এ রায় সরকারের প্রতিহিংসার রায়। এই রায় আওয়ামী লীগ সরকারের রায়। তারা বিএনপিকে ধ্বংস করতে প্রথমে দেশনেত্রীকে একটি মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে। তেমনি করে বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজা দেয়া হয়েছে। তাই আমরা এই রায় প্রত্যাক্ষ্যান করছি। সেই সাথে অবিলম্বে রায় বাতিলের দাবী জানিয়ে এই নেতা বলেন, এই রায় অবৈধ সরকারের রায়। এই রায় সরকারের মনগড়া রায়। তাই এই রায় জনগন কখনই মেনে নিবে না। এমনকি কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী রায়ের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ারীও দিয়েছেন জেলা বিএনপি’র ওই নেতা।
এদিকে বিএনপি’র মহানগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া বলেন, গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তাই আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি তারেক রহমানের নাম মামলায় অন্তভূক্ত করেছে। বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশবাসির কাছে হেয় করতে সরকার মিথ্যা মামলায় সাজানো রায় দিয়েছে।
বরিশাল উত্তর জেলা শাখা বিএনপির সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বলেন, এ রায় আওয়ামীলীগই লিখে দিয়েছে। যা শুধু বিচারক পরে শুনিয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা আওয়ামীলীগই ঘটিয়েছে। নিজেদেরকে আলোচনায় আনতে তারা এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছে। তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুর রহমান বাবর এ ঘটনার সাথে জড়িত ছিলো না। রাজনৈতিকভাবে তাদের এ মামলায় অন্তভুক্ত করেছে আওয়ামী লীগ। এই রায়ের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন কর্মসূচি গড়ে তোলার হুমকিও দেন তিনি।
অপরদিকে রায় ঘোষনার পর পরই নগরীতে ঝকিকা মিছিল বের করে যুব ও ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা। এর মধ্যে মহানগর ছাত্রদল মিছিল করতে সক্ষম হলেও বাঁধার মুখে পড়ে মহানগর যুবদল। লঞ্চঘাট এলাকায় পুলিশ তাদের বাঁধা এবং যুবদল মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ তিনজনকে আটক করে। অপরদিকে একই এলাকায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আফরোজা খানম নাসরিনের নেতৃত্বে একটি ঝটিকা মিছিল বের হয়। মিছিলে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে মিছিলটি পুলিশের ভয়ে সংক্ষিপ্তভাবে শেষ করে।