5:47 pm , October 6, 2018

রুবেল খান ॥ দক্ষিণাঞ্চলে মাদক চোরাচালানের অন্যতম রুট এখন বঙ্গোপসাগর। ওই রুটে কক্সবাজার সহ সিমান্তবর্তী এলাকা থেকে মাদকের বড় বড় চালান পৌছে যাচ্ছে পর্যটন নগরী কুয়াকাটায়। যা পরবর্তীতে সড়ক পথে চালান হচ্ছে রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। আর এই চোরকারবারির সাথে শুধুমাত্র দেশের নাগরিকরাই নয়, বরং জড়িত রয়েছে রোহিঙ্গারাও। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করেছে র্যাপিট এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)-৮ এর গোয়েন্দারা।
শুধু চোরাচালানের নতুন রুট উদঘাটনই নয়, বরং সফল অভিযানও চালিয়েছে তারা। ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬ পিস পিস ইয়াবা এবং আগ্নেয়াস্ত্র সহ ২ জনকে আটক করেছে র্যাবের বিশেষ অভিযানিক দল। যার মধ্যে একজন মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশী পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ৪টি গুলি, ৪টি মোবাইল সেট ও নগদ এক হাজার ৯৭৫ টাকা। বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের ইতিহাসে এটিই সব থেকে বড় চালান। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর রূপাতলীতে র্যাব-৮ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক আতিকা ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় কলাপাড়ার শেখ কামাল সেতুর দক্ষিণ পাশ থেকে আটককৃত দুই মাদক ব্যবসায়ী হলো- কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার পশ্চিম পানখালী গ্রামের মৌলভী মো. ইউনুচ এর ছেলে মো. ইব্রাহীম (২৫) ও কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা আবুল হোসেন এর ছেলে রোহিঙ্গা মো. আলম (৩০)। তাদের বিরুদ্ধে র্যাব বাদী হয়ে কলাপাড়া থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৮ অধিনায়ক আতিকা ইসলাম বলেন, দীর্ঘ দিন ধরেই মায়ানমার থেকে সমুদ্র পথে বিভিন্ন মাধ্যমে মাদকের চোরকারবারি চলে আসছে বলে আমাদের কাছে তথ্য ছিলো। মায়ানমার থেকে আসা মাদক কুয়াকাটায় পৌছে তা সড়ক পথে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় প্রেরন করা হয়। র্যাব-৮ এর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কুয়াকাটা সহ সমুদ্র পথে র্যাবের নজরদারীবৃদ্ধি করা হয়। সে অনুযায়ী ইতিপূর্বে মায়ানমার থেকে নিয়ে আসা মাদক দ্রব্য ঢাকায় পাচারকালে মাদকের একাধীক চালান উদ্ধারে সক্ষম হয়েছে র্যাব-৮ এর দল। এমনকি আটকও হয়েছে বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী। সেই সাথে পটুয়াখালী, কলাপাড়া, কুয়াকাটা এলাকায় এ ধরনের মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকে।
এর ধারাবাহিকতায় গত ৬ অক্টোবর শুক্রবার পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় মাদক বিরোধী একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-৮। অভিযানকালিন নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাত সাড়ে ৩টার দিকে কলাপাড়া শেখ কামাল সেতুর দক্ষিণ পাশে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় সেখান থেকে এক রোহিঙ্গা সহ দুই মাদক ব্যবসায়িকে আটক করেন তারা। তখন তাদের তল্লাশী করে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, একটি বিদেশী তৈরী পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, চারটি গুলি, মোবাইল সেট ও নগদ টাকা উদ্ধার করে।
র্যাব-৮ অধিনায়ক আতিকা ইসলাম জানিয়েছেন, আমদানীকৃত অবৈধ এবং নিষিদ্ধ ইয়াবা চোরাই ভাবে মায়ানমার থেকে সমুদ্র পথে ট্রলার যোগে কুয়াকাটায় নিয়ে আসে। সেখান থেকে প্রাইভেটকার যোগে উদ্ধারকৃত মাদক দ্রব্য নিয়ে যাচ্ছিলো। শুধু ঢাকাই নয়, কুয়াকাটার এই রুট ব্যবহার করে দেশের অন্যান্য জেলা এবং উপজেলাতেও পৌছে দেয়া হতো মাদকের চালান।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে যাচ্ছে র্যাব-পুলিশ সহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। কক্সবাজার সহ দেশেল বিভিন্ন সিমান্তবর্তী এলাকায় তাদের তৎপরতার কারনে মাদক পাচারের রুট পরিবর্তন করে ফেলে মাদক সিন্ডিকেট। সে অনুযায়ী বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম পর্যটন নগরী কুয়াকাটা সমুদ্র পথকেই নিরাপদ হিসেবে বেছে নেয় মাদক চোরাকারবারিরা। তবে তাদের সেই পথেও চ্যালেঞ্চ হয়ে দাড়িয়েছে র্যাব-৮। রুট জমজমাট হওয়ার আগেই তাদের একের পর এক সফল অভিযান মাদক চোরাকারবারিদের ভাবিয়ে তুলেছে।