6:02 pm , September 28, 2018
রুবেল খান ॥ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বরিশাল আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। পন্থিভিত্তিক রাজনীতির কারনে ইতিপূর্বে দলীয় নেতারা এক মঞ্চে না উঠলেও সেই ঘটনা এখন পুরোটাই ইতিহাস। পন্থি গ্রুপিং ভুলে এক প্লাটফর্মে এসে দাড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগরের শীর্ষ নেতারা। গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ৭২ তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠানে নেতাদের অংশগ্রহণ এমন চিত্রই ফুটে ওঠে। অবশ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে একই দলের বিরোধী নেতাদের একমঞ্চে উঠে আসার পেছনে ভিন্ন কারন দেখছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পন্থিভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা ভুলে সাংগঠনিক কাজে মনোযোগী হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ২০০৮ সালের পর থেকেই বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে গ্রুপিং রাজনীতি প্রকাশ পায়। মহানগর পর্যায়ে বিশাল গ্রুপের নেতৃত্ব দেন সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম শওকত হোসেন হিরন। সেই থেকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন পন্থি এবং গ্রুপিং ধীরে ধীরে প্রকট হয়। শওকত হোসেন হিরন এর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ওই গ্রুপিং এর কারনে কোনঠাসা হয়ে পড়ে জেলা আওয়ামী লীগের বৃহত্তর অংশ। হিরন অনুসারীরা কোন দলীয় কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচির আয়োজন করলে সেখানে দেখা মেলেনি জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা কিংবা তাদের অনুসারীদের।
অবশ্য শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের গ্রুপিং রাজনীতিতে ভাটা পড়ে। তার সহধর্মীনি জেবুন্নেছা আফরোজ এমপি নির্বাচিত হলেও সাংগঠনিক অপরিপক্কতার কারনে শওকত হোসেন হিরন এর পন্থিদের ধরে রাখতে পারেনি। সেই সুযোগে বিভক্ত হয়ে পড়ে মহানগর আওয়ামী লীগের হিরন অনুসারী নেতা-কর্মীরা। সেই মুহুর্তে মহানগর আওয়ামী লীগের হাল ধরেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং মন্ত্রী আলহাজ্ব আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ-এমপি’র জ্যেষ্ঠ পুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। হিরন অনুসারীরা নোঙ্গর করে সাদিক আবদুল্লাহ’র ঘাটে। তবে এর পরেও মহানগর আওয়ামী লীগের হিরন পন্থি একটি অংশ গ্রুপিং জিইয়ে রাখেন। সর্বশেষ যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সদ্য সম্পন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে।
তাছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে গ্রুপিং প্রকাশ পায়। সেখানে হিরন অনুসারীরা বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলে নতুন করে কোরাম গড়ে তোলার সুযোগ খোঁজেন। যে কোরামে উঠে আসে বরিশাল সদর আসনের এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ, কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, যুবলীগ নেতা মেজবাহ উদ্দিন জুয়েল, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন, ছাত্রলীগ মহানগর সভাপতি জসিম উদ্দিন সহ আরো কয়েকজন। তবে সাদিক অনুসারীদের রাজনৈতিক পরিপক্কতার কারনে শেষ পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান জানান দিতে পারেনি। তবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখেন হিরন অনুসারীরা। মহানগর আওয়ামী লীগ একাধিক সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও সেখানে সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, সিনিয়র সহ-সভাপতি আফজালুল করিম, খান মামুন, নিজামুল হক নিজাম সহ হিরন অনুসারীদের উপস্থিতি ছিলোনা। তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে চলেন। দলীয় এবং জাতীয় কর্মসূচিতেও তাদের উপস্থিতি দেখা যায়নি।
তবে সেই চিত্র এখন পুরাটাই ভিন্ন। গত সিটি নির্বাচনে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই শওকত হোসেন হিরন পন্থি পুরোই ভাটা লাগে। জেবুন্নেছা আফরোজ সহ সকল নেতারাই পন্থি এবং গ্রুপিং ভুলে এক মঞ্চে উঠে এসেছেন।
শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন পরে গতকাল শুক্রবার জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে একত্রিত হয়েছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুস-এমপি, সদর আসনের এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় নেতা মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু সহ অন্যান্য নেতাদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহন দেখা যায়।
অবশ্য আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মীর দাবী গ্রুপিং রাজনীতি ভুলে ঐক্যমত গড়ে ওঠার পেছনে কাজ করছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যারা দলীয় কার্যক্রমে স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহন করছেন তাদের বেশিরভাগ নেতাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলীয় কার্যক্রমে নিজেদের উপস্থিতি এবং অংশগ্রহন জানান দিতেই পন্থি-গ্রুপিং ভুলে এক মঞ্চে মিলিত হচ্ছেন দলীয় নেতারা। তবে তাদের ঐক্যবদ্ধতার ভালো দিকটাও উঠে আসছে আলোচনায়। নির্বাচনের পূর্বে নেতাদের মধ্যে ঐক্য ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের জয়ে পক্ষে বড় ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করতে পারবে বলেও মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।