6:01 pm , September 26, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বছরের মূল প্রজনন মৌসুমকে সামনে রেখে সাগর থেকে আগাম ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উপকূলীয় নদ-নদীতে উঠে আসায় প্রচুর ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরা পড়ছে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে। আগামী ৭ অক্টোবর থেকে মূল প্রজনন মৌসুমে উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা সহ দেশের অভ্যন্তরীন নদ-নদীতে ইলিশের ডিম ছাড়া হ্রাস পাবার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ওয়াকিবহাল মহল। তবে মৎস্য অধিদপ্তর সহ গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীগন পুরো বিষয়টি নিবিড় পর্যবেক্ষনে রেখেছেন। জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারনেই এবার ভরা বর্ষায় যেমনি ইলিশ অভ্যন্তরীন নদ-নদীতে আসেনি, তেমনি প্রজনন মওশুমকে সামনে রেখে আগাম মা ইলিশ উঠে আসছে সাগর থেকে। গত সপ্তাহখানেক যাবত দেশের উপকূলীয় সাগর মোহনার সবগুলো নদ-নদী হয়ে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুরের বেশীরভাগ অভ্যন্তরীন নদ-নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। নদ-নদীতে ইলিশের অধিক্যের কারণে জেলে ও মোকামের মহাজনদের মুখে হাসি ফুটলেও মূল প্রজনন মৌসুমকে সামনে রেখে আকষ্মিকভাবেই সাগর থেকে উপকূলীয় নদ-নদী মোহনা সহ অভ্যন্তরীন জলাশয়ে ডিমওয়ালা মা ইলিশ উঠে আসার এঘটনা উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।
গত সপ্তাহখানেক যাবতই জেলেদের জালে অধিকহারে ইলিশ ধরা পড়ায় মোকামে দর পতনও ঘটেছে। যার প্রভাব খোলা বাজারে ইলিশ সহ সব মাছের ওপরও পড়েছে। ইতোমধ্যে ১ কেজি সাইজের ইলিশের কেজি ৬০ হাজার টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। ৫শ’ গ্রাম থেকে ৮শ’ গ্রামের সাইজের ইলিশের মণ এখন ২৫-৩০ হাজার টাকার মধ্যে। খোলা বাজারেও ১ হাজার টাকার মধ্যে এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। ৫শ’ গ্রাম থেকে ৮শ’ গ্রাম সাইজের ইলিশের দাম সাড়ে ৭শ’ টাকা থেকে ৮শ’ টাকার মধ্যে কেজি। পটুয়াখালীর গলাচিপা, আলীপুর-মহীপুর, কলাপাড়া, চর মোন্তাজ, ভোলার চর ফ্যাশন, বরগুনার পাথরঘাটা, পিরোজপুরের পাড়ের হাট ও বরিশালের হিজলা, মেহেদিগঞ্জ সহ নগরীর পোর্ট রোড মোকামে এখন প্রতিদিনই শত শত ট্রলার উপকূলীয় নদ-নদী মোহনা থেকে বিপুল পরিমান ইলিশ নিয়ে নোঙর ফেলছে।
এসব মোকাম থেকে ট্রাক বোঝাই করে ইলিশ যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। দীর্ঘদিন পরে নদ-নদীতে ইলিশের বিচরণ বেড়ে যাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের মোকামগুলো কর্ম চঞ্চল হয়ে উঠেছে। অথচ এবার ভরা বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় যথেষ্ঠ কম হওয়ায় সাগর থেকে ইলিশ উপকূলীয় নদ-নদী হয়ে অভ্যন্তরীন জলাশয়ে আসেনি। ফলে ভরা মৌসুমে ইলিশের খড়ায় অনেকটাই বেকার হয়ে পড়ে জেলে সহ মৎস্যজীবীরা। মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, দেশের ৪০টি জেলার ১৪৫টি উপজেলার দেড় হাজার ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ জেলে পরিবার ইলিশ আহরনে সম্পৃক্ত। যার ৩২% সার্বক্ষনিক আর ৬৮% খন্ডকালীন। এমণকি ইলিশ বিপনন, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাত করন, জাল, নৌকা ও বরফ তৈরী এবং মেরামত কাজে আরো ২০-২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। দেশের ৬টি বিভাগের মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগেই প্রায় সোয়া ৩ লাখ জেলে এ পেশার সাথে জড়িত। যার ৬৫% সার্বক্ষনিক ইলিশ আহরনে জড়িত বলে মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে বলা হয়েছে।
আগামী ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত আশ্বিনের অমাবশ্যা থেকে পূর্ণিমার পর সহ মোট ২২ দিন প্রজনন মৌসুমে এবার দেশের উপকূলীয় ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার মূল প্রজনন এলাকায় সব ধরনের মাছ সহ সারা দেশের নদ-নদীতে ইলিশ আহরন নিষিদ্ধ থাকছে। এসময়ে সাগর থেকে মা ইলিশের দল ঝাঁকে-ঝাঁকে ছুটে এসে ভাটি মেঘনার ভোলা ও লক্ষ্মীপুর জেলার মধ্যবর্তি ঢালচর, মণপুরা, মৌলভীর চর, কালির চর ও পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদী এলাকার প্রায় ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ডিম ছেড়ে থাকে বলে মৎস্য বিজ্ঞানীগন চিহ্নিত করেছেন। ফলে ইলিশের মূল প্রজনন ক্ষেত্র হিসেব উপকূলের ঐ ৭ হাজার বর্গ কিলোমাটার এলাকায় সব ধরনের মাছ আহরন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। মৎস্য অধিদপ্তরের মতে গত অর্থ বছরে দেশের ইলিশের উৎপাদন পরবর্তী সহনীয় আহরন ছিল ৪ লাখ ৯৬ হাজার টন। যা চলতি অর্থ বছরে পাঁচ লাখ টন অতিক্রম করবে বলে মৎস্য অধিদপ্তর সহ মন্ত্রণালয়ও আশা করছে।
তবে মূল প্রজনন মৌসুমের আগে সাগর থেকে ঝাঁকে-ঝাঁকে ইলিশ উপকূলীয় নদ-নদী মোহনা সহ অভ্যন্তরীন জলাশয়ে ছুটে আসায় এখন তা অবাধেই ধরা পড়ছে। ফলে এবারের প্রজনন মৌসুমে উপকূলীয় এলাকায় ইলিশের প্রজনন সহ উৎপাদনও ব্যাহত হতে পারে বলে কিছুটা সংশয় ও শংকা বাড়ছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৎস্য বিজ্ঞানীদের মধ্যে।