6:22 pm , September 18, 2018
রুবেল খান ॥ ভোটের রাজনীতিতে পদোন্নতির সুযোগ খুঁজছেন আওয়ামী পন্থি উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়ররা। তারা এখন এমপি হওয়ার মিশনে নেমেছেন। আর তাই এমপি হওয়ার দৌড়ে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়ররা। এরই মধ্যে বরিশাল জেলা সহ অন্যান্য উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়ররা প্রার্থী হিসেবে নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা জানান দিয়েছেন। তবে মনোনয়ন প্রতাশীদের তালিকায় তাদের নাম উঠে আসায় বঞ্চিত হওয়ার আশংকায় রয়েছেন বঞ্চিতরা। আর তাই বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের বঞ্চিত নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনের ঘোষনা অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এজন্য দেশ ব্যাপী দলীয় প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম চালাচ্ছে বড়-ছোট সকল শ্রেণির রাজনৈতিক দলগুলো। এর মধ্যে আওয়ামী লীগে অর্ধশতাধিক এবং বিএনপি শতাধিক আসনে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। বাকি আসন গুলোতে যোগ্য প্রার্থী খুঁজছে দলটির হাইকমান্ড। তাই নিজেদের যোগ্য প্রার্থী প্রমান দিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে আনতে লবিং-তদবির এবং প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছে স্ব স্ব দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এই তালিকায় শুধুমাত্র বর্তমান ও সাবেক এমপি এবং দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারাই নন। রয়েছেন পৌর মেয়র এবং উপজেলা চেয়ারম্যানরা। বিশেষ করে উপজেলা চেয়ারম্যানরা পদোন্নতীর জন্য চাচ্ছেন এমপি পদে দলের মনোনয়ন। বিশেষ করে বরিশালের আওয়ামী পন্থি উপজেলা চেয়ারম্যানদের টার্গেট এখন এমপি হওয়া।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সর্বশেষ ২০১৪ সালে বরিশালের বিভিন্ন উপজেলায় দফায় দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন চেম্বার অব কমার্স এর সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু। নির্বাচিত হয়ে গত চার বছর সফলতার সাথেই ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সদর উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মেয়াদ শেষ না হতেই সাইদুর রহমান রিন্টু এখন বরিশাল সদর-৫ আসনের এমপি হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ের জানান দিতে তিনি নগর জুড়ে বিলবোর্ড এবং পোষ্টার টানিয়েছেন। যাতে লেখা রয়েছে সাইদুর রহমান রিন্টুকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই। এমনকি সদর আসনে এমপি পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ার বিষয়টি তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তাছাড়া মনোনয়ন প্রশ্নে তিনি অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। তিনি দলের টিকেট পেলে বঞ্চিত হবে অন্যান্য নেতারা।
অপরদিকে বরিশাল-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক। দীর্ঘ দিন ধরেই তিনি এই আসনটিতে এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। ২০১৪ সালে চতুর্থ দফায় অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এর পর বরিশাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। সে জন্য তাকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিলো। কিন্তু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারনে শেষ পর্যন্ত তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন থেকে সড়ে দাড়ান। এরপর উপ-নির্বাচনে বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন গোলাম ফারুক। সে হিসেবে তার উপজেলা চেয়ারম্যান পদের মেয়াদ এখন অনেক দিন রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই পুনরায় বরিশাল-২ আসনে এমপি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন তিনি।
দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে আছেন গোলাম ফারুক। শেষ পর্যন্ত তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। তবে তার সেই সম্ভাবনায় বড় বাধা হয়ে আছেন বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুস। কেননা তিনিও ওই একই আসনে পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। অবশ্য গুঞ্জন রয়েছে গোলাম ফারুককে বরিশাল-২ আসনে রেখে তালুকদার মো. ইউনুসকে বরিশাল-৬ আসন দেয়ার বিষয়ে। তবে তার বাস্তবতা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
এর কারন খুঁজেতে গিয়ে জানাগেছে, বাকেরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৬ আসনটি জাতীয় পার্টির কাছ থেকে উদ্ধার করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এজন্য উপজেলা থেকেই আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছেন বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সামসুল আলম চুন্নু এবং বাকেরগঞ্জ পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া। বরিশাল-৬ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে তারা দলের মনোনয়ন চাচ্ছেন। সে জন্য লবিং-তদবিরও চালাচ্ছেন সমান তালে। তাই এ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুসের বরিশাল-৬ আসনে ফেরাটা কষ্টসাদ্য হয়ে দাড়াবে। যদিও কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের সাথে একমত হওয়ার বিষয়টিও বলছেন বাকেরগঞ্জ উপজেলার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
অপরদিকে জোটের স্বার্থে দীর্ঘ দিনের হাত ছাড়া বরিশাল-৩ আসনও ফিরে পেতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর তাই আওয়ামী লীগের নতুন পুরাতন অনেক নেতাই বাবুগঞ্জ-মুলাদী আসনের প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছেন অনেক আগে থেকেই। সরকার দলীয় ওই নেতাদের সাথে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় উঠে এসে বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের নামটিও। অনেক আগে থেকেই তিনি বরিশাল-৩ আসনে প্রার্থী হিসেবে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রশ্নের তার বাধা হয়ে দাড়াতে পারেন মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম মিঠু খাঁ। কেননা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিও বরিশাল-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানাগেছে। অবশ্য বরিশাল-৩ আসনে মহাজোটের প্রভাব রয়েছে। মহাজোটের শরীক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এর এলাকা বাবুগঞ্জ উপজেলা। যে কারনে নিজ এলাকায় প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা করবেন দলটি। তাছাড়া আসনটিতে মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী যুবমৈত্রী কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক এর শক্ত অবস্থান রয়েছে। জনপ্রিয়তার দিক থেকেও এগিয়ে আছেন তিনি। যদিও আসনটিতে এরই মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে বর্তমান এমপি শেখ মো. টিপু সুলতানকে পুনরায় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
তাছাড়া মহাজোটের অন্যতম শরিক এবং জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অবস্থানও রয়েছে এই আসনটিতে। সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু আসনটিতে পুনরায় মনোনয়ন প্রত্যাশী। যার ফলে জোটের স্বার্থে এবারেও বরিশাল-৩ আসনটি ছেড়ে দিতে হতে পারে আওয়ামী লীগকে। তেমনটি হলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা বাদ পড়ে যাবেন। অবশ্য সব কিছুর হিসাব নিকাশ কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।