5:59 pm , September 17, 2018
রুবেল খান ॥ এক সময় বাকেরগঞ্জ জেলা থাকলেও সেটি এখন উপজেলা। ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় এক সময় ছিলো ১৩ জমিদারের বসবাস। প্রাচীন এই উপজেলাটি নিয়ে বরিশাল-৬ আসন গঠিত। ভৌগলিক কারনেই উপজেলাটিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি খুবই মজবুত। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে উপজেলা, পৌরসভা এমনকি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার। তবে ছাড় দিতে হচ্ছে শুধু সংসদ নির্বাচনে। শক্ত অবস্থানে থেকেও জোটগত কারনে জাতীয় পার্টিকে দিয়ে দিতে হচ্ছে বরিশাল-৬ আসনটিকে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মত করেই আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। তাই এরই মধ্যে বরিশাল-৬ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জানান দিয়েছেন প্রায় অর্ধ ডজন নেতা। যাদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পৌর মেয়রও। তবে আসন ছাড়তে নারাজ জাতীয় পার্টি। বর্তমান এমপিকেই মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছে জাপার স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তাছাড়া মহাজোটের হয়ে লড়তে প্রস্তুত জাসদ কেন্দ্রীয় নেতা মো. মোহসীন। এমনকি নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে এরই মধ্যে চূড়ান্ত প্রস্তুতিও নিয়েছেন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের এই নেতা।
দশম জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক এই দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের নির্বাচনী এলাকা বরিশাল-৬ আসন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনটিতে তিনি এমপি ছিলেন। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি তার স্ত্রী জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র নাসরিন জাহান রতœা আমিনকে ছেড়ে দেন। আর তিনি চলে যান পটুয়াখালী সদর আসনে। অবশ্য এর আগেও সংরক্ষিত আসনের এমপি ছিলেন রতœা আমিন। আসনটিতে সর্বশেষ ১৯৯৬ এর আমলে আওয়ামী লীগের সাংসদ সদস্য ছিলেন মরহুম মাসুদ রেজা। তবে এর পরে আসনটিতে আওয়ামী লীগের আর কোন সাংসদ ছিলো না। ৯ম ও ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন দলটির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিক। কিন্তু জোটের শর্তে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছাড় দিতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। তবে এবারের নির্বাচনে কে হবেন মহাজোটের প্রার্থী সেই নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অবকাশ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বরিশাল-৬ আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হতে এরই মধ্যে একাধিক নেতা-নেত্রী আত্মপ্রকাশ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং জাসদ এর প্রার্থী। তবে সাংগঠনিক কারনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যাই বেশি।
আওয়ামী লীগ এবং মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব:) আবদুল হাফিজ মলি¬ক, বাকেরগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সামসুল আলম চুন্নু, জাসদ নেতা মো. মোহসীন, সাবেক এমপি মরহুম মাসুদ রেজার স্ত্রী ও জেলা পরিষদের সদস্য আইরীন রেজা, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সাংসদ পারভিন তালুকদারের স্বামী শিল্পপতি আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক তালুকদার, প্রকৌশলী মঞ্জুরুল ইসলাম ও পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া। এর বাইরে মহাজোটের প্রশ্নে উঠে আসছে বর্তমান সাংসদ রতœা আমিন এর নামটিও। যদিও জাতীয় পার্টি জোটগতভাবে নির্বাচনে যাবে কিনা সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্তে পৌছতে পারেনি দলটির হাইকমান্ড। অবশ্য সকল দলের অংশগ্রহনে নির্বাচন হলে ৩০০টি আসনেই প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে ঘোষনা দিয়েছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। এমনটি হলে আসনটি ফিরে পেতে পারে আওয়ামী লীগ। আর তা না হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মাধ্যমে বরিশাল-৬ আসনটি ধরে রাখার পরিকল্পনাও রয়েছে তৃনমুলের। এর কারন হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বলেন, জাপার সাংসদ আওয়ামী লীগের কর্মীদের মূল্যায়ন করেনি। এমনকি ওই সাংসদ এলাকার উন্নয়নেও ভূমিকা রাখেননি। তাই মহাজোটের শরীকদের মধ্যে থেকে প্রার্থী করা হলে বিকল্প চিন্তা করবেন তৃনমুলের নেতা-কর্মীরা।
নির্বাচনে বরিশাল-৬ আসন নিয়ে জাতীয় পার্টির ভাবনা এবং প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে বক্তব্য জানতে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান এমপি রতœা আমিন এর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে বরিশাল-৬ আসনটিতে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জাসদের কেন্দ্রীয় অন্যতম নেতা মো. মোহসীন। যিনি জনপ্রতিনিধি না হয়েও বাকেরগঞ্জ উপজেলাবাসির উন্নয়নে কাজ করছেন। তবে এর পেছনে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি করার স্বপ্ন তার অনেক আগে থেকেই। এমনকি ১৯৯৬ সালে জাসদ এর মনোনিত প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন।
আলাপকালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ছাত্র নেতা মো. মোহসীন বলেন, দীর্ঘ বছর ধরেই আমি এলাকায় সামাজিক সাংস্কৃতিক নানা কর্মকান্ডে অংশ নেয়া ছাড়াও প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছি। আমার প্রচেষ্টাতেই গোমা সেতু নির্মান প্রকল্পের ৫৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা এক নেকের সভায় পাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে ওই সেতুর কাজ চলমান রয়েছে। গোমা সেতু নির্মান সম্পন্ন হলে বরিশাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নয়ন এবং সুবিধাজনক হবে।
তিনি বলেন, সারাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উয়ন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু বিগত প্রায় ১০ বছরে স্থানীয় সাংসদের অদক্ষতার কারনে এলাকায় কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি। উল্টো লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিনত করেছে। কিন্তু জনপ্রতিনিধি না হয়েও আমি বাকেরগঞ্জবাসির পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে বাকেরগঞ্জ রক্ষায় চরাদী থেকে দাড়িয়াল পর্যন্ত পাঁচ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন এনে দিয়েছি। সেখানে ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। বর্তমানে ওই কাজ শেষ পর্যায় রয়েছে। এর বাইরে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে স্কুল-কালেজের জন্য জেলা পরিষদ থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করে দেয়া সহ সকল ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অবদান রাখার চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, মহাজোট থেকে বরিশাল-৬ আসনে আমি মনোনয়ন এবং সমর্থন প্রত্যাশী। আমাকে এই আসনে প্রার্থী করা হলে আমার বিশ্বাস উপজেলার সাধারণ মানুষ আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে। কারন আমি তৃনমূলের সাথে আমি সেভাবেই মিশে আছি। তবে মহাজোট থেকে প্রার্থী না করা হলে প্রয়োজনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছেন জাসদের এই নেতা।
তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বাকেরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া বলেন, সাংগঠনিক দিক থেকে এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ শক্ত অবস্থানেই রয়েছে। যার প্রমান ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত হওয়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো। উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এমনকি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়েও আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। শুধুমাত্র সংসদ সদস্যই জাতীয় পার্টির।
তিনি বলেন, মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারে। তবে যে যোগ্য দল থেকেই তাকেই মনোনিত করা হবে। আমি নিজেও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু এই আসনটিতে জোটের প্রভাব রয়েছে। কেন্দ্র কি চায় সে বিষয়টি বুঝতে হবে। আমরা চাচ্ছি বরিশাল-৬ আসনটি আওয়ামী লীগের মধ্যেই ধরে রাখতে রাখতে। তবে জাতীয় নির্বাচনে সরকার গঠনের সার্থে কেন্দ্র থেকে যাকে মনোনয়ন বা সমর্থন দেয়া হবে তার পক্ষেই কাজ করার কথা বলেন মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের এই পৌর মেয়র।