12:30 am , September 10, 2018

রুবেল খান ॥ নগরীসহ জেলার গুরুত্বপূর্ন এবং ঐতিহ্যবাহী ২৭ খাল সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাই ওই ২৭ খালের সংস্কারের জন্য তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকার মধ্যে নগরী এলাকার ৩টিসহ ৯ উপজেলার ২৪টি খাল রয়েছে। খাল পুন.খনন ও সংস্কারের অনুমতি পেলে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জানাগেছে, সম্প্রতি দেশব্যাপী নদ-নদী রক্ষা এবং পানির অবাধ প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহন করে সরকার। তারই অংশ হিসেবে প্রতিটি উপজেলায় পুন.খনন যোগ্য অন্তত একটি করে খালের তালিকা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলার অন্তর্গত পুন.খননযোগ্য খাল সংস্কারের জন্য একটি তালিকাও তৈরী করেছেন। যা বর্তমানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ২৭টি খালের মোট ১২২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার অংশ পুন.খননের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। যার মধ্যে উজিরপুর, গৌরনদী ও মেহেন্দিঞ্জে দুটি করে খাল তালিকায় থাকলেও বরিশাল সদর সহ বাকি ৭টি উপজেলায় ৩টি করে খাল পুন.খননের তালিকা ভুক্ত হয়েছে।
তালিকাভুক্ত খালগুলো হলো- নগরীর কীর্তনখোলা নদী থেকে সাগরদী খাল হয়ে বান্দ রোড পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার নাপিতখালী খাল, জাগুয়া এলাকার দক্ষিণ চন্ডিপুরের ৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার বিসাইর খাল, কালিজিরা নদী হতে রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের কড়াপুরের পপুলার স্কুলের সামনে দিয়ে সোনামিয়ার পুল পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার কড়াপুর খাল।
এছাড়া বাকেরগঞ্জ উপজেলায় শ্রীমন্ত নদী থেকে নাপিত বাড়ি খাল হয়ে পোড়শুলা খাল পর্যন্ত ২ কিলোমিটার খাল, দক্ষিণ সাদিষ আমতলী ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ভারানীর খাল, লক্ষ্মীপাশা স্লুইস গেট হতে মোতাহার শিকদার বাজার ভায়া আবুল কাশেম মোল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার খাল।
বানারীপাড়া উপজেলায় বানারীপাড়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে কাজী বাড়ী ব্রীজ সংলগ্ন হতে হাজী নুর হোসেন মিয়ার বাড়ীর দক্ষিণ পশ্চিম পার্শ্বে সন্ধ্যা নদী পর্যন্ত ভায় হাশেম মিয়ার বাড়ি হতে বমালী ছাত্রাবাস ব্রীজ পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার খাল, উপজেলার ৫ কিলোমিটার ইশানী খাল, সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ স্বনির্ভর খাল।
উজিরপুর উপজেলার কেশবকাঠী রাখাল সরকারের বাড়ির উত্তর দিকের ব্রীজ হতে খালের ওটরা ধাইবাড়ি ব্রীজ হয়ে গজালিয়া মন্ডল বাড়ির পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল, উপজেলার ধামুরা বাজার হতে বামরাইল হয়ে ঘন্টেশ্বর পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার খাল পুন.খনন।
গৌরনদী উপজেলার গোসের হাট থেকে বয়সা বাজার হয়ে মাগুড়া নেছাড়িয়া পর্যন্ত ৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার খাল পুন.খনন, উপজেলার কুতুবপুর থেকে কলাবাড়িয়া হয়ে বাসুদেব পাড়া পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার খাল পুন.খনন।
আগৈলঝাড়া উপজেলার মতির মিলের সামনে থেকে ছোট বাসাইল সরদার বাড়ির মসজিদ হয়ে চৌদ্দমাদার গাঙ্গীর ঝোড়ের মাথা পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ কিলোমিটার ওয়াপদা খাল, উপজেলার কোদালধোয়া ত্রিমুখি হতে কোদালধোয়া হয়ে ২নং ব্রীজ পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার খাল পুন.খনন ও উপজেলার রামের বাজার হতে সাহেবের হাট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার খাল পুন.খননের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
তাছাড়া মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় ২টি খাল পুন.খননের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পাতারহাট লঞ্চঘাট হতে দাদপুর বাজার সংলগ্ন ধর্মগঞ্জ নদী পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার। উপজেলার আলীগঞ্জ বাজার হতে শিবগঞ্জ পোল পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারানীর খাল।
হিজলা উপজেলার খনন যোগ্য তিনটি খাল তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে একটি ঘোষেরচর স্লুইস গেট হতে কালিকাপুর স্লুইস গেট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার, একতা বাজারের খালের ৩ কিলোমিটার ও উপজেলার মেমানিয়া টেকের বাজার খালের ২ কিলোমিটার পুন.খনন করা হবে।
মুলাদী উপজেলায় ৩টি খাল পুন.খননের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে চরকালেখা নোমরহাট থেকে শুরু করে কাশেম সরদারের বাড়ী হয়ে পূর্ব কাইচমারা থেকে কাঞ্চন মাতব্বরের বাড়ি পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার খাল, উপজেলার দুলাল ঢালির বাড়ি হতে ষোলঘর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার খাল ও পাতার চর ১নং ওয়ার্ডের খেয়াঘাট হতে মুলাদী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের গুচ্ছগ্রাম পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার খাল পুন.খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এছাড়া বাবুগঞ্জ উপজেলার বাহেরচর ঘোষকাঠী শাহজাহান মাষ্টারের বাড়ি সংলগ্ন ব্রিজ হতে গহুলের বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে সমাজকল্যান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন-এমপি’র বাড়ি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার খাল, উপজেলার কেদারপুর মতলেব খানের বাড়ি সংলগ্ন ব্রিজ হতে কাশিগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ২ কিলোমিটার খাল এবং রহমতপুর ইউনিয়নের মধ্য লোহালিয়া পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সারা দেশ থেকে পুন.খনন যোগ্য একটি করে খালের তালিকা চেয়েছেন। তাতে বরিশাল থেকে মহানগরী সহ ১০ উপজেলার ১১টি খালের তালিকা প্রেরনের কথা ছিলো। কিন্তু আমরা বরিশালের উল্লেখ্যযোগ্য ২৭টি খালের তালিকা মন্ত্রণালয়ে প্রেরন করেছি। যার মধ্যে ১৫টি খালের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি তালিকার মধ্যে থেকে অন্তত ওই ১৫টি খাল পুন.খননের জন্য অনুমতি পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, খালের তালিকা তৈরী এবং পুন.খনন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর একটি কমিটি করা হয়েছে। যে কমিটির আহ্বায়ক বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান। এছাড়া সদস্য সচিব আমি (মোহাম্মদ আবু সাঈদ)। ওই কমিটি’র সমন্বয়ে খালগুলোর তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে খাল খননের বিষয়ে অনুমতি পেলে পরবর্তীতে সার্ভে এবং ব্যয় নির্ধারন করে তা পুনরায় মন্ত্রণালয়ে প্রেরন করা হবে।
বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেছেন, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর ঐতিহ্যবাহী জেল খাল পুন.সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। যে কারনে ওই খালটি আলাদাভাবে তালিকাভুক্ত করা হয়নি। জেল খালের বাইরে অন্যান্য ২৭টি খালের তালিকা করে তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রেরন করা হয়েছে। জেল খালের পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে আমরা বরিশালের সকল খাল খনন এবং নদীর সাথে মুল ¯্রােত ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবো।