5:40 pm , September 8, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বীর মুক্তিযোদ্ধারা এবং ভারতের সেনারা একসাথে যুদ্ধ করেছিলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছিলো। আর ওইটাই ছিলো ভারতীয়দের জন্য মহান গর্বের মুহুর্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্কের বীজ বপন করেছিলেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী’র নেতৃত্বে সেই সম্পর্ক আরো নতুন উচ্চতায় পৌছে গেছে। ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে এত চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে যা সু-সময় ও দু.সময় ভারত বাংলাদেশের সাথে থাকবে।
গতকাল শনিবার বিকালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ এর নাসিমুজ্জামান মেহেদী মিলনায়তনে ‘নতুন ভারত মুক্তিযোদ্ধা স্কলারশীপ স্কীমে’র বৃত্তির চেক বিতরণ’ অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা এসব কথা বলেন। ভারত সরকারের অর্থায়নে ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস ও মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্ট যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিম মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। প্রধান অতিথি বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তার বক্তব্যে বলেছেন, ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুসহ আমাদের পরিবারের উপর হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সেই সময়ও ৭১ এর মতো ভারত আমাদের স্থান দিয়েছে। টানা চার বছর ভারতে থেকে নিজেদের জীবন রক্ষা পেয়েছে। ভারত আমাদের আশ্রয় না দিলে আমাদেরকেও খুজে খুজে হত্যা করা হতো। এই জন্য তিনি ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ভারত বড় ভাই হলে ছোট ভাই বাংলাদেশ। দেশের অন্যান্য সিটির মতো বরিশাল নগরীতেও ভারতের অর্থায়নে উন্নয়নমুলক কাজের দাবি জানিয়েছেন নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান ড. আবুল আজাদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মুক্তিযুদ্ধে ৯ম সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মাহফুজ আলম বেগ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা আরো বলেন, ভারত এখন বাংলাদেশে ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। পাবনা, পটুয়াখালী, জামালপুর, কক্সবাস, নোয়াখালী ও যশোরে ৫শত বেড হাসপাতালের এবং যৌথভাবে সড়ক, বন্দর, রেলপথ ও অন্যান্য অবকাঠামো প্রনয়নের কাজ করছে ভারত। আমরা রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামে সংস্কৃতিক কেন্দ্র, স্কুল-পাঠাগার ও রাস্তাদি নির্মান করছি। বরিশালে আমরা কাজ করতে পারলে আনন্দিত হব।
তিনি বলেন, বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশ পৃথিবির দ্রুত উন্নয়নশিল দেশগুলোর মধ্যে নিজের স্থান করে নিয়েছে। সামপ্রতিককালে বাংলাদেশ আত্মসামাজিক ক্ষেত্রে অভুতপূর্ন উন্নয়ন সাধন করেছে। আমরা বাংলাদেশেল এই অর্জনে খুবই গর্বিত। আর বাংলাদেশ চরমপন্থি ধারনাকে দৃঢ় ভাবে প্রত্যাক্ষান করেছে এবং সাহসি সমাজ হিসেবে সাফল্য অর্জন করেছেন।
হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি ও চেক প্রদানের যে প্রকল্প সেটা প্রথম ২০০৬ সালে চালু হয়েছিল। এই প্রকল্পের আওতায় ১২ হাজার ৬২১ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে এবং ২১ কোটি টাকার একটি তহবিল ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যানে তিনটি উদ্যেগের ঘোষনা দিয়েছিলেন। এগুলো হল, নতুন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বৃত্তি প্রকল্প, অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের, ভারতে বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং সকল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পাঁচ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা।
তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সালে নতুন মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি প্রকল্প চালু হয়। এই প্রকল্পের আওতায় পরবর্তী ৫ বছরে ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে ¯œাতক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তি প্রদান করা হয় এবং এই উদ্দেশ্যে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। পুরাতন এবং নতুন প্রকল্পগুলো একত্রিত হলে ভারত সরকারের দ্বারা মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি প্রকল্পের জন্য মোট ৫৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা আরো বলেন, খুলনা থেকে কলকাতা রেল পথে বন্ধন এক্সপ্রেস চালু হওয়ার পর অনেকে বরিশাল এক্সপ্রেস চালু করার কথা বলেছিলেন। সেই বিষয়টিও আমাদের চিন্তায় রয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন- বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুস, বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এর নাতী ও শেরে বাংলা ন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ফাইজুল হক রাজু।
এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার (খুলনা) রাজীব রায়না, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো: মোশারেফ হোসেন, বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আজাদ মিয়া, বরিশাল জেলা প্রশাসক মো: হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
আলোচনা পর্বশেষে মাসুদা খানম ইমার হাতে চেক তুলে দেয়ার মধ্যে দিয়ে চেক প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে বরিশাল বিভাগের ১২০ জন শিক্ষার্থীদের হাতে বৃত্তির চেক তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। এর মধ্যে ¯œাতক পর্যায়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের ৫০ হাজার টাকা এবং মাধমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ২০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে সূচনা হয় বৃত্তিপ্রদান অনুষ্ঠানের। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে দুরন্ত সঙ্গীত একাডেমির শিল্পিরা।
এদিকে দুপুরে বিমান যোগে রহমতপুরে বরিশাল বিমানবন্দরে এসে পৌছান বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা। একই বিমানে বরিশালে আসেন বিসিসি’র নব নির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। বিমান থেকে নামার পরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাষ্ট্রদূতকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান মেয়র সাদিক।