5:58 pm , September 3, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দেশব্যাপী গরিব দুঃস্থদের কাছে দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি কার্যক্রম গতকাল পর্যন্ত শুরু করা যায়নি দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায়। খাদ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, মাসের প্রথম দুদিন সরকারি ছুটি থাকায় ডিলাররা ব্যাংকে টাকা জমা দিতে না পারায় এ বিপত্তি ঘটেছে। তবে গতকাল প্রথম কর্ম দিবসেও কতজন ডিলার টাকা জমা দিয়ে চাল উত্তোলন করেছেন তা বলতে পারেননি খাদ্য বিভাগের জেলা ও আঞ্চলিক দপ্তরগুলো। মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার আলোকে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত বরাদ্দপত্র সব জেলা-উপজেলা খাদ্য দপ্তরে গত মাসের শেষভাগে পৌঁছলেও ডিলারদের বরাদ্দপত্র গতমাসের শেষ কর্মদিবসেও না পৌঁছায় সংকট বেড়েছে।
তবে গত বছরের মত এবারও সরকার দেশের হতদরিদ্র ও দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য এ চাল বিক্রির কার্যক্রম শুরু করলেও এজন্য নতুন করে কোন তালিকা প্রণয়ন হয়নি। ফলে গতবছর সুবিধাভোগীদের মধ্যে যে বিপুল সংখ্যক ‘রাজনৈতিক সুবিধাবাদী’ ও দরিদ্র সীমার ওপরে বসবাসকারী এ চাল পেয়েছিলেন, তারা এবারো একই সুবিধা পাচ্ছেন।
দুই মাসের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ফলে লাগামহীন চালের বাজারে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হতে পারে বলে মনে করছেন সরকারি নীতি নির্ধারক মহল। তবে জেলা-উপজেলা খাদ্য দপ্তর থেকে বরাদ্দপত্র ইস্যুর পরে টাকা জমা দিয়ে গুদাম থেকে ছাড় করে উপকারভোগীদের হাতে এসব চাল পৌঁছতে আরো অন্তত ৩-৪ দিন সময় লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
গত কয়েকটি বছরের মত এবারও ভাদ্র-আশ্বিনে গ্রামেগঞ্জের কিছুটা আকাল চলছে। ফলে এ সময়ে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির সরকারি এ সিদ্ধান্ত যথেষ্ঠ ইতিবাচক হতে পারে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। তবে বাজার পর্যবেক্ষকদের মতে এ কার্যক্রম সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে আগষ্ট থেকে তিন মাসের জন্য চালু রাখলে তা গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলত।
চলতি বছর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ৪২টি উপজেলার প্রায় ৪শ’ ইউনিয়নের ৪ লাখ ৮০ হাজার ২৭৮জন নারী-পুরুষ ১০ টাকা কেজি দরে দুমাস চাল কেনার সুযোগ পাবেন। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির প্রস্তাবনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে কমিটি যাচাই-বাছাই করে এ তালিকা প্রস্তুত করেছে বলে খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে বলা হয়েছে। এ তালিকা অনুযায়ী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিমাসে ১৪ হাজার ৫শ’ টন করে চাল দশ টাকা কেজি দলে বিক্রি হবে বলে জানা গেছে।
বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলায় এসব চাল বিক্রির লক্ষ্যে ইতোপূর্বেই ৯৬৩ জন ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। এসব ডিলার ১৫% করে কমিশন লাভ করবেন। যদিও পরিবহন ব্যয় ও ঘাটতি বাদ দিলে তাদের ১০% কমিশনও থাকছেনা বলে তা ২৫%-এ বৃদ্ধির দাবী রয়েছে। ফলে এবারও অনেক ডিলারই এ চাল উত্তলন থেকে বিরত থাকার আশংকা রয়েছে। এতে করে এবারো অনেক উপকারভোগী সময়মত হৃাসকৃত মূল্যের চাল পাওয়া নিয়ে শংকা রয়েছে। গতবছরও দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ২শ’ ডিলার এ চাল উত্তোলন না করায় উপকারভোগীদের যথেষ্ঠ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
১০ টাকা কেজি দরে এ চাল বিক্রির লক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার সরকারি গুদামগুলোতে পর্যাপ্ত চাল মজুদ রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত এ অঞ্চলে মজুদের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার টনের মত। পাশাপাশি চলতি মাসে ও আগামী মাসে আরো বিপুল পরিমাণ চাল এ অঞ্চলের সরকারি খাদ্য গুদামগুলোতে আসবে বলেও জানিয়েছেন দায়িত্বশীল মহল।