5:56 pm , September 3, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই মামলায় বিবাদী হওয়ায় দুইজনই বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন। উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের হানুয়া এলাকার সুমা আক্তার (৩০) বাদী হয়ে ২৮ আগস্ট হানুয়া দাখিল মাদরাসার সহকারি শিক্ষক ইকবাল হাওলাদার (৪৫) এবং তার চাচাতো ভাই দুলাল হাওলাদার (৬৪) কে বিবাদী করে মামলাটি উজিরপুর থানায় দায়ের করেন। ওই দিনই উজিরপুর থানা পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক তাদের জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৭ আগস্ট রাতে ফুফু মাহামুদা বেগমের বাসার বারান্দায় ঘুমাচ্ছিলেন সুমা আক্তার। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বসত ঘরের পার্শ্ববর্তী একটি বাগানে নিয়ে দুলাল হাওলাদারের সহযোগিতায় ইকবাল হাওলাদার তাকে ধর্ষন করে। এরপর ডাকচিৎকার দিলে সাক্ষীরা সুমাকে উদ্ধার করে বলে এজাহারে বলা হয়। পরেরদিনই মামলাটি দায়ের করা হলে বিবাদীদের সাথে সাথেই গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ।
তবে ইকবাল হাওলাদারের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষক ইকবাল হাওলাদারের সাথে মামলার সাক্ষী মাহামুদা বেগম ও তার স্বামী জাহাঙ্গীর ফকিরের জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এই চক্রটি ইতিপূর্বে ইকবাল হাওলাদারের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের একটি মামলাও দায়ের করেছিলেন। যে মামলায় এতদিন জামিনে ছিলেন ইকবাল। শিক্ষক ইকবাল হাওলাদারের জমিতে দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করছিল জাহাঙ্গীর ফকিরের পরিবার। বেশ কয়েক বছর পর তাদের সেই জমি থেকে চলে যেতে বলা হলেও তারা সেখান থেকে যায়নি। এরপর মীমাংসার মাধ্যমে ইকবাল হাওলাদার তাদের ৫ শতাংশ জমি দিতে রাজি হয়। কিন্তু তারা পুরো জমিটাই দাবী করলে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন মামলা করা হয় ইকবাল হাওলাদারের বিরুদ্ধে। মামলার বাদী সুমা আক্তারের একাধিক বিবাহ রয়েছে। সর্বশেষ সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় সানি খান নামের এক ব্যক্তির সাথে। ইকবাল হাওলাদারের চাচা মন্নান মাস্টার জানান, জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের হয়রানী করে আসছিল জাহাঙ্গীর ফকির ও তার লোকজন। সর্বশেষ মিথ্যা একটি ধর্ষন মামলা দেয়া হয় ইকবালের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে মামলার বাদী সুমা আক্তারকে কল করা হলে ফোনটি রিসিভ করেন মামলার ১নং সাক্ষী বাদীর ফুফু মাহামুদা বেগম। তিনি জানান, তার ভাতিজিকে অভিযুক্তরা ধর্ষন করে পালিয়ে গেলে তারা থানায় অভিযোগ করেন এবং অভিযুক্তদের সাথে ১ একর ৩২ শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘ দিনের শত্রুতার কথাও স্বীকার করেন। পূর্ব শত্রুতার বিরোধে এই মামলা কিনা জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।
বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা: একে এম নাজিমুল হক এই প্রতিবেদককে বলেন, ভিকটিম যদি স্বামীর সাথে যৌন সম্পর্কের পরে অন্যের বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগ করে তাহলে আমাদের পরীক্ষা নিরীক্ষায় তা বেড়িয়ে আসবে। অতএব বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি আগের চেয়ে অনেক উন্নত হওয়ায় সংশয়ের অবকাশ নেই। এছাড়া সর্বশেষ ডিএনএ টেস্ট তো রয়েছেই। সত্য হলেও বের হবে আর মিথ্যা হলেও প্রকাশ্যে আসবে।
উজিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিশির কুমার পাল বলেন, জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধ তাদের মধ্যে আছে জেনেই অভিযোগ কারীকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদের পরও তিনি ধর্ষনের অভিযোগ করেন। প্রাথমিক তদন্তের সময়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আমিসহ একজন পরিদর্শক বাদীর ঘর এবং দেখিয়ে দেয়া ধর্ষনের স্থান পরিদর্শন করি ও বাদীর কাছ থেকে কিছু আলামত জব্দ করি যা ডিএনএ পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য আমাদের প্রয়োজন। সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে পরবর্তী চার্জশীট দেয়া হবে এবং এতে যদি বিবাদীরা দোষী না হয় তাহলে বাদী সুমা অক্তার ও তার আত্মীয়দের বিরুদ্ধে অইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।