6:20 pm , August 31, 2018
রুবেল খান ॥ বছর না ঘুরতেই ফের চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে নগরীর সড়ক। শহরের প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ন থেকে শুরু করে এমন কোন সড়ক নেই যেখানে সৃষ্টি হয়নি খানাখন্দ। রাস্তার কারপেটিং এবং গুড়া পাথর উঠে গিয়ে মৃত্যু ফাঁদ তৈরী হয়েছে সড়ক গুলো। তার মধ্যেই ঝুকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। ফলে প্রতিদিনই ঘটছে টুকিটাকি দুর্ঘটনা। তবে কবে নাগাদ সড়কের মরণ ফাঁদ থেকে রক্ষা পাবে নগরবাসি তার উত্তর আপাতত জানা নেই নগর কর্তৃপক্ষের। তাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র অপেক্ষাতেই থাকতে হচ্ছে নগরবাসিকে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম দিকেই নগরীর গুরুত্বপূর্ন প্রায় প্রতিটি সড়কের সংস্কার এবং পুনঃ মেরামত কাজ হয়েছে। বিশেষ করে নগরীর সদর রোড, ফজলুল হক এভিনিউ, বান্দ রোড, বগুরা রোড, হাসপাতাল রোড এবং বিএম কলেজ সড়ক সংস্কারের জন্য কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নগরীর আভ্যন্তরিন সড়ক গুলোতেও উন্নয়নের ছোয়া লাগে। সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচনের পূর্বে উন্নয়নের জোয়ারে চাকচিক্যতা ফিরে আসে নগরীর প্রতিটি সড়কে। যানবাহন চলাচলে নির্বিঘœতার পাশাপাশি কমে যায় ঝুকিপূর্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু উন্নয়নের জোয়ারে সৃষ্টি হওয়া সেই চাকচিক্যতা হারিয়ে গেছে মাত্র কয়েক মাসেই। বছর না ঘুরতেই পূর্বের অবস্থানে ফিরে এসেছে নগরীর প্রতিটি সড়ক।
সরেজমিনে দেখাগেছে, নগরীর মধ্যে সব থেকে জনগুরুত্বপূর্ন সড়ক বিএম কলেজ সড়ক এবং বান্দ রোড। এই সড়ক দুটি থেকে চলাচল করে ভাড়ি যানবাহন। সিএন্ডবি সড়ক হয়ে পোর্ট রোডে প্রবেশ করছে অধিক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাক। আবার বিএম কলেজ সড়ক থেকে চলাচল করছে যাত্রীবাহী বাস। নতুন বাজার, হাসপাতাল রোড, বগুরা রোড, সদর রোড এবং ফজলুল হক এভিনিউ, কাউনিয়া প্রধান সড়ক, স্ব রোডও কম গুরুত্বপূর্ন নয়। ব্যস্ততম এই রাস্তাগুলোতে প্রতিদিন চলাচল করছে হাজার হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। সড়ক গুলো ভেঙে বড় বড় গর্ত আর ইট-পাথরের সুরকি উঠে যাওয়ায় সড়ক গুলো এখন পুরোপুরি ঝুকিপূর্ন। গতিরোধের পাশেই বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। অপর পাশ থেকে গতিরোধক অতিক্রম করতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে গর্তের মধ্যে। ঘটছে দুর্ঘটনা। আহত হচ্ছে যাত্রী কিংবা যানবাহনের আরোহীরা। এমনকি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে যানবাহনও। বিশেষ করে জনগুরুত্বপূর্ন বান্দ রোডে শেবাচিম হাসপাতালের পশ্চিম প্রান্তে এবং আমতলার মোড়ের মধ্যবর্তি সড়কের মোড়টি বড় ধরনের মরণ ফাঁদ। যেখানে বড় বড় গর্তের কারনে প্রতিদিনিই একটা না একটা দুর্ঘটনা ঘটছে। হঠাৎ যাত্রী নিয়ে রাস্তার মধ্যে উল্টে যাচ্ছে থ্রি-হুইলার কিংবা ইজিবাইক। এতে যাত্রীদের আহত হওয়া ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে যানবাহন। হাসপাতালের সামনে থেকে লঞ্চ ঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কের মধ্যে এমন কয়েকশ গর্ত রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ সড়ক নির্মান কাজের মান নিয়ে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম এবং নগর ভবনের দায়িত্বরত প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির দায় চাপাচ্ছেন তারা। তাদের কারনেই বছর না ঘুরতেই প্রতিটি সড়কই পূর্বের অবস্থানে ফিরে গেছে বলে দাবী নগরবাসির। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্নটা। বিসিসি’র প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছেন, এ বছর লাগামহিন বৃষ্টি হয়েছে। যা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারনে সড়কের এমন পরিস্থিতি হয়েছে।
প্রকৌশল বিভাগ সূত্র আরো জানায়, সড়ক সংস্কার সহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের টেন্ডার হয়ে আছে। কিন্তু আবহাওয়া পরিস্থিতি’র কারনে তা শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। অবশ্য ঈদ উপলক্ষে যাতায়াত ব্যবস্থা নিরাপদ করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ন সড়ক গুলোর ক্ষতিগ্রস্থ স্থানগুলোতে ইটের সুরকি ফেলে প্রাথমিক প্রটেকশন দেয়া হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষে পুর্নাঙ্গ কাজ শুরু হবে।
অবশ্য বিসিসি’র কয়েকটি দায়িত্বশিল সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান মেয়র’র মেয়াদ আছে মাত্র এক মাসের মত। তাই শেষ মুহুর্তে নতুন করে কোন প্রকল্প গ্রহন করছে না নগর কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে উপরের দিক নির্দেশনাও রয়েছে। তাই আপাতত ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক গুলোর পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে সঠিক কোন সমাধান কারোর জানা নেই। তবে নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহনের পর ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলো সংস্কার কাজ শুরু হবে বলে আশাবাদী বিসিসি’র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আর তাই সিটি কর্পোরেশনের নতুন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পর সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র প্রথম চ্যালেঞ্চ হয়ে দাড়াবে নগরীর সড়ক সংস্কারের বিষয়টি। নয়তো প্রতিটি সড়ক মৃত্যুকুপে পরিনত হবে বলে মনে করছেন নগরবাসি।