6:52 pm , August 24, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীতে পদবঞ্চিত ও পদপ্রাপ্ত ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের শেবাচিম হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে নগরীর সদর রোডে জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা কমিটি কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি ঘোষনার দাবীতে বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ১১টায় সদর রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্র সমাবেশ ডাক দেয়। সে অনুযায়ী পদবঞ্চিত জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম সুজন, জেলা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করা সোহেল রাঢ়ী ও পদবঞ্চিত রফিকুল ইসলাম টিপু’র নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয়ে ছাত্র সমাবেশ শুরু হয়। তাদের ছাত্র সমাবেশে একাত্বতা প্রকাশ করে মহানগর ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। সেই সাথে ছাত্র সমাবেশে যোগ দেয় বরিশাল জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। ওই সমাবেশে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজীব আহসানের বিরুদ্ধে বক্তব্যে’র পাশাপাশি তাকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করা হয়। একই সাথে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের বিতর্কিত কমিটি বাতিলের দাবী জানান তারা।
অপরদিকে পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী বঞ্চিতদের সমাবেশ চলাকালে মিছিল সহকারে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে ছাত্রদল জেলা ও মহানগরের নতুন কমিটির নেতারা। এ সময় বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা তাদের বাঁধা দেয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডার এক পর্যায় ধারালো এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তারা। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। এসময় থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে লাঠি চার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেয়। একই সাথে দা সহ পদ বঞ্চিত ছাত্রদল নেতা বিএইচ রিমনকে আটক করে পুলিশ।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম সুজন এবং পদত্যাগ করা জেলা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রাঢ়ী বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি প্রভাবিত হয়েছে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের বিতর্কিত কমিটি ঘোষনা করেছে। এই কমিটিতে ত্যাগীদের বঞ্চিত করে নিস্ক্রিয়দের উপরের পদে দায়িত্ব দিয়েছে।
তারা বলেন, মহানগর কমিটি নিয়ে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। তবে আমরা জেলা ছাত্রদলের বিতর্কিত ওই কমিটি বাতিলের দাবীতে কমিটি ঘোষনার পর থেকেই দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি শান্তিপূর্নভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে দলীয় কার্যালয়ে ছাত্র সমাবেশ কর্মসূচি শুরু করি। এতে মহানগর ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরাও একাত্বতা প্রকাশ করে।
বঞ্চিত ওই দুই নেতা বলেন, মহানগর ছাত্রদলের নতুন কমিটির নেতারা আমাদের কাছে অনুরোধ করেছে পার্টি অফিসে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি পালনের জন্য। তারা আমাদের বলেছে জেলা কমিটি’র সাথে তাদের কোন সর্ম্পৃক্ততা নেই। এজন্য মহানগর কমিটির নেতা-কর্মীদের আমরা দলীয় কার্যালয়ে কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেই। তবে দলীয় কার্যালয় এখনো আমরা পদ বঞ্চিতদের দখলে রয়েছে।
তারা অভিযোগ করেন, মহানগর ছাত্রদল আমাদের ছাত্র সমাবেশের মধ্যেই দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় তাদের সাথে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুল আলম মিঠুও উপস্থিত ছিলো। সে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ কালে আমাদের ছাত্র সমাবেশে স্বশস্ত্র হামলা করে। এতে আমাদের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। এসময় আমরা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে মহানগর ছাত্রদলের নব-গঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, বরিশাল জেলা ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে ঝামেলা থাকলেও মহানগর কমিটি নিয়ে কোন ঝামেলা নেই। জেলা কমিটিতে কামরুল আহসান নামের যাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তাকে নিয়েই মুলত সকল বিতর্ক। তার পরিবর্তে সাইফুল ইসলাম সুজনকে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক করা হলে এখানে কোন বিশৃঙ্খলা বা বিতর্ক হতো না।
হুমায়ুন কবির বলেন, কমিটি ঘোষনার পর থেকেই ছাত্রদলের বঞ্চিতরা দলীয় কার্যালয় দখল করে রাখে। কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা না হয় সে জন্য আমরা দলীয় কার্যালয়ে যাইনি। তবে গতকাল ২৪ আগস্ট আমাদের মহানগর নেতা-কর্মীদের দলীয় কার্যালয়ে যাবার কথা ছিলো। সে অনুযায়ী আমরা সকাল থেকেই দলীয় কার্যালয়ে যাবার জন্য প্রস্তুতি নেই। পাশাপাশি সকালে সদর রোড সহ আশাপাশের এলাকায় মহানগর কমিটি ঘোষনায় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেছি। এসময় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুল আলম মিঠুও উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, দলীয় কার্যালয়ে পদ-বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা সমাবেশ করায় আমরা তাদের কর্মসূচি শেষ করার জন্য এক ঘন্টা সময় দিয়েছিলাম। তারাই আমাদের বলেছে তাদের প্রোগ্রাম শেষ হতে এক ঘন্টা সময় লাগবে। কিন্তু দেড় ঘন্টা পরেও ওরা কর্মসূচি শেষ না করে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে যেতে বাঁধা সৃষ্টি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেলা সোয়া ১২টার দিকে আমরা মহানগর ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের নিয়ে সু-শৃঙ্খলভাবে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করি। এসময় কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতা-কর্মীরা আমাদের বাঁধা এমনকি হামলার চেষ্টা করে। আমরা শুধুমাত্র তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি মাত্র। তাদের কারোর উপর হামলা করা হয়নি দাবী করে হুমায়ুন কবির বলেন, ওরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর স্বশস্ত্র হামলার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ রিমন নামের ওদের এক সহযোগিকে দা সহ গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে আমরা দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে কিছু সময় অবস্থান করে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আকরামুল হক এবং বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরওয়ারকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করে চলে এসেছি।
ঘটনাস্থলে থাকা কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে তাদের নিজেদের দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে ওই দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি এবং সংঘর্ষ হয়। আমরা সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনি। তাছাড়া ঘটনাস্থল হতে দা সহ রিমন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে এই ঘটনার পরে বিকালে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ে পৃথক সভা করেছে মহানগর ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। তারাও নিস্ক্রিয়দের নিয়ে সদ্য ঘোষিত মহানগর ছাত্রদলের কমিটি বাতিলের দাবী এবং ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিকে বরিশালে অবাঞ্চিত ঘোষনা করেন। পুলিশেল শতর্ক অবস্থানের কারনে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।