শেবাচিম হাসপাতালে ফের ওষুধ চুরির আলামত ॥ চলছে তদন্ত শেবাচিম হাসপাতালে ফের ওষুধ চুরির আলামত ॥ চলছে তদন্ত - ajkerparibartan.com
শেবাচিম হাসপাতালে ফের ওষুধ চুরির আলামত ॥ চলছে তদন্ত

6:38 pm , August 19, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের উন্নত চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই প্রতিষ্ঠানটিতে অসহায় দুঃস্থ থেকে শুরুর করে বিত্তশালীদের চিকিৎসা সেবায় নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পুরনো। তবে নানান অনিয়মের মাঝে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত ওষুধ কালোবাজারে বিক্রির বিষয়টি আড়ালে থেকে যাচ্ছে। একাধিকবার ওষুধ চুরির ঘটনা ধরা হাতেনাতে ধরা পড়লেও তার সবই ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। এমনকি ওষুধ চুরি কিংবা সাব স্টোর থেকে ওষুধ গায়েব হয়ে যাওয়ার নেপথ্যের কাহিনি মেডিকেল প্রশাসনের নজরে আসলেও সে বিষয়ে নেয়া হয়নি কোন কার্যকর ব্যবস্থা।
এমন পরিস্থিতিতে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেলের নতুন পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন গত ২৫ জুলাই, ১৮ইং তারিখে শেবাচিমহা-বরি/২০১৮/৩৪১১ স্বারকে ভেরিভেকেশন ও কন্ডোমেশন বোর্ডের আওতায় সকল ওয়ার্ড, ওটি ও স্টোর পর্যবেক্ষন করার জন্য আদেশ জারি করেন। উক্ত আদেশ বাস্তবায়ণ করতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে রয়েছেন শেবাচিমহা সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এইচ. এম. সাইফুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (অর্থ ও ভান্ডার) ডা. মো. ইউনুস আলী, শিশু বর্হিবিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মাহমুদ হাসান, উচ্চমান সহকারী সৈয়দ মো. জাকির হোসেন, অফিস সহকারী মো. ইব্রাহিম খলিল ভূঁইয়া। গত ১আগষ্ট থেকে ৩১ আগষ্টের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। সেই সাথে গত ২৬ জুলাই এ কমিটিকে সহায়তার জন্য মেডিকেলের সকল বিভাগীয় প্রধানকে অনুরোধ করে আদেশ জারী করেন পরিচালক। সে অনুযায়ী গত ১ আগস্ট থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত মেডিকেলের ওটিগুলো পর্যবেক্ষন করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটি। সেখানেই তাদের চোখে ধরা পড়ে যায় বেশ কিছু অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র।
এদিকে গত ৬ আগস্ট থেকে ৮আগস্ট তারিখ পর্যন্ত তিন দিন মেডিসিন সাব-স্টোর পর্যবেক্ষন করে কমিটি’র সদস্যরা। এসময় সাব-স্টোরে ব্যালেন্স ও স্টক লেজারে অসামঞ্জ্যতা, অনিয়ম, হিসাবে গরমিল, অতিরিক্ত ওষুধ সহ নানা অনিয়ম দেখতে পান তারা। কিন্তু সাব-স্টোরের দায়িত্বে থাকা ফার্মাসিস্ট নির্মল কুমার ওষুধ মজুদের ব্যাপারে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি কমিটিকে। আর তাই সাব স্টোরে পাওয়া অতিরিক্ত ওষুধ জব্দ করেন তারা।
সূত্র জানায়, মেডিসিন সাব স্টোরটি সার্বক্ষনিক মনিটরিং এর জন্য ২০১৫ সালে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়। ফার্মাসিস্ট নির্মল কুমার স্টোরের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই কৌশলে সিসি ক্যামেরা অচল করে রাখেন। সিসি ক্যামেরা অচল বিষয়ে মেডিকেল কর্তৃপক্ষের নিকট কোন লিখিত অভিযোগ দাখিলও করা হয়নি। নিজের সুবিধার্থে পূর্বে অভিযুক্ত দুই ফার্মাসিস্ট শিশির ও লিটনকে সু-কৌশলে সরিয়ে নির্মল কুমার নিজের মেয়ে নিশি হালদারকে স্টোরের কাজে ব্যবহার করতেন। বিষয়টি বর্তমান পরিচালকের নজরে আসলে তিনি নির্মল কুমারের মেয়েকে সাব স্টোর থেকে বের করে দেন। তবে তার পরেও থেমে নেই নির্মলের ওষুধ পাচার সিন্ডিকেট। স্ত্রী ও মেয়েকে সাব স্টোরে নিষিদ্ধ করায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভিন্ন পন্থায় ওষুধ বাইর করছেন তিনি।
সূত্র আরো জানায়, নির্মলের স্ত্রী ও মেয়ে সাব-স্টোরে দায়িত্ব পালনের ছলে সরকারী অতিগুরুত্বপূর্ন থ্রি-পার্সেন্ট স্যালাইন নিজের ভ্যানিটি ব্যাগে করে বাহিরের ফার্মেসিতে পাচার করে দিতেন। যার ফলে হাসপাতালের রোগীরা ওই ওষুধ সরকারি ভাবে না পেয়ে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে বাইরের ফার্মেসী দিয়ে কিনে আনতে হচ্ছে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগের একটি দায়িত্বশিল সূত্র জানিয়েছে, তৎকালীন পরিচালক ডা. মু. কামরুল হাসান সেলিম ওষুধ চুরি ও অপব্যবহার রোধে স্টোর, সাব-স্টোর, ডিস্পেন্সারীকে কম্পিউটার পদ্ধতির আওতায় এনে ডিজিটাল হিসাব অন্তুর্ভূক্তকরনের নির্দেশ দেন। কিন্তু সাবেক ও পরিচালকের বিদায়ের পর পরই নিজের মতো করে বাহির থেকে ইন্টার্ন করতে আসা শিক্ষার্থীদের দিয়ে কম্পিউটারের হিসাবের ইনপুট ও আউটপুট কাজ করাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের বিষয়ে আলাপকালে নির্মল কুমার বলেন, এ বিয়য়ে আমি কিছু বলতে পারব না। যারা তদন্ত করতেছে তারা বলতে পারবে। আর ওইদিন আমি এখানে উপস্থিতও ছিলাম না। আমার বাসায় কিছু কাগজপত্র ছিল সেগুলো আনতে আমি তখন বাসায় গিয়েছিলাম।
মেয়েকে দিয়ে কাজ করানো ও ঔষধ পাচারের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা তো পুরোন কথা। আমার মেয়েকে দিয়ে কাজ করিয়েছি কিন্তু মেডিকেল কর্তৃপক্ষ বেতন দেয়নী। তাই তাকে দিয়ে এখন আর কাজ করাই না। তবে ওষুধ পাচারের অভিযোগের বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন বলেন, সাব-স্টোরে অতিরিক্ত ওষুধ পাওয়া তথ্য সঠিক। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে। তাছাড়া তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমার কিছু বলাও ঠিক হবে না।
তিনি বলেন, অভিযান এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম পেলে সে জন্য তো থেমে থাকা যাবে না। তদন্ত শেষে আপনাদের সাথে নিয়েই বিষয়টি প্রকাশ করা হবে। এসব বিষয়ে ব্যাবস্থা গ্রহন না করলে হাসপাতাল চালানো যাবে না জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ হাসপাতালটি দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের প্রান। এটাকে আমাদের সকলের বাচিয়ে রাখতে হবে। তাই কিছু কিছু অনিয়োম রয়েছে, সে গুলোকে দূর করার চেষ্টা চলছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT