দুই স্বাস্থ্য কর্মীর দেয়া টিকার অতিরিক্ত ডোজে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে দুই মাস বয়সী শিশু কন্যা দুই স্বাস্থ্য কর্মীর দেয়া টিকার অতিরিক্ত ডোজে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে দুই মাস বয়সী শিশু কন্যা - ajkerparibartan.com
দুই স্বাস্থ্য কর্মীর দেয়া টিকার অতিরিক্ত ডোজে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে দুই মাস বয়সী শিশু কন্যা

1:00 am , August 16, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিসিসি’র দুই স্বাস্থ্যকর্মীর পারিবারিক ক্ষোভের শিকার হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে রয়েছে মাত্র দুই মাস বয়সী এক শিশু কন্যা। নিজের সন্তান অসুস্থ, তাই রাগের মাথায় ওই শিশুর ২৪ দিন বয়সের সময় অতিরিক্ত (ওভারডোজ) টিকা দিয়েছেন বিসিসি’র দুই স্বাস্থ্য কর্মী শাহানাজ পারভীন ও তুহিনা আক্তার। দায়িত্বের চরম অবহেলা করে নির্দিষ্ট সময়ের আগে একদিনেই তারা গত ৯ আগস্ট নগরীর আমানতগঞ্জ রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল কেন্দ্রে অতিরিক্ত ৫ ডোজ টিকা ওই শিশুর শরীরে পুশ করে। এতে মৃত্যুর মুখে রয়েছে ফুটফুটে শিশু কন্যা অথৈ রায় মৃত্তিকা। অতিরিক্ত টিকা দেয়ায় বর্তমানে জ্বর, খিচুনি, বমি, ডায়রিয়া সহ নানা শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ওই শিশু কন্যা বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিশু বিশেষজ্ঞ এমআর তালুকদার মুজিব’র অধীনে রয়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় রেখে তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসক। ভুক্তভোগী শিশু মৃত্তিকা নগরীর দপ্তরখানা এলাকার বাসিন্দা নরসুন্দর সুজন চন্দ্র শীল’র কন্যা।
এদিকে চিকিৎসক জানিয়েছেন, এই ভুলের কারনে শিশু কন্যা যে পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। তা কাটিয়ে উঠতে পারলেও বড় ধরনের শারিরিক ক্ষতির শিকার হওয়ার মুখে রয়েছে সে। তাই সন্তানকে হারানো কিংবা ক্ষতির আশংকায় বাবা সুজন দুই স্বাস্থ্য কর্মীর বিরুদ্ধে নগর ভবনের স্বাস্থ্য শাখা, সিভিল সার্জন ও থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। দায়িত্বে অবহেলাকারী দুই স্বাস্থ্যকর্মীর একজন ক্ষমতাসীন দলের নেতার স্বজন হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়ার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। উল্টো টাকা নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার প্রলোভন দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ সুজন চন্দ্র শীল’র।
তিনি লিখিত অভিযোগে জানান, গত ১৬ জুলাই জন্ম নেয় কন্যা অথৈ রায় মৃত্তিকা। শিশুর ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিভিন্ন রোগের টিকাদানের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীতে (ইপিআই) গত ২৬ জুলাই রেজিস্ট্রেশন করেন তিনি। যার নং ৩৫১। শিশুর টিকা কেন্দ্র আমানতগঞ্জ রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল। ইপিআই টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নবজাতক শিশুকে জন্মের পর থেকে ১৫ মাস বয়স পর্যন্ত বিসিজি, পেন্টা (ডিপিটি হেপ-বি, হিব), ওপিভি, পিসিভি, আইপিভি ও এমআর’র (হাম ও রুবেলা) ৬ টিকা পর্যায়ক্রমে ও নির্দিষ্ট সময়ে সর্বোচ্চ তিনটি ডোজ দিতে হবে। যা ইপিআই টিকাদান কার্ডে নির্দিষ্ট দিনক্ষন উল্লেখ করা হয়।
সুজন চন্দ্র শীল কন্যার জন্মের ১০ দিন পর ইপিআই টিকাদানের কার্ড করান করে ৯ আগস্ট ২৪ দি বয়সে প্রথম টিকা দিতে আমানতগঞ্জ রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল কেন্দ্রে যায়। সেখানে সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মী শাহানাজ পারভীন ও তুহিনা আক্তার কন্যার ৬ টির মধ্যে ৫ টি টিকার প্রথম ডোজ একই সাথে দিয়ে দেন। যা কিনা দেয়ার কার্ডে উল্লেখিত নির্ধারিত সময় ছিলো ২৭ আগস্ট। ওই সময় তাদের বাধা দেয়া হলে তারা উল্টো তার উপর (সুজন চন্দ্র শীল) উপর চড়াও হয়। নিয়ম অনুযায়ী না দিয়ে অতিরিক্ত দেয়ায় ওইদিন রাতেই নানা শারিরেক সমস্যায় আক্রান্ত হয় কন্যা মৃত্তিকা। জ্বর, খিচুনি, বমি, ডায়রিয়া সহ নানা শারীরিক সমস্যা শুরু হয়। এর পর বিষয়টি নিয়ে জানাজানি হলে ১১ আগস্ট বিসিসি থেকে লোক আসে তার বাসায়।
সুজন চন্দ্র শীল জানান, কন্যার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় ১২ আগস্ট তিনি শিশু বিশেষজ্ঞ এমআর তালুকদার মুজিব’র সাথে যোগাযোগ করেন। পরীক্ষা করে তিনি জানান, সময়ের আগে ওভার ডোজ টিকা শিশুর শরীর গ্রহন করতে পারেনি। তাই তার শারীরিক সমস্যা শুরু হয়েছে। যদিও সে এই ধাক্কা সামলে নেয়, ভবিষ্যতে এই ভুলের কারনে শিশুটির স্থায়ী শারীরিক ক্ষতির মুখে রয়েছে সে। পরের দিন রেড ক্রিসেন্ট কেন্দ্রে গিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। তখন ভুল স্বীকার করে দুই স্বাস্থ্য কর্মি। তাদের মধ্যে শাহানাজ পারভিন বলেন, বাসায় তার সন্তান জ্বরে আক্রান্ত থাকায় এই ভুল করেছেন তিনি। এ সময় হৈ-চৈ করলে ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক ওই স্বাস্থ্য কর্মীর স্বামীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া চেষ্টা করেন। তাছাড়া তারা বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়া জন্য টাকা দেয়ার প্রলোভনও দেয়। এতে বাধ্য হয়ে নগর ভভনের স্বাস্থ্য শাখায় ও সিভিল সার্জন’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন দেয়া হয় বলে জানান সুজন। এই বিষয়ে গতকাল থানায়ও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে বিসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্ত ডা. মতিয়ার রহমান বলেন, এমন ভুল গুরুত্বর। যে এমন ভুল করেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT