5:55 pm , August 6, 2018

রুবেল খান ॥ বিদায়ের প্রহর গুনছেন বর্তমান মেয়র মো. আহসান হাবিব কামাল। আগামী ২৩ অক্টোবর নগর ভবনে তিনি শেষ কর্মদিবস পালন করবেন। হিসাব অনুযায়ী আর ২ মাস ২৫ দিন নগর পিতা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। এদিকে বিদায়ের শেষ বেলায় বিগত দিনের হিসাব নিকাশ কষছেন মেয়র আহসান হাবিব কামাল। নগরবাসী যাই বলুক মেয়র হিসেবে নিজেকে সফল বলে দাবী করছেন তিনি। নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও একজন মেয়র হিসেবে নগর উন্নয়ন সহ সার্বিক বিষয়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিতে শতভাগ সফল হয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
জানাগেছে, ২০১৩ সালের ১৫ জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বরিশাল সিটি’র সাবেক জননন্দিত মেয়র মরহুম শওকত হোসেন হিরনকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল। এর পর একই বছরের ২৩ অক্টোবর নগর পিতার দায়িত্ব গ্রহন করেন তিনি। সে হিসেবে আগামী ২৩ অক্টোবর ৫ বছর পূর্ন হবে তার।
এদিকে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার আমলে বিরোধী দলের মেয়র হওয়ায় দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই বিভিন্ন প্রতিকুলতার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে হয় তাকে। তার মধ্যেও নাগরিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে যথারিতি দায়িত্ব পালন করে চলেন তিনি। রাস্তা ও ড্রেন সংস্কার, পূনঃনির্মান, কালভার্ট নির্মান, ঐতিহ্যবাহী জেল খাল উদ্ধারে জেলা প্রশাসককে সহায়তা, মার্কেট নির্মান, বাইপাস লেন, কীর্তনখোলা তীরে ভেরী বাধ নির্মান সহ উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কাজে ভুমিকা রাখেন মেয়র আহসান হাবিব কামাল। তবে এসব কাজ করতে গিয়ে বিতর্কের মুখে পড়তে হয় তাকে। দুদকের মামলা সহ দুর্নীতির কারনে মেয়র পদ থেকে কেন বহিস্কার করা হবে না তা জানতে চেয়ে ৮ বার মন্ত্রনালয়ের নোটিশ পান আহসান হাবিব কামাল। তবে নোটিশের যথাযথ জবাব’র কারনে শেষ পর্যন্ত মেয়র হিসেবে টিকে যান তিনি। তবে তার সাথে অন্যান্য সিটি’র মেয়র হওয়া বিএনপি নেতারা বরখাস্ত হয়েছেন। মেয়র পদে থেকে সরকারের বিরুদ্ধাচারন, জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনে সম্পৃক্ততার কারনে তাদের বহিস্কার করা হলেও নিজ অবস্থান ধরে রাখেন কামাল। অবশ্য মেয়র থাকাবস্থায় আওয়ামী লীগে যোগদানের গুজবও রটে আহসান হাবিব কামাল’র বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই গুজব উড়িয়ে দেন তিনি। তাছাড়া নগর উন্নয়ন নিয়েও সমালোচনার কমতি ছিলো না। তার করা উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সরকারি দলের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে নগরবাসিও।
এদিকে শুরু থেকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৩টি পরিষদের মধ্যে তৃতীয় পরিষদের মেয়র আহসান হাবিব কামাল কোন ঠাসা হয়ে পড়েন কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে। তাদের কর্মকান্ডের কারনে নগরীর পয়নিস্কাশন থেকে শুরু করে উন্নয়ন কাজেরও ব্যাঘাত ঘটে। চলতি মেয়াদেই বকেয়া বেতন-ভাতার দাবীতে যে আন্দোলন হয়েছে তা বিগত মেয়ররদের আমলে হয়নি। বিগত মেয়র শওকত হোসেন হিরন’র আমল থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বকেয়া জমে যায়। যার মাশুল গুনতে হয় আহসান হাবিব কামালকে। আন্দোলন এবং দুর্নীতির কারনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে বাজেট বরাদ্দ কমিয়ে দেয় সরকার। তাই উন্নয়ন খাত থেকে আসা রাজস্ব দিয়েই নগর উন্নয়ন সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিতে হয়েছে মেয়র কামালকে। গেলো ঈদের একদিন আগেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিগত দিনের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাসে প্রথমবারের মত অনিয়মিত কর্মচারীদের ঈদ বোনাস দেয়ার বিধান চালু করেছেন বর্তমান মেয়র। মোট কথা সকল চড়াই উৎরাই পার করে পাঁচ বছর অতিবাহিত করতে যাচ্ছেন মেয়র আহসান হাবিব কামাল। অবশ্য সদ্য সমাপ্ত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি’র হয়ে পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন আহসান হাবিব কামাল। কিন্তু দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচনেও আসেননি তিনি। যদিও ৩০ জুলাই’র নির্বাচনে বিএনপি সহ ৫ দলের প্রার্থীকে পরাজিত করে নগর পিতা নির্বাচিত হয়েছেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
অপরদিকে চলতি পরিষদের মেয়র’র দায়িত্ব পালনের শেষ পর্যায়ে এসে পৌছেছেন আহসান হাবিব কামাল। শেষ মহুর্তে কোন সমলোচনার নয়, বরং সুনাম নিয়েই বিদায় নিতে চাচ্ছেন তিনি। তাই নগর ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন করে বকেয়া বেতন পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছেন কামাল। দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারীদের দুই মাস এবং নিয়মিত কর্মচারীদের বকেয়া এক মাসের বেতন দিতে রাজস্ব আয়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। তবে শেষ সময়ে নতুন প্রকল্প কিংবা উন্নয়ন কাজ থমকে গেছে বলে দাবী সংশ্লিষ্টদের। শেষ মুহুর্তে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিদায়ের কারনে আয়-ব্যয়ে ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে তার। তার মধ্যেও বিসিসি’র নিজস্ব আয় থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের পরিকল্পনা রয়েছে বিদায়কালিন মেয়র’র। যে কারনে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আলাপকালে বিদায়ের প্রহর গোনা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, বিরোধী দলের মেয়র হওয়ায় বরাদ্দের ঘাটতি ছিলো। তার মধ্যেও আমি যথা সম্ভব উন্নয়ন করেছি। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহন করেছি। আমি আমার অবস্থান থেকে শতভাগ শততা এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি।
আহসান হাবিব কামাল বলেন, নির্বাচনের পূর্বে আমার যে ইশতেহার ছিলো তা আমি পুরন করতে চেষ্টা করেছি। শুধু তাই নয়, যতটুকু করার কথা ছিলো তার থেকে বার্তি কাজও করেছি বরিশাল সিটিতে। তাই কে কি বলছে সে দিকে গুরুত্ব না দেয়াই ভালো। কেননা যার পক্ষ আছে তার বিপক্ষও আছে। আর বিপক্ষের লোকেরা সব সময় অপ প্রচার করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমি মনে করি একজন নির্বাচিত মেয়র হিসেবে আমি সফল এবং সার্থক।