6:02 pm , July 28, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমন সরোয়ার বলেছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর মত ভোটারবিহীন নির্বাচন করে বর্তমান সরকার প্রায় ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে যাচ্ছে। সিটি নির্বাচন সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি পূর্বাভাস। প্রধানমন্ত্রীও বলছেন সিটি নির্বাচনের জয় পরাজয়ে সরকারের কোন পরিবর্তন হয় না এবং এটা করতে গিয়ে যাতে কোন দুর্নাম না হয়। বরিশালে আমরা নির্বাচন কমিশনের কথায় আশ্বস্ত হয়েছিলাম, যে গাজীপুর ও খুলনার মতো নির্বাচন বরিশালে হবে না। বরিশালে সুষ্ঠ নির্বাচন হবে। গাজীপুর-খুলনার পর একটা বিষয়ে অবগত হলাম দলীয় সরকারের অধীনে ভোট আর সুষ্ঠ হবে না। তারপরও সিটি নির্বাচনে আমরা অনেক আশায় বুক বেধে অংশগ্রহন করেছিলাম, যে আওয়ামী লীগের মাথায় শুভবুদ্ধি হবে। গতকাল শনিবার বেলা ১২টায় নগরীর সদর রোডস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন। এসময় গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, হাইকোর্টের আদেশের পরও পুলিশ আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। নির্বাচন কমিশনারকে আমরা বলেছি। তিনি বলেছেন প্রশাসনের সাথে আলোচনা করবেন। বিধি অনুযায়ী আলোচনা নয় নির্বাচন কমিশনের আদেশে প্রশাসন কাজ করবে। তিনি বলেন, বিগত সময়ে আমরাও নির্বাচন করেছি কিন্তু কেউ বলতে পারবেনা আমাদের সময়ে দুঃশাসন হয়েছে। কিন্তু গত ২/৩ দিন যাবত সারা রাত ধরে অভিযান চলছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে নেতা-কর্মীদের। তাহলে কারা নির্বাচন পরিচালনা করবে, কারা পোলিং এজেন্ট থাকবে, আর ভোটই বা করবে কে ? তিনি বলেন, যখনই শুনেছে হাইকোর্টের আদেশ হয়েছে গ্রেপ্তার না করার জন্য। তখনই বরিশালের তিন থানায় চাঁদাবাজির তিনটি মামলা হয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৫ জনের মতো গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা শুক্রবার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে মিটিং করেছি। সেখানে যেই ক্ষমতাসীনরা দেখলো আমাদের উপস্থিতি ভালো, আমরা চলে আসার পর রাতের আধারে আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করছে। বরিশালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী আচরন বিধি মানছে না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নৌকার প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল করছে। নৌকার স্টীকার পোষ্টারে শহর ছেয়ে গেছে। মোটরসাইকেলের মহড়া চলছে, অথচ আমার পেছনে মোটরসাইকেল আসছে তাদের মানা করে দেয়া হচ্ছে। ম্যাজিষ্ট্রেট, মোবাইলটিম আওয়ামী লীগের মোটর সাইকেল মহড়া দেখে না। আমি সভা করলে তার পাশে মিছিল করছে, মাইকিং করছে। বিভিন্নভাবে তারা নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করার পরেও আমরা বিষেদগার করিনা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের চেয়ারম্যান আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ মন্ত্রী পদমর্যাদায় আছেন, যিনি বরিশালে আছেন। এমপি-মেয়রদের প্রচারনা নিষেধ কেউ কি তা মানছেন। নির্বাচন কমিশন কি দেখছেন না আমরাই দেখিয়ে দেব। বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যানদের বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন বর্ডার এলাকায় রয়েছেন, যারা নগরে ঢুকে ভোট জালিয়াতি করতে পারে। সরোয়ার বলেন, আমরা মানুষের কাছে ভোট চাইতে গেলে তারা বলে আমরা ভোট দিতে পারবো তো। আজকের এই সংশয় সন্দেহ দূর করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছিলাম। আমরাও বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বলেছিলাম ভোট সুষ্ঠু হবে। আজ মিডিয়াকেও বিভিন্ন জায়গায় নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বলবো নির্বাচনের আগে যদি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়, আর গ্রেফতার করে নির্বাচনে আমাদের অংশগ্রহন বন্ধ করা হয়, তাহলে এখান থেকে আমরা আন্দোলন সংগ্রামের ব্যবস্থা করবো। আমি আশাকরি এখনো সময় আছে সুষ্ঠু নির্বাচনের। গ্রেফতার বন্ধ ও নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা বন্ধ করা হোক। বরিশালের মানুষকে বলবো, যতো জুলুম হোক, আগ্রাসন আসুক, অত্যাচার আসুক তার বিরুদ্ধে আপনাদের মাথা উচু করে দাড়াতে হবে। আমরা আশাকরি এখনো সময় আছে নির্বাচন কমিশন বরিশালে যে দুঃশাসন চলছে, জুলুম চলছে সেগুলো বন্ধ করবে। নির্বাচনের পরিবেশ যা হোক না কেনো, বিএনপির প্রার্থী মাঠে থাকবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অন্যান্য প্রার্থীদের সাথে আলোচনা করে আমরা আগামীকাল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিবো। এদিকে সংবাদ সম্মেলন থেকে লেভেল প্লেয়েই ফিল্ড তৈরিসহ ১০ দফা দাবীতুলে ধরা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিন, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন, উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ প্রমুখ।