6:12 pm , July 27, 2018

রুবেল খান ॥ আজ শনিবার আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার প্রচারনার শেষ দিন। রাত ১২টা পর্যন্ত শেষ বারের মত প্রকাশ্যে গণসংযোগ ও ভোট চাইতে পারবেন প্রার্থীরা। তাছাড়া দলীয় প্রার্থী’র পক্ষে ভোট চাইতে আসা বিভিন্ন পর্যায়ের বহিরাগত ব্যক্তিবর্গকে নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করার জন্য নোটিশ দিয়েছে নির্বাচন অফিস। পাশাপাশি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে শান্তিপুর্ন পরিবেশ ও লেভেল প্লেইং ফিল্ড বজায় রাখতে আজ থেকে নামছে র্যাব, পুলিশ ও মোবাইল কোর্ট। তাছাড়া আগামী কাল রোববার নির্বাচনী এলাকায় বিজিবি ও জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটদের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। অবশ্য তার আগেই আজ শনিবার রাত ১২টার পর থেকে নির্বাচনী এলাকায় যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন খান এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আসন্ন ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহন। এজন্য বিগত ১০ জুলাই থেকে মেয়র, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলরদের টানা ১৯ দিন আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারনার সুযোগ দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী আজ ২৮ জুলাই শনিবার প্রচার প্রচারনার জন্য শেষ সময় পাচ্ছেন প্রার্থীরা। রাত ১২টার পরে কোন প্রার্থী প্রচার প্রচারনায় নামলে তাতে আচরণবিধি লংঘন এবং এ অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাঠ পর্যায়ে আচরণবিধি এবং নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ন রাখতে ৩০ ওয়ার্ডে ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এর সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট বিষয়টি মনিটরিং করবে। তবে তার আগেই গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকেই নগরীতে সতর্কতামুলক টহল দিতে দেখা গেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব-৮) সদস্যদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রচার প্রচারনার শেষ সময় গতকাল শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নির্বাচন প্রচার-প্রচারনা চালিয়েছেন বরিশাল সিটি নির্বাচনের ৬ মেয়র প্রার্থী। এরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনিত মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বিএনপি মনোনিত মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার, জাতীয় পার্টি মনোনিত মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনিত মেয়র প্রার্থী মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) মনোনিত মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী এবং কমিউনিস্ট পার্টি মনোনিত মেয়র প্রার্থী এ্যাড. একে আজাদ।
এদের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারনা শেষ হওয়ার একদিন পূর্বে গতকাল শনিবার নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দুই প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। সেখানে তারা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন। পাশাপাশি উৎসব মুখর পরিবেশ নষ্ট করার অপচেষ্টার অভিযোগ করেন বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
তাছাড়া নিজ এলাকা অক্সফোর্ড মিশন রোড এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন জাতীয় পার্টি মনোনিত লাঙল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। সংবাদ সম্মেলনে তিনি নির্বাচনের শেষ সময় পর্যন্ত মাঠে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পাশাপাশি বিভ্রান্তির উর্ধে থেকে লাঙল প্রতীকে ভোট দিয়ে জাতীয় পার্টিকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান তিনি।
এর পূর্বে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। ওই সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন বিএনপি’র নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী মীর্জা আব্বাস। বাকি তিন দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের পরিবেশ পরিস্থিতির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন না করলেও তারা সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। তারা নির্বাচনের পরিবেশ নেই বলে অভিযোগ করছেন।
তাছাড়া গতকাল বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেয়া ৬ দলের মনোনিত মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশনার মো. মাহবুব তালুকদার। এসময় নির্বাচনের শান্তিপূর্ন পরিবেশ এবং প্রার্থীদের মধ্যে সৌহার্দতা বজায় রাখার অঙ্গিকার করেন মেয়র প্রার্থীরা। পাশাপাশি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে আসা বহিরাগত নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের আজ ২৮ জুলাই’র মধ্যে নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খান বলেন, নির্বাচনে প্রায় ৩ হাজার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শান্তিপূর্ন এবং উৎসব মুখর পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করবেন। তার মধ্যে র্যাব, পুলিশ এবং বিজিবি’র পৃথক ৯০টি টিম নির্বাচনী এলাকায় কাজ করবে। যার মধ্যে বিজিবি’র ১৫ প্লাটুন সদস্য থাকবে। নির্বাচনের দিন ১২৩টি কেন্দ্রে পুলিশ, ব্যাটেলিয়ান পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে ২ হাজার ৯৩০ জন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ন এবং অধিক গুরুত্বপূর্ন ১১২টি কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকবেন ২ হাজার ৬৮৮ জন এবং সাধারণ ১১টি ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তা জনিত কাজে নিয়োজিত থাকবেন আরো ২৪২ জন ফোর্স।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, আজ শনিবার মধ্যরাতে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম শুরু হবে। প্রথম পর্যায়ে র্যাব ও পুলিশের টিম মাঠ পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিৎ এর কাজ করবেন। সড়কের গুরুত্বপূর্ন এলাকাগুলোতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশী চৌকী এবং সন্দেহজনক ব্যক্তিদের তল্লাশী করবেন। নির্বাচনী এলাকায় অপরিচিত কাউকে প্রবেশ করতে দিবেন না তারা। আজ রাত ১২টার পর থেকে নগরীতে যত্রযত্র যানবাহন চলাচলের বিষয়টিও তদারকি করবেন তারা। তাছাড়া আগামী কাল ২৯ জুলাই থেকে সিটি নির্বাচনে নিয়োগ প্রাপ্ত ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এবং ১৫ প্লাটুন বিজিবি’র নির্বাচনী এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনার কথা রয়েছে। আজ এবং আগামী কাল থেকে কার্যক্রম শুরু করতে চলা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী’র সদস্য এবং বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা ভোট গ্রহনের পর দিন অর্থাৎ ৩১ জুলাই পর্যন্ত বরিশালে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনকালিন দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন অফিস সংশ্লিষ্টরা।