6:38 pm , July 24, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ১৪ দফা ইশতেহার ঘোষনা করেছেন একমাত্র নারী মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী। নির্বাচনের মাত্র ৭ দিন পূর্বে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ইশতেহার ঘোষনা করেন সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) মনোনিত ‘মই’ প্রতীকের ওই প্রার্থী। নগরীর সদর রোড অশ্বিনী কুমার হলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত ইশতেহারে শ্রমিক মেহনতি মানুষ এবং নগর উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনকে সরকারের নিয়ন্ত্রনমুক্ত করে প্রকৃত স্ব-শাসিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এবং নগর সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য জণগনকে সাথে নিয়ে ধারাবাহিক সংগ্রামের ঘোষনা দেন। তবে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে পদত্যাগ করে জণগনের মতামতের ভিত্তিতে পুনরায় নির্বাচনেরও ব্যবস্থা করা হবে বলেও ইশতেহারে উল্লেখ করেছেন তিনি।
ইসতেহার ঘোষনা’র পূর্বে মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, এই ইশতেহার লুটপাট, দুর্নীতিগ্রস্থ মানুষ ব্যতীত বরিশালের সর্বসাধারনের নির্বাচনী ইশতেহার। তফসিল ঘোষনার অনেক পূর্বে আমরা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে জনগনের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে ‘বাসদের ভাবনা’ পুস্তিকাতে আমরা আমাদের খসড়া ভাবনাগুলো বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেছিলাম।
তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী ইশতেহার হল গরীব, মেহনতী, খেটেখাওয়া, অধিকার বঞ্ছিত, নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের ইশতেহার। আমরা নির্বাচিত হলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন হবে লুটপাট, দুর্নীতি মুক্ত ও অধিকার বঞ্ছিত মানুষের অধিকার আদায়ের সিটি কর্পোরেশন।
নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে বলেন, নির্বাচনের পূর্বে ইশতেহার ঘোষনা একটি অবশ্যকরনীয় কাজ। কারন জনগনের সামনে নির্বাচনী অঙ্গিকার না থাকাটা ভবিস্যতের জন্য কোন শুভ লক্ষন নয়। আবার প্রতিশ্রতির ফাঁকা বুলিও জনগণকে পরিকল্পিত ভাবে ধোকা দেয়ার সামিল।
এদিকে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে বাসদ নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতেতে ১৪ দফা ইশতেহার ঘোষনা করেন মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী। ঘোষিত ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে- কাউন্সিলর বাদেও জনগনের সমন্বয়ে নগর কাউন্সিল গঠন করা হবে। যেখানে শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, শ্রমিক, নারী, ছাত্র ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা থাকবেন।
সকল স্তরে দুর্নীতি মুক্ত করার লক্ষ্যে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বাজেট, বরাদ্দ, প্রকল্প এবং কোথায় কি ভাবে ব্যয় হচ্ছে, ভাতা সুবিধাভোগীদের তালিকা কাউন্সিলর অফিস ও প্রকাশ্য স্থানে টানিয়ে দেয়া হবে।
আমরা কাঠামোগত উন্নয়নের সাথে সমান গুরুত্ব দিয়ে নগরবাসির জীবন মান এবং রুচি সংস্কৃতির উন্নয়ন ঘটানোর জন্য বিশেষ গুরুত্বারপ করব। এর মধ্যে প্রতি ওয়ার্ডে পাঠাগার, বিজ্ঞান ক্লাব, সাহিত্য ক্লাব, খেলার মাঠ নির্মানে বিশেষ উদ্যোগ নেব। মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং বন্ধ করতে জনগণকে সাথে নিয়ে এক দিকে সচেতনাতা বৃদ্ধি অন্যদিকে প্রতিরোধ আন্দোলনে বিশেষ গুরুত্ব দেব।
মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং মুক্ত নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ নগরী গড়ে তুলতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে, আমরা অধিকার বঞ্ছিত ও বর্ধিত এলাকার জীবন মান উন্নয়নে সব চেয়ে বেশি মনোযোগ দেব, বেকারত্ত দুরীকরনের লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে বেকার তরুন ও যুবকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে বিদেশে নিরাপদ কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেব। হকারদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ ও পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ করা হবে।
খাল পুনরুদ্ধার ও জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে হিউম্যান ওয়েস্ট এবং সলিট ওয়েস্টকে সম্পদে পরিবতন করা হবে। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করে বর্জ্য থেকে ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে জৈবসার ও বায়োগ্যাস প্রস্তুত করে তা সুলভমূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
প্রান্তিক জণগোষ্ঠি অর্থাৎ হিজড়া ও বেদে সহ সুবিধাবঞ্ছিত মানুষের সন্তানদের শিক্ষার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে। যাতে করে তারা বিনা মূল্যে শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ পায়। পাশাপাশি তাদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ সদর হাসপাতালকে আরো আধুনিকিকরনে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে। সিটি কর্পোরেশনে নিম্ব আয়ের কর্মচারীদের বেতন নিশ্চিত করা হবে। শ্রমিকদের বেতন বকেয়া রেখে মেয়র কোন ভাবেই নিজের ভাতা সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা গ্রহন করবে না।
ব্যাপারিচালিক রিক্সা ও অটো সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চলাচলের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করা হবে। সিটি হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি না করার বিশয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। নগরীকে সবুজায়নের লক্ষ্যে বৃক্ষ রোপন করা হবে। সরকার প্রশাসনের অসহযোগিতা বা চাপে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে পদত্যাগ করে জণগনের ভিত্তিতে করোনীয় নির্ধরন এমনকি পদত্যাগ করে পুনরায় নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হবে। সিটি কর্পোরেশনকে সরকারের নিয়ন্ত্রনমুক্ত করে প্রকৃত স্বশাসিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এবং নগর সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণকে সাথে নিয়ে ধারাবাহিক সংগ্রাম পরিচালনা করা হবে।
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনা শেষে মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী নগরবাসির উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা বরিশালকে আবারো শিক্ষায়, সম্পদে, কর্মে এক ঐতিহ্যবাহী নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। গড়ে তুলতে চাই জণগনের অধিকার আদায়ের সিটি কর্পোরেশন। জণগনের সমৃদ্ধ বরিশাল নগরী গড়ে তুলতে আমরা আপনাদের সমর্থন চাই।
ইশতেহার ঘোষনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, বরিশাল জেলার আহ্বায়ক ইমরান হাবিব রুমন, বাসদ নেত্রী ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী জোহরা রেখা, বাসদ নেতা কমরেড আব্দুর রাজ্জাক, মো. আউয়াল, শহীদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।