6:17 pm , July 23, 2018
রুবেল খান ॥ আগামী ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। হিসাব অনুযায়ী নির্বাচনের বাকি মাত্র ৭ দিন। তাই শেষ সময়ে চলছে প্রার্থীদের প্রচারনা। তাছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে ২৮ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নির্বাচনকালীন নগরীর আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে প্রস্তুত করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিচার বিভাগীয় হাকিম ও প্রস্তুত রয়েছে ৩০টি মোবাইল কোর্ট। পাশাপাশি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠানের জন্য র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি’র ৯০টি টিম ৩০ ওয়ার্ডে নির্বাচনের আগে পড়ে দায়িত্ব পালন করবে। তাদের পাশাপাশি ১০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং ৯ জন বিচার বিভাগীয় হাকিম। সব মিলিয়ে ভোটের দিন সহ আগে পড়ে প্রায় তিন হাজার মত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঝুকিপূর্ব এবং সাধারণ ভোট কেন্দ্র সহ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করবেন।
তাছাড়া উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট গ্রহন সম্পন্ন করনের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে ১৩৮ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৮২৫ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং এক হাজার ৬৫০ জন পুলিং অফিসারকে। এদের মধ্যে ১০ ভাগ কর্মকর্তা আপদকালিন সময়ে জরুরী প্রয়োজনে দায়িত্ব পালনের জন্য রিজার্ভ থাকবেন।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন খান বলেন, ৩০ জুলাই অবাধ, নিরপেক্ষতা ও শান্তিপূর্ন ভাবে উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট গ্রহনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে এরই মধ্যে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং রিটার্নিং কর্মকর্তাগন সে মতে প্রস্তুতি নিয়েছি।
তিনি জানান, অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের একটি অংশ হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাই এরই মধ্যে ৩টি বাহিনী বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আগে পড়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের বিপুল সংখ্যক সদস্য প্রস্তুত করেছেন। যার মধ্যে র্যাব এবং পুলিশ সদস্যরা এরই মধ্যে নির্বাচনের মাঠে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে দিয়েছে। তবে আগামী ২৯ জুলাই থেকে বিজিবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। একই দিন থেকে নির্বাচনী এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করবেন। তবে তার আগেই ২৮ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিসিসি’র ৩০টি ওয়ার্ডে ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে।
হেলাল উদ্দিন খান আরো বলেন, বিসিসি নির্বাচনে ১৫ প্লাটুন বিজিবি সদস্য থাকবেন। সে অনুযায়ী মোট বিজিবি সদস্যর সংখ্যা হতে পারে তিনশতাধীক। ১৫ প্লাটুন বিজিবি সদস্যদের সমন্বয়ে ৩০টি টিম গঠন করা হবে। তাদের পাশাপাশি র্যাব-৮ এর পক্ষ থেকেও থাকবে ৩০টি টিম। র্যাব এবং বিজিবি’র সমন্বয়ে থাকবে ১০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স। এছাড়া টহলের দায়িত্বে থাকবে পুলিশের আরো ৩০টি টিম।
তিনি জানান, কেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনা করে সেখানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। সাধারণ কেন্দ্রের থেকে ঝুকিপূর্ব অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ন কেন্দ্রগুলোতে দু’জন করে পুলিশ সদস্য বেশি থাকবেন। গুরুত্বপূর্ন কেন্দ্রের তালিকা এখনও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে জমা দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খান। তিনি বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে পুলিশসহ ২২ জন করে নিরাপত্তা কর্মী থাকবে। ওই ২২ জনের মধ্যে পুলিশের একজন এসআই এবং একজন এএসআই ও ৫ জন সদস্য থাকবেন। যারা সবাই অস্ত্রধারী। ৩ জন ব্যাটালিয়ান আনসার ও একজন পিসি, দু’জন এপিসিসহ ১২জন সাধারন অঙ্গীভূত আনসার সদস্য থাকবে। যাদের মধ্যে ৫ জন নারী ও ৭ জন পুরুষ। এদের মধ্যে এর মধ্যে পিসি ও এপিসিরা অস্ত্রধারী এবং বাকিরা লাঠি হাতে থাকবে।
এদিকে ভোট কেন্দ্রের অভ্যন্তরে থাকবেন প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং এবং পুলিশ অফিসাররা। এদের মধ্যে একটি কেন্দ্রের সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন প্রিজাইডিং অফিসার। বিসিসি’র ৩০টি ওয়ার্ডে ১২৩টি কেন্দ্রে মোট ১২৩ জন প্রিজাইডিং অফিসার থাকবেন। তার সাথে সহযোগী হিসেবে থাকবেন আরো ৭৫০ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং এক হাজার ৫০০ জন পোলিং অফিসার। এরাই মুলত ভোট গ্রহনের দায়িত্ব এবং কেন্দ্রের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে দিক নির্দেশনা দিবেন। তেমনি করেই প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাডিং ও পুলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
অবশ্য সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খান বলেছেন, নির্বাচনের দিন কেন্দ্রের দায়িত্ব থাকা প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং এবং পুলিং অফিসারদের সমস্যা কিংবা যে কোন কারনে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে। সে দিকটি বিবেচনা করে আরো ১০ ভাগ সংশ্লিষ্ট অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সংখ্যানুপাতে অতিরিক্ত প্রিজাইডিং অফিসারের সংখ্যা ১৫ জন, সহকারী প্রিজাইর্ডি অফিসার ৭৫ জন এবং পুলিং অফিসার ১৫০ জন। এরাই মুলত আপদকালিন জরুরী প্রয়োজনে দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১২৩টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ঝুকিপূর্ব বা গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের নগর বিশেষ শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার জাহাঙ্গীর মল্লিক। তিনি জানান, গুরুত্বপূর্ন ভোট কেন্দ্রের তালিকা তৈরী হয়েছে। তবে তা এখনো নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়নি। মঙ্গলবার বা তার পরদিন তালিকা জমা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।