7:05 pm , April 23, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর শিশুদের সাঁতার শেখানো কার্যক্রম নিয়ে দুর্নীতি করছে বাস্তবায়নকারী বেসরকারী সংস্থা সেভ দি কোস্ট্যাল পিপল’র (স্কোপ) নির্বাহী পরিচালক। সাঁতার শিখতে আসা শিশুদের অভিভাবকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ উত্তোলন করা হচ্ছে। যা নিয়ে ক্ষুদ্ধ বিনামুল্যে সাতার শেখানো কার্যক্রমের অর্থ বরাদ্ধকারী নগর ভবন ও ইউনিসেফ। স্কোপ পরিচালকের দুর্নীতির কারনে প্রকল্প’র কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার হুমকিতে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, ২০১০ সালে তৎকালীন মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরন নগরীকে শিশু বান্ধব হিসেবে ঘোষনা করেন। এরপর থেকে নগরীতে শিশুদের সমস্যা চিহিৃত ও সমাধানের জন্য নানা কর্মসুচী বাস্তবায়ন করা হয়। ধারাবাহিকতায় নগর ভবন ও ইউনিসেফের সহায়তায় গত ২৭ মার্চ থেকে নগরীর শিশুদের সাতার শেখানো কার্যক্রম শুরু হয়। কার্যক্রম বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় এনজিও স্কোপ। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে নগরীর ১ হাজার ৮০০ শিশুকে সাঁতার শেখানোর লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ছেলেদের জন্য বঙ্গবন্ধু উদ্যানের ডিসি লেক এবং মেয়েদের জন্য বান্দ রোডের ব্যাপ্টিস্ট মিশন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পুকুরে সাঁতার শেখানো কার্যক্রম চলছে। এতে প্রায় ১২০ জনকে সাতার শেখানো হচ্ছে। প্রকল্পে সাতার শেখাতে দুই জন প্রশিক্ষক রাখা হয়েছে। কিন্তু স্কোপ পরিচালক কাজী এনায়েত হোসেন শিপলু নিজেসহ বাড়তি সাতজন প্রশিক্ষক নিয়েছে।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, নগর ভবন ও ইউনিসেফের অর্থায়নে বিনামুল্যে সাতার শেখানো হবে। কিন্তু স্কোপ পরিচালক সাতার শিখতে আসা শিশুদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা করে উত্তোলন শুরু করে। এখন পর্যন্ত ১০ অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করেছে।
এ বিষয়ে সাতার শেখানো কার্যক্রমের টিম লিডার ইউনিসেফের নাসরিন নাহার জানান, ওই অভিযোগ পেয়ে স্কোপ’র নির্বাহী পরিচালক শিপলুকে টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারের মধ্যে সকলের টাকা ফেরত দেয়ার সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়া হয়নি। তাই পুনরায় আজ মঙ্গলবারের মধ্যে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। টাকা ফেরত না দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে স্কোপ পরিচালক কাজী এনায়েত হোসেন শিপলু বলেন, প্রকল্প’র স্থায়িত্ব শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো নির্ধারিত লক্ষ্য পূরন হয়নি। কোন পথশিশু সাতার শেখানো কার্যক্রমে অংশ নেয়নি। তাই প্রকল্প শেষ হলেও তাদের সাতার শেখানো হবে। এই জন্য টাকা আদায় করা হয়েছে। এক পর্যায়ে তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে তার কাছে গিয়ে প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য দেখে যাওয়ার জন্য বলেন স্কোপ পরিচালক।
এ বিষয়ে নগর ভবনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, সাতার শেখানো কার্যক্রমে অংশ নেয়াদের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার কোন সুযোগ নেই। এ প্রকল্পের অর্থ সিটি কর্পোরেশন ও ইউনিসেফ থেকে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। যদি অর্থ নিয়ে থাকে সেটা লজ্জাজনক ও অপরাধ। এতে প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার হুমকিতে পড়বে।
তিনি আরো জানান, অর্থ নেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
ইউনিসেফের বরিশাল বিভাগীয় প্রধান এএইচএম তৌফিক আহম্মেদ বলেন, টাকা আদায় করা লজ্জাজনক ঘটনা ও প্রকল্পটির জন্য ক্ষতিকারক। তাই প্রকল্পের বাইরে টাকা আদায় করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।