বিদ্রোহী নিয়ে বিব্রত জাপা’র মেয়র প্রার্থী বিদ্রোহী নিয়ে বিব্রত জাপা’র মেয়র প্রার্থী - ajkerparibartan.com
বিদ্রোহী নিয়ে বিব্রত জাপা’র মেয়র প্রার্থী

6:09 pm , July 14, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস’র ঘুম ভেঙ্গেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী বশির আহমেদ ঝুনু। আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরে লাঙ্গল প্রতীকের দলীয় ও সমর্থক ভোটের হিসাব নিকাশ পাল্টে দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য বশির আহমেদ ঝুনু প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরলেও এতে লাঙ্গল প্রতীকের ভোট কমবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ।

সূত্রমতে, দীর্ঘ দিন ধরেই বরিশালে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব টিকে আছে নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং এর মাধ্যমে। সাংগঠনিক কার্যক্রমে তাদের জোড়ালো অবস্থান দৃশ্যমান না হলেও জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির পদ নিয়ে রয়েছে একাধিক গ্রুপিং। যার প্রভাব পড়ছে আসন্ন ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও। জাতীয় পার্টি মনোনিত মেয়র প্রার্থী বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নতুন করে সেই গ্রুপিং দ্বন্দ্বের জানান দিয়েছেন পার্টির একাংশের নেতা-কর্মীরা।

দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন গঠিত হওয়ার পরে ইতিপূর্বে ৩টি পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচনে শুধুমাত্র একটি ওয়ার্ডে একজন কাউন্সিলর ছাড়া মেয়র পদে কখনই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেয়নি জাতীয় পার্টি। প্রথমবারের মত বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের চতুর্থ পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে জাতীয় পার্টি। তাও একজন নয়, পার্টি সমর্থিত প্রার্থীর পাশাপাশি রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীও। বিজয়ের লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনে একই দলের দুই প্রার্থী নির্বাচন করলেও তাদের লক্ষ্যে পৌছানো কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীরা।

দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা জানান, জাতীয় পার্টির মাঠ পর্যায়ের নেতা বশির আহমেদ ঝুনু। সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বশির আহমেদ ঝুনু দীর্ঘ দিন ধরেই বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় পার্টির মনোনয়নের দাবীদার ছিলেন তিনি। কিন্তু দলের মধ্যে একাধিক গ্রুপিং’র কারনে পার্টির মনোনয়ন দৌড়ে হেরে যান ঝুনু। তার পরিবর্তে পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন ইকবাল হোসেন তাপস। তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনাও চলছে পার্টির অভ্যন্তরে। নির্বাচনকে ঘিরে হঠাৎ করেই প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় থাকা ইকবাল হোসেন তাপসকে নেতা-কর্মীরা দেখেননি মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে। এমনকি তিনি পার্টি ও নগরবাসির কাছে একটি অপরিচিত মুখ বলেও দাবী দলের একাংশের। তার পরেও পার্টির মহাসচিবকে ম্যানেজ করেই মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে যান ইকবাল হোসেন তাপস। অবশ্য দলীয় সূত্র বলছে, তার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে জাতীয় পার্টি’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুলের হাত রয়েছে।

এদিকে পার্টি থেকে মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচনের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন বশির আহমেদ ঝুনু। কিন্তু সমর্থক ভোটার তালিকায় স্বাক্ষর জাল এবং ভোটারকে খুঁজে না পাওয়ায় ঝুনুর প্রার্থীতা বাতিল করা হয়। ঋণখেলাপীর দায়ে বাতিল হয় পার্টির মনোনিত প্রার্থী তাপসের মনোনয়নপত্রও। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রতিবেদন এবং সহযোগিতায় প্রার্থীতা ফিরে পান তাপস। কিন্তু অনিশ্চয়তায় পড়েন ঝুনু। শেষ পর্যন্ত আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে অনিশ্চয়তা কাটিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেরেন তিনি। নির্বাচনে তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দেয়া হয়েছে হরিন প্রতীক। গত শুক্রবার প্রতীক পেয়ে নির্বাচনের প্রচার প্রচারনায় নেমে পড়েন তিনি। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই নগরীর কাশিপুর ও চৌমাথা এলাকায় গণসংযোগ করেন ঝুনু।

অপরদিকে ঝুনু’র প্রার্থীতা বাতিলে চিন্তামুক্ত হন জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। সে অনুযায়ী দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে প্রচার প্রচারনায় এগিয়ে চলেন। দলীয় ভোট নিশ্চিত হয়ে ছোটেন সাধারণ ভোটারদের কাছে। এমনকি জাতীয় পার্টির বৃহৎ একটি অংশের নেতৃত্ব দেয়া মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি এ্যাড. একেএম মুরতজা আবেদিনকেও কাছে ভেড়ান ইকবাল হোসেন তাপস। তবে বশির আহমেদ ঝুনু প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেরাটা ইকবাল হোসেন তাপস’র দুশ্চিন্তার প্রধান কারন হয়ে দাড়িয়েছে। কেননা এখন দলীয় ভোট নিয়েও ভাবতে হচ্ছে তাকে।

পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দলীলের রাজনৈতিক অবস্থানগত দিক থেকে ইকবাল হোসেন তাপস’র থেকে বশির আহমেদ ঝুনু’র অবস্থান ভালো। যে কারনে নির্বাচনে তার নামের উপরে দলীয় ভোট আসবে। আবার দলের মধ্যে তার সমর্থকও রয়েছে অনেক। প্রার্থী দু’জন হওয়ায় এখন ওই ভোট ভাগ হয়ে যাবে বলে ধারনা দলীয় নেতা-কর্মীদের। তাই ইকবাল হোসেন তাপস’র জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে বশির আহমেদ ঝুনুকেই বড় বাঁধা হিসেবে দেখছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। যে কারনে তার বক্তব্য জানা যায়নি। অবশ্য জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও লাঙ্গল প্রতীকের মুখপাত্র অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, ইকবাল হোসেন তাপসকে পার্টির চেয়ারম্যান দলীয় প্যাডে মনোনয়ন দিয়েছেন। তাই বরিশালে পার্টির একমাত্র প্রার্থী তিনি। এখানে পার্টির অন্য কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে সে পার্টির প্রার্থী হবে না। সুতরাং বশির আহমেদ ঝুনু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তাতে পার্টির মনোনিত প্রার্থীর ভোটে কোন প্রভাব পড়বে না বলে আমাদের বিশ্বাস।

তিনি বলেন, বশির আহমেদ ঝুনু জাতীয় পার্টির সাথে ছিলো। তাকে সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি করে আমিই কমিটি দিয়েছিলাম। এমনকি ও জেলা কমিটিরও যুগ্ম আহ্বায়ক। কিন্তু সে এতটাই উশৃঙ্খল হয়ে পড়ে যে তার কার্যক্রম পার্টির নেতৃবৃন্দ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়া ঝুনু চেইন অব কমান্ড পর্যন্ত মানছে না। সে পার্টির চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছে।

অধ্যাপক হাবুল বলেন, আমরা এখনো ঝুনুর প্রতি সহনশীল। যে কারনে তার কর্মকান্ডের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রকে কিছু জানাইনি। এমনকি নেতা-কর্মী সংকট থাকার কারনে আমরা তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও নেইনি। তবে পরিস্থিতি বেশি উদ্ভট মনে হলে পার্টি তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে থেমে থাকবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT