6:24 pm , July 10, 2018

রুবেল খান ॥ দিনভর উৎসব মুখর পরিবেশে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের হাতে নির্বাচনী প্রতীক তুলে দেন। বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রতীক বরাদ্দ কার্যক্রম শেষ হয়। তার আগেই বেলা ১২টার পর পরই নির্বাচনের দলীয় প্রতীক সংগ্রহ করেন ৬ মেয়র প্রার্থী। যারা প্রতীক পাওয়ার পর পরই আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারনা শুরু করেন। পাশাপাশি নির্বাচিন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বের হয়ে ৩০ জুলাই’র ভোট নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন ধরনের আশা-আকাংখা ও সরদার দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে বিভিন্ন অভিযোগ করেন বিএনপি সহ ৫ দলের প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’, বিএনপি’র প্রার্থী এ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ারকে দলীয় প্রতীক ‘ধানের শীষ’, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. ইকবাল হোসেন তাপসকে ‘লাঙ্গল’, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রার্থী মাওলানা ওবায়েদুর রহমান মাহবুবকে দলীয় প্রতীক ‘হাত পাখা’, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তীকে দলীয় প্রতীক ‘মই’ এবং কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর মেয়র প্রার্থী এ্যাড. আবুল কালাম আজাদকে দলীয় প্রতীক ‘কাস্তে’ দেয়া হয়েছে। ছয়জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও বিএনপি’র মজিবর রহমান সরওয়ার বাদে বাকি চারজন প্রার্থীই উপস্থিত থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে নির্বাচনী প্রতীক গ্রহন করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, আসন্ন ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহনের লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার ছিলো প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দের দিন। এজন্য সকাল থেকেই বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা নথুল্লাবাদ এলাকাধিন বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে বিসিসি’র রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভীর জমান। তাদের উপস্থিতিতে নির্বাচন অফিসের সভা কক্ষে শুরু হয় প্রতীক বিরতণ কার্যক্রম। প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের পছন্দের উপরেই বেশি গুরুত্ব দেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। অবশ্য পছন্দ এক হওয়ায় কয়েকটি ওয়ার্ডের প্রার্থীদের লাটারী করে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, মেয়র প্রার্থীরা সবাই দলীয় ভাবে নির্বাচন করছেন। তাই তাদেরকে স্ব স্ব দলের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দকৃত নির্বাচনী প্রতীক দেয়া হয়েছে। সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য ১২টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের জন্য ১০টি করে প্রতীক সংরক্ষিত ছিলো। বেশিরভাগ সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের পছন্দের প্রতীক ছিলো ঠেলাগাড়ি, লাটিম ও ঘুড়ি। যে কারনে ওই তিনটি প্রতীক বরাদ্দ দিতে লাটারী করতে হয়েছে। যে সংখ্যক প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের বেশিরভাগই ঠেলাগাড়ি, লাটিম ও ঘুরি প্রতীক পেয়েছে। এর পাশাপাশি অনেক প্রার্থী নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে পেয়েছেন ‘টিফিনকেরীয়ার, কাটা চামুচ ও রেডিও। যে ওয়ার্ডে দুই এর অধিক প্রার্থী রয়েছে সেইসব ওয়ার্ডের প্রার্থীদের ওইসব প্রতীক দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে বেশিরভাগ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাথীই পেয়েছেন আনারস ও বই প্রতীক। এই দুটি প্রতীকেই বেশি আগ্রহ ছিল তাদের। যাদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তারা নির্বাচনের বিধি-নিষেধ মেনে প্রচার প্রচারনা করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এদিকে বরিশাল জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. হেলাল উদ্দিন খান জানান, সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ৮ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে মোট ১১৩ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে মোট ৩৮ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তাদের মধ্যে থেকে যাচাই বাছাই, আপীল ও প্রত্যাহার কার্যক্রম শেষে তিনটি পদের বিপরিতে মোট ১৩৫ জন প্রার্থী চূড়ান্ত হয়। যার মধ্যে মেয়র পদে ৬ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৩৫ জন।
তিনি বলেন, ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে তিনটি ওয়ার্ডে শুধুমাত্র একজন করে একক প্রার্থী রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এছাড়া সংরক্ষিত একটি ওয়ার্ডে একক প্রার্থী রয়েছেন। যে কারনে ওই চারটি ওয়ার্ডের একক প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষনা করা হবে। ওয়ার্ডগুলো হলো- বিসিসি’র ১৫, ১৬ ও ১৯ নং সাধারণ ওয়ার্ড। এছাড়া সংরক্ষিত-৪ (১০.১১.১২) নং ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন একমাত্র প্রার্থী আয়শা তৌহিদ লুনা।
উল্লেখ্য, আগামী ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ওইদিন বরিশালের নতুন-পুরাতন মিলিয়ে ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন ভোটার নির্বাচিত করবেন তাদের মেয়র এবং কাউন্সিলর। ওই সংখ্যক ভোটারদের ভোট গ্রহনের জন্য এবার ১২৩টি ভোট কেন্দ্র নির্ধারন করেছে নির্বাচন কমিশন।