7:00 pm , July 5, 2018

রুবেল খান ॥ আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে জমে উঠতে শুরু করেছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার প্রচারনা। নির্বাচন কমিশন’র নির্ধারিত সময়ের আগে ভাগেই নির্বাচনী মাঠ গুছিয়ে নিতে কৌশলী প্রচার-প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। নতুন এবং পুরাতন প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে গিয়ে দোয়া এবং ভোট চাইছেন। বিশেষ করে সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে’র প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দলীয় প্রার্থীরা নিজ নিজ দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে করছেন ঘরোয়া বৈঠক, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাত এবং ভোটারদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি মনোনিত তিন প্রার্থী নির্বাচনের প্রচার প্রচারনা এবং প্রস্তুতির দিক থেকে এগিয়ে আছেন। অন্যান্য সংগঠনগুলোর মেয়র প্রার্থীরাও থেমে নেই। তারা তাদের অবস্থানগত দিক থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষনা অনুযায়ী আগামী ৩০ জুলাই বরিশাল সহ তিন সিটি কর্পোরেশনের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন বরিশালের নতুন ৩০ হাজার ৯০৯ জন সহ মোট ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন ভোটার নির্বাচিত করবেন সিটি’র মেয়র ও ৩০টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আর তাই ভোটের লড়াইকে সামনে রেখে এরই মধ্যে প্রার্থী হয়েছেন অনেকেই। প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে হতে চলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে এরই মধ্যে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ এবং দেশের প্রধান বিরোধী দল সহ ৭টি সংগঠন থেকে তাদের মনোনিত প্রার্থী ঘোষনা করেছেন। যাচাই বাছাই পরবর্তী প্রথম পর্বের আপীল এবং শুনানী কার্যক্রমও গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৯ জুলাই প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার কার্যক্রমের শেষ দিন অতিবাহিত হলে সিটি নির্বাচনে প্রার্থী চুড়ান্ত হবে। অবশ্য এরই মধ্যে মেয়র পদে ৭ জন প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি এরই মধ্যে চুড়ান্ত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাছাইতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস’র প্রার্থীতা বাতিল করা হলেও আইনী লড়াইয়ে আপীল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তা পুনরায় ফিরে পেয়েছেন তিনি।
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনের ঘোষনা অনুযায়ী আগামী ১০ জুলাই প্রার্থীদের মাঝে নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। এর পর পরই প্রতীক সহকারে নির্বাচের আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারনা শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা। তার আগে প্রচার প্রচারনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কোন প্রকার ঘরোয়া বৈঠকের ক্ষেত্রে প্রশাসনের অনুমতির বিধান করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে বিধামালায় যাই থাক প্রচার প্রচারনায় পিছিয়ে নেই মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা। দলের নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারনার জন্য প্রস্তুতির পাশাপাশি দফায় দফায় বৈঠক এবং ভোটারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন প্রার্থীরা। তবে এসব কর্মসূচি প্রার্থীদের নয়, বরং স্ব স্ব দলের ব্যানারে করা হচ্ছে। তাছাড়া নির্বাচন কমিশনের বিধি নিষেধ থাকায় বর্তমানে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারনার প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সিটি নির্বাচনকে ঘিরে অনেক আগে থেকেই প্রচার প্রচারনায় নেমে পড়েন সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী তরুন প্রজন্মের নেতা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। দলের মনোনয়ন চুড়ান্ত হওয়ার পর পরই পুরো মহানগরী এলাকায় নৌকার বিজয়ের জন্য নির্বাচনী কার্যক্রম জোরেসোরে শুরু করেন। প্রায় প্রতিদিনই মহানগর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সাথে নির্বাচনের বিষয়ে বৈঠক করছেন। আবার দলের ব্যানারে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মতবিনিময় সভা করছেন সাদিক। সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে দলীয় নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনাও দিচ্ছেন তিনি। বরিশালের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে দেখা করে দোয়া এবং সহযোগিতা চাইছেন সাদিক। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহন করছেন তিনি। তবে নির্বাচনের আচরনবিধি লংঘন হবে ভেবে নির্বাচনী সভা-সমাবেশ বা উঠান বৈঠক করতে পারছেন তিনি। অবশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সেফবুকে ঢুকলেই চোখে পড়ছে নৌকার প্রচার প্রচারনা। নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে সাদিককে নির্বাচিত করার আহ্বান করা হচ্ছে যোগাযোগ মাধ্যমে। অবশ্য সাদিক সমর্থক ছাড়াও বিএনপি’র প্রার্থী সহ অন্যান্য দলের মেয়র প্রার্থীদের প্রচার প্রচারনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এদিকে শুধুমাত্র সাদিক আবদুল্লাহই নন, তার পক্ষে প্রচার প্রচারনায় নেমে পড়েছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। তৃনমুল অর্থাৎ ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের বিশাল সমর্থকগোষ্টি নৌকার বিজয়ের জন্য সাধারণ ভোটারদের ঐক্যবদ্ধ করে তোলার চেষ্টা করছেন। উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বরিশালকে এগিয়ে নিতে ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে বলছেন সাদিকের কর্মী সমর্থকরা। আর তাই সব মিলিয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনায় এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
তবে প্রচার প্রচারনায় পিছিয়ে নেই বিএনপি মনোনিত ধানের শীষের প্রার্থী আলহাজ্ব মজিবর রহমান সরোয়ার সহ বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় প্রতিদিনই নিজ দল এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক করছেন তিনি। ওই সব বৈঠকে নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং ধানের শীষের বিজয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল রাতে নিজ বাস ভবনে মহানগর যুবদলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক করেছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগর বিএনপি’র সভাপতি এবং মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। এসময় যুবদল নেতা-কর্মীদের সকল ডর-ভয়ের উর্ধ্বে থেকে বিএনপি’র বিজয়ের লক্ষ্যে কাজ করার আহ্বান তিনি।
এর আগে দুপুরে নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় যান সাবেক মেয়র আলহাজ্ব মজিবর রহমান সরোয়ার। এসময় তিনি নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয় যান। সেখানে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ শ্রমিকদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত এবং ধানের শীষে ভোট চান। এর পর জেলা বাস মালিক গ্রুপের কার্যালয় যান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি ও মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন। তিনি ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের বাস মালিকগন উপস্থিত ছিলেন। কিছু সময় সেখানে উপস্থিত বাস মালিকদের সাথে আলাপচারিতা এবং ধানের শীষে ভোট চান। সেখান থেকে বেরিয়ে বাস টার্মিনালে অপেক্ষমান বিভিন্ন রুটের যাত্রী এবং কাউন্টার স্টাফদের সাথে কুশলবিনিময় করেন। অবশ্য এর বাইরে তৃনমুল অর্থাৎ ওয়ার্ড পর্যায়েও প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছেন বিএনপি’র কর্মী-সমর্থকরা। ওয়ার্ড পর্যায়ে মতবিনিময় সভার ব্যানারে করা হচ্ছে নির্বাচনী আলোচনা। ওইসব কর্মসূচিতে যোগদিচ্ছেন বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরোয়ারের হয়ে ধানের শীষে ভোট চাচ্ছেন তার কর্মী-সমর্থকরা।
অপরদিকে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসও প্রচার প্রচারনায় এগিয়ে আছেন। দলের মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পূর্বেই দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচার প্রচারনায় নেমে পড়ে তিনি। প্রথম দিকে জাতীয় পার্টির একটি অংশ ইকবাল হোসেন তাপস’র বিরোধীতা করলেও বর্তমানে তারাও জাতীয় পার্টির নাঙ্গল মার্কার বিজয়ের জন্য মিলেমিশে প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছেন। দলের নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করছেন পার্টির প্রার্থী। এমনকি নিজের ছবি এবং নাঙ্গল প্রতীক সম্বলিত লিফলেটও বিতরন করছেন ইকবাল হোসেন তাপস ও জাতীয় পার্টির কর্মী সমর্থকরা। কেউ কেউ তার এই কার্যক্রমকে নির্বাচন বিধিমালা লঙ্ঘন বলেও অভিযোগ করছেন।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির বাইরে বাসদ, সিপিবি, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিস’র প্রার্থীও দলীয়ভাবে প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছেন। এদের মধ্যে বাসদ’র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী ভোটের জন্য ছুটছেন সমাজের সুবিধা বঞ্ছিত ও নিচু শ্রেণির মানুষের কাছে। তার নির্বাচনের প্রধান শক্তি হিসেবে দেখছেন সমাজের সুবিধা বঞ্ছিত মানুষগুলোকে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রার্থী ওবায়দুর রহমান মাহবুবও প্রচার প্রচারনায় এগিয়ে যাচ্ছেন। চরমোনাই পীরের দলীয় এই প্রার্থী তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছেন। যদিও আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ন্যায় তাদের প্রচার-প্রচারনা তেমন চোখে পড়ছে না।
এর বাইরে সিপিবি’র প্রার্থী এ্যাড. একে আজাদ এবং খেলাফত মজলিস’র প্রার্থী একেএম মাহবুব আলম’র তেমন প্রচার প্রচারনা চোখে পড়ছে না। অবশ্য এই দুই প্রার্থী দলীয় ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দাবী করেছেন সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মীরা। সর্বপরি আগামী ১০ জুলাই প্রচার প্রচারনার সময় নির্ধারিত থাকলেও এর আগেই জমে উঠতে শুরু করেছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা।