7:05 pm , July 5, 2018

জুবায়ের হোসেন ॥ আশা, শংকা আর কৌতুহলে ভরা নির্বাচনী আলোচনা সমালোচনায় সরগরম হয়ে উঠছে নগরী। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নগরীর ভোটার সহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষের মুখে মুখে আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য বিসিসি নির্বাচন। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের অলি গলিতেও নির্বাচনী আমেজ। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস আদালত, এমনকি পাড়া মহল্লার মসজিদেও চলছে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারনা। ৩০ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদ প্রার্থী সাবেক, বর্তমান ও নতুনদের কর্মকান্ড নিয়ে তর্ক বিতর্কই বেশি তবে উৎকন্ঠা মেয়র এর আসনটিকে ঘিরে। মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীদের নিজ নিজ সমর্থকদের আলোচনায় আশা আর প্রচারনার সুর থাকলেও সাধারন ভোটারদের আলোচনা কিছুটা অন্য রকম। তাদের আলোচনায় আছে সাবেকদের দোষ গুনের বিশ্লেষন, বর্তমানদের ভুল আর ভবিষ্যতে দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুকদের সাথে বিগতদের তুলনা। আর ভোটের দিনটি নিয়ে তাদের আলোচনায় শুধুই উৎকন্ঠা। কি হবে, কেমন হবে, এটা হবে তো ওটা হবে ইত্যাদি। নগরীর ৩০ সাধারন ও সংরক্ষিত ১০ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১৫২ জন এবং মেয়র এর আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দীতা করবেন ৭ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মতো তরুন ও সাংগঠনিক নেতা। যিনি অভিভাবক শুন্য নগর আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী অবস্থায় নিয়ে গেছেন। প্রমান দিয়েছেন তার রাজনৈতিক দক্ষতার। বিএনপি মনোনীত এ্যাড মজিবর রহমান সরোয়ার’র মতো নেতা যিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র ও এ অঞ্চলের অপরাজেয় নেতা হিসেবে খ্যাত। আরো রয়েছে বাসদ মনোনীত ডা. মনিষা চক্রবর্তীর মতো মেধাবী নেত্রী। যার শখ সাধারন ও গরীবদের সেবা করা। তাই এমন নির্বাচন নিয়ে সাধারন ভোটাররা আলোচনায় মাতবেন এমনটাই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য সুশীল সমাজের। উৎকন্ঠাও থাকবে বলে মন্তব্য করেন তারা। কারন দেশের কয়েকটি স্থানে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের নিয়ে বিতর্ক এই উৎকন্ঠার কারন বলে অভিহিত করেছেন তারা।
সূত্র মতে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বাংলাদেশের অন্যতম মহানগরী বরিশাল এর স্থানীয় সরকার সংস্থা। ১৮৬৯ সালে বরিশাল টাউন কমিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ও ১৮৭৬ সালে বরিশাল মিউনিসিপ্যালিটিতে উন্নীত হয়। ১৯৮৫ সালে একে একটি প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা হিসেবে ঘোষনা করা হয়। পরবর্তীতে ২০০২ সালের ২৫ জুলাই “বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (সংশোধন) আইন ২০০২” এর মাধ্যমে পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশন হয় এই নগরী। এ্যাড মজিবর রহমান সরোয়ার হন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র। ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয় অর্জন করেন এবং মেয়র নির্বাচিত হন প্রয়াত শওকত হোসেন হিরন। হিরণ তাঁর নিজের কার্যক্ষমতার মাধ্যমে আওয়ামীলীগকে টানা ৩৫ বছর পর বরিশাল নগর ভবনের নেতৃত্বে নিয়ে যান। ২০১৩ সালের ১৫ জুন বিসিসি’র নির্বাচনে তিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের কাছে পরাজিত হন। এটিই ছিলো বিসিসির সর্বশেষ নির্বাচন।
আগামী ৩০ জুলাই সিটি কপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তাই নগরপিতার চেয়ারে আসিন হয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে নতুন ধারায় সামনে এগিয়ে নিতে আশাবাদী সকল প্রার্থী। উন্নয়নের নানা অঙ্গিকারে চলছে জোর শোরের প্রচারনা। আর সাধারন ভোটারদের মধ্যে চলছে নিত্য নতুন আলোচনা, সমালোচনার আর উৎকন্ঠায় ভরা প্রতিক্রিয়া। কে হবেন নগর পিতা? সে কি সাবেকদের ভুল শুধরে নতুন আঙ্গিকে সাজাবেন নগর ভবন? ভোট কেমন হবে? ইত্যাদি প্রশ্নের পশরাই থাকছে এই আলোচনার আসরে। দলীয় প্রার্থীদের সমর্থকরা তাদের আলোচনায় নিজেদের অবস্থান মজবুত দাবী করে আশাবাদী। অন্যদিকে সাধারন এর আলোচনা দুলছে দ্বিধা দ্বন্দ্ব। তবে কি হবে তা ৩০ জুলাই জানবে নগরবাসী সাধারন ভোটাররা। তবে আলোচনা তো নির্বাচনি আমেজের একটি অংশ। তাই ওই পর্যন্ত এই আলোচনা আরো জমে উঠবে বলে জানিয়েছেন তারা। ছড়িয়ে যাবে গোটা নগরীর কানায় কানায়। ১০ জুলাই প্রতীক পাবেন সকল প্রার্থীরা। ১২ জুলাই শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারনা। ওই সময় আলোচনায় আরও সরগরম হয়ে উঠবে গোটা নগরী বলে জানায় একাধিক সাধারন ভোটাররা।
এমন বিষয়ে আলাপ করা হয়েছে নগরীর নানা শ্রেনী পেশার সাধারন ভোটারদের সাথে। জানতে চাওয়া হয়েছে তাদের আলোচনা বিষয় নিয়ে তাদের মন্তব্য।
নগরীর ১২ নং ওয়ার্ডের ভোটার ব্যাবসায়ী মো. ফিরোজ এর সাথে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে আগতদের এখন এই একটাই আলোচনা। কে হবেন নগর পিতা। কেমন হবে ভোট। মাঝে মধ্যে এই আলোচনা তর্কে রুপ নিচ্ছে আবার মাঝে মধ্যে মতঔক্যে হচ্ছে আমেজময় পরিবেশ। তবে সারাদিন এখন এই একই জিনিস চরছে বলে জানান তিনি। ব্যাক্তিগত ভাবে তিনি জনগনের কাছে থাকা মানুষটিকেই নগর পিতার আসনে দেখতে চান বলে জানান।
নগরীর বাসিন্দা পেশায় ইমাম মো. আব্দুর রব এর সাথে আলাপকারে তিনি বলেন, নির্বাচনের আলাপ এখন মসজিদেও চলে জোরসোরে। প্রার্থীদের দোষ গুনের বিষয়ে চলে মতামত বিশ্লেষন। দলীয়রা নিজেদের প্রার্থীদের গুনগানে মাতে আর সাধারন ভোটাররা চাপা গলায় করে আলোচনা ও সমালোচনা। তবে কি হবে তা ৩০ জুলাই বোঝা যাবে বলেন তিনি। তবে দিন যত এগুবে এই আলোচনার পরিবেশ আরও জমে উঠবে বলেও মন্তব্য করেন।