7:37 pm , July 3, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে বরিশাল ৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মেহেন্দিগঞ্জের কাজিরহাট থানা আওয়ামী লীগেরসহ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কাছে অভিযোগ তুলে ধরেন নির্যাতিন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। সঞ্জয় চন্দ্র উপজেলার বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে সঞ্জয় চন্দ্র বলেন, বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের ছোট ভাই মনোজ কুমার নাথের স্ত্রী কল্যানি দেবনাথ ও বিদ্যানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ. জলিল মিয়া সহ ৪১ জনকে আসামী করে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০১৭ সালের ৫ মার্চ দূর্নীতি দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করি। এরা বিভিন্ন সময় ৯টি বিদ্যালয়ে অবৈধ ভাবে ১৮ জন শিক্ষক নিয়োগ করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। যার মামলা নং ৩৮১। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করায় ক্ষিপ্ত হন এমপি পঙ্কজ দেবনাথ। মামলার জের ধরে এমপি পঙ্কজ আমাকে দুই বার হত্যার চেষ্টা করে। একটি অনুষ্ঠানে যাবার সময় আমাকে পিটিয়ে এবং এলোপাতারী ভাবে কুপিয়ে এবং হাতুরী পেটা করে পঙ্গু করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এমনকি ওই ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে ছিনতাই’র মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা করিয়েছে এমপি পঙ্কজ নাথ। শুধু তাই নয়, এমপি পঙ্কজ’র নির্দেশে বিভিন্ন সময়ে আমার বিরুদ্ধে লুট, চাঁদাবাজী, নারী নির্যাতন সহ মিথ্যা অভিযোগে ৫টি মামলা দায়ের করেন। মিথ্যা অভিযোগে মামলার কারনে আমি বিনা অপরাধে টানা ৫৮ দিন কারা ভোগ করতে হয়েছে। তবে আদালতে দায়ের হওয়া মিথ্যা অভিযোগের ৪টি মামলা থেকে এরই মধ্যে আমি অব্যাহতি পেয়েছি।
তিনি বলেন, আমার উপর দ্বিতীয় দফায় হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলতি বছরের গত ১২ জুন। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার নতুন ডাক বাংলার সাথে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সেখান থেকে আমাকে নতুন ডাক বাংলার ভিআইপি ১নং কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এমপি পঙ্কজ নাথ নিজেই আমাকে চর থাপ্পর মারেন। এমনকি লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে পা দিয়ে চেপে ধরেন। পরে তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে আমার হাত পা ভেঙ্গে নদীর মধ্যে ফেলে দিতে নির্দেশ দেয়। এমপি’র সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য আমু, সোহাগ, রিমন সহ ৩ জন আমাকে লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে ডান ভেঙ্গে দেয়। তাদের নির্যাতনের ফলে আমি নিস্তেজ হয়ে পড়লে সন্ত্রাসী বাহিনী আমার হাত-পা ভেঙ্গে মাসকাটা নদীতে ফেলে দেয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এমপি পঙ্কজ নাথকে ১নং আসামী করে একটি মামলা দায়ের করি। যার মামলা নম্বর সিআর- ১৩৬/২০১৮।
সঞ্জয় চন্দ্রের অভিযোগ, মামলা দায়ের করায় ঘটনার পরে ২৫ জুন এমপি পঙ্কজ নাথ তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমার দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় এবং আমার ছোট ভাই’র বাই সাইকেল নিয়ে যায়। তাদের ভয়ে আমার ছোট ভাই এবং মামলার স্বাক্ষীরা বর্তমানে ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এজন্য আওয়ামী লীগের সভানেত্রী’র কাছে নিজের, পরিবারের এবং স্বাক্ষীদের জীবনের নিরাপত্তার দাবী জানিয়েছেন তিনি।
এমপি পঙ্কজ নাথকে দূর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে সঞ্জয় চন্দ্র বলেন, পূর্বের ম্যানেজিং কমিটির স্বাক্ষর ও অফিসারদের স্বাক্ষর জাল জালিয়াতি করে ভুয়া নিয়োগ কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির মাধ্যমে দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। যার উদাহরন: উত্তর রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০০৯ সালের ৪ জুন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির মাধ্যমে বর্তমান বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঃ জলিল মিয়া সুবর্না আক্তার ও মো. কাওসারকে নিয়োগ দিয়েছে। ততকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন আব্দুল করিম চৌকিদার। ২০১৬ সালে আব্দুল জলিল মিয়া ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দু’জনের রিটার্ন ফরমে স্বাক্ষর করেন। এমপি পঙ্কজ নাথ’র ছোট ভাই মনোজ কুমার নাথ’র স্ত্রী কল্যানী দেবনাথ, আহসান হাবিব, মো. শহিদুল ইসলাম, ফাতেমা তুজ জোহরা, মো. মনিরুজ্জামান ২০১৫ সাল থেকে ন্যাশনাল সার্ভিসে চাকুরী করছে। তারা রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন তুলছে। গোলাপী ও নাছরিন নামের দু’জন ২০১৩ সাল থেকে আনন্দ স্কুলে চাকুরী করছেন। ফাতেমা তুজ জোহরা ও নাছরিন’র নিয়োগ অনুযায়ী বয়স ছিলো ষোলর নিচে। মো. আক্তার হোসেনে’র বয়স নিয়োগ অনুযায়ী ৮ বছর বেশী। এমপি পঙ্কজ নাথ তার ডিও লেটারের মাধ্যমে ১৮ জনকে অবৈধ ভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেন। তাদের কাছ থেকে কোটি টাকার উপর হাতিয়ে নিয়েছে। এমনকি ৫৫ জন দপ্তরী নিয়োগের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
তিনি জামাত শিবির লালন পালন করে এলাকায় সাধারন মানুষকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে মামলা ও হত্যা করার হুমকী প্রদান করেন। আমি অণ্যায়ের সাথে আপোষ না করায় আজ আমার এই অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নিকট এমপি পঙ্কজ নাথ’র বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।