মাদকমুক্ত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৩নং ওয়ার্ডের ৩ প্রার্থী মাদকমুক্ত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৩নং ওয়ার্ডের ৩ প্রার্থী - ajkerparibartan.com
মাদকমুক্ত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৩নং ওয়ার্ডের ৩ প্রার্থী

7:36 pm , July 3, 2018

রুবেল খান ॥ নগরীর মধ্যে ২৩নং ওয়ার্ডটি সবচেয়ে বড়। তাই এ ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যাও বেশি। এখানে মোট ভোটার ১২ হাজার ৭৭ জন। জনবহুল এই ওয়ার্ডটির বড় সমস্যা মাদক। যা বর্তমানে ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে বলে দাবী সংশ্লিষ্টদের। তাই এবারের নির্বাচনে কোন ব্যক্তি বা প্রার্থী নয়, বরং মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষনা দিয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নির্বাচিত হতে পারলে ওয়ার্ডটিকে মাদক মুক্ত সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলার ঘোষনা দিয়েছেন প্রার্থীরা। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ২৩নং ওয়ার্ডটিতে এবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত প্রার্থী হিসেবে চার জনের নাম জানা গেছে। তবে এদের মধ্যে থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও জামায়াত ইসলামী সহ তিন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক কমিশনার এমরান চৌধুরী জামাল এবং মহানগর জামায়াত ইসলাম’র নেতা মো. মিজানুর রহমান। এদের মধ্যে মিজানুর রহমানকে বিএনপি ও জামায়াত ইসলাম থেকে সমর্থন জানানো হলেও অপর দুই প্রার্থীর কাউকেই সমর্থন দেয়নি আওয়ামী লীগ। অবশ্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষনার পূর্বে দল থেকে এমরান চৌধুরী জামালকে সমর্থন দেয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেলেও পরবর্তীতে ঘোষনা পত্রে ওয়ার্ডটি উম্মুক্ত দেখা যায়।

জানা যায়, বর্তমান কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার ২০১৩ সালে প্রথম নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। ওই নির্বাচনে ২ হাজার ৩৭০ ভোট পেয়ে সাবেক কাউন্সিলর মরহুম রেজভী চৌধুরীর নিকট পরাজিত হন তিনি। এর পর কাউন্সিলর রেজভী চৌধুরীর মৃত্যুতে ওই ওয়ার্ডটিতে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে ৩ হাজার ১৫১ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন বাহার। এবারের আসন্ন সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন এনামুল হক বাহার।

ওয়ার্ডের ভোটারদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, এনামুল হক বাহার প্রায় দেড় বছর কাউন্সিলর’র দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু তার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ওয়ার্ডটিতে তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। বরং গত দেড় বছরে ওয়ার্ডটিতে মাদকের ভয়াবহতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ওয়ার্ডটির বিভিন্ন স্থানে বর্তমানে ২২টি মাদকের স্পট রয়েছে। সব থেকে বড় যে স্পটটি রয়েছে তা বর্তমান কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার’র এলাকাধীন ঈশাখা সড়কে। ফলে ওয়ার্ডে মাদকের ভয়াবহতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০১৪ সালে মাদক সহ যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বর্তমান কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার। ওই মামলায় তাকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড, ২ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের কারাদন্ড দেয় আদালত। ওই মামলায় কয়েকদিন জেলেও থাকতে হয় তাকে। তবে পরবর্তীতে উচ্চ আদালত থেকে অস্থায়ী জামিন নিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আসে বাহার। এর বাইরে সাগরদী বাজার থেকে চলাচলকারী অবৈধ অটোরিক্সার স্ট্যান্ড থেকে অটো প্রতি ট্রিপে ২০ টাকা করে চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে তার লোকেদের বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় বতমান কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার’র সাথে। একাধিকবার ফোন করার পরে তিনি কল রিসিভ করলেও মিটিং এর ব্যস্ততা দেখিয়ে দেখা কিংবা কথা বলতে রাজি হননি।

অবশ্য ২৩নং ওয়ার্ডে ডামি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করা এনামুল হক বাহারের শ্যালক মো. শামীম বলেন, মাত্র দেড় বছরের ওয়ার্ডটিতে আমরা যে উন্নয়ন করেছি, তা ইতিপূর্বে কোন প্রার্থীই করতে পারেনি। এলাকার বর্ধিতাংশ তাজকাঠি এবং খান সড়কে বিদ্যুৎ’র ব্যবস্থা ছিলো না। কাউন্সিলর বাহার’র প্রচেষ্টায় ওই দুটি এলাকায় বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে ৫টি ব্রিজ নির্মান কাজ শুরু করা হয়। যার মধ্যে একটির কাজ শেষ করে তা হস্তান্তর করা হয়েছে। দু’টির কাজ শেষ পর্যায়। অপর দু’টির কাজও চলমান রয়েছে। নির্মান ও সংস্কার করা হয়েছে অনেক রাস্তা। এখন যে অসম্পন্ন উন্নয়ন রয়েছে সেগুলো সম্পন্ন করার জন্যই এনামুল হক বাহার পুনরায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে তার শ্যালক শামীম জানিয়েছেন। এমনকি বিজয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী দাবী করে শামীম বলেন, বাহারের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় আমি মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলাম। এখন যেহেতু প্রার্থী হিসেবে সে টিকে গেছে সে জন্য মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন বলে শামীম জানিয়েছেন। তবে, তরুণ ও যুবকদের বেশিরভাগ অংশ বাহারের সাথে রয়েছে বলেই অনেক ভোটার জানিয়েছেন।

এদিকে ওয়ার্ডটিতে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, প্রার্থী হিসেবে মোটামুটি ভালো অবস্থানে রয়েছেন বরিশাল পৌরসভার সাবেক কমিশনার এমরান চৌধুরী জামাল। প্রচার প্রচারনার দিক থেকেও তিনি এগিয়ে আছেন। ২৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মরহুম রেজভী চৌধুরীর বড় ভাই এমরান চৌধুরী জামাল আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় সমর্থন চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারনে ২৩নং ওয়ার্ডে কাউকে সমর্থন দেয়নি আওয়ামী লীগ। তবে তার পরেও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বিশাল একটি অংশ এমরান চৌধুরী জামালকেই সমর্থন জানিয়েছেন বলে দাবী করেছেন তিনি।

তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, ২৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য এবং একই ওয়ার্ডে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক এমরান চৌধুরী জামাল বরাবরই মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ১৯৯৫ সালে সাবেক পৌরসভার আমলে কমিশনার ছিলেন তিনি। এর পর বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ঘোষনার পরে টানা ৪ বছর কাউন্সিলর’র দায়িত্ব পালন করেন ওয়ার্ডটিতে। ২০০৩ সালে বিসিসি’র প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এমরান চৌধুরী জামাল। কিন্তু ওই নির্বাচনে পরাজিত হন তিনি। এরপরে ভাই রেজভী চৌধুরী নির্বাচন করায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার পথ থেকে সরে দাড়ান এমরান চৌধুরী।

তিনি বলেন, আমার ভাই রেজভী চৌধুরী কাউন্সিলর থাকাবস্থায় অবহেলিত এই ওয়ার্ডটিতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। ইসলাম পাড়ায় ঈদগাহ ময়দান, দরগাহ বাড়ি, চাপরাশী বাড়ি, নমশুদ্ধপাড়া’র আংশিক ও সাগরদী ব্রাঞ্চ রোড সংস্কার ও উন্নয়ন করেছে। যার সুফল ভোগ করছে ওয়ার্ডবাসী। তার করা উন্নয়নের কারনেই বর্ধিত এলাকার মানুষ রাস্তা দিয়ে হাটতে পারছে। কিন্তু তার মৃত্যুর পরে ওয়ার্ডটিতে কোন উন্নয়নই হয়নি। বরং গত দেড় বছরে মাদকের বিস্তার ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকার যুব সমাজের হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে মরন ঘাতক ইয়াবা। যার পেছনে বর্তমান কাউন্সিলরের হাত রয়েছে বলে মানুষ বলাবলি করছে। ওয়ার্ডটিতে মাদকের ছোবলের কারনে বেকারত্ব কয়েকগুন বেড়েছে।

তিনি বলেন, আমার ছোট ভাই রেজভী চৌধুরী’র অনেক অসমাপ্ত উন্নয়ন রয়েছে। যার মধ্যে অনেক উন্নয়ন কাজ অর্ধপথে থাকাবস্থায় রেজভী মারা যায়। কিন্তু নতুন কাউন্সিলর এসে সেই সড়কের কাজ শেষ করার বিষয়ে তদারকি করেনি। যে কারনে ঠিকাদার কাজ না করেই বিল তুলে নিয়েছে। যার প্রমান ইসলামপাড়া ড্রেন। সেখানে কাজ না হওয়ায় মল-মুত্র, আবর্জনা আর জলাবদ্ধতার কারনে মানুষ পথ চলতে পারছে না। সে দিকে বর্তমান কাউন্সিলরের দৃষ্টি নেই। তাই আমার ভোট ভাইয়ের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতেই আমি ২৩নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। এলাকাবাসী মাদকের থেকে রক্ষা পেতে আমাকে এক প্রকার জোর করেই নির্বাচনে নামিয়েছে। আমার বিশ্বাস জনগনই আমাকে নির্বাচিত করবে। আর আমি নির্বাচিত হতে পারলে প্রশাসন এবং এলাকাবাসিকে সাথে নিয়ে সবার আগে ২৩নং ওয়ার্ডকে মাদক মুক্ত করবো। এছাড়া অবহেলিত ওয়ার্ডটিকে উন্নয়নের মাধ্যমে একটি নতুন রূপে নিয়ে আসবো।

অপর দিকে ওয়ার্ডটিতে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জামায়াত নেতা মো. মিজানুর রহমান। সরদারপাড়া শরীফ বাড়ির বাসিন্দা, মহানগর জামায়াতের সদস্য ও সদর উপজেলার চরবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান এই প্রথমবারের মত নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, সমাজ খারাপের দিকে যাচ্ছে। মানুষের নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটছে। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী ও মাদকের বিস্তার ঘটছে ওয়ার্ডটিতে। তাই সামাজিক অবক্ষয় থেকে মানুষকে সু-পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টার একটি অংশ এই নির্বাচন। তাছাড়া ২৩নং ওয়ার্ডটি দীর্ঘ দিনের অবহেলিত। উন্নয়ন বঞ্ছিত এই এলাকার মানুষ।

তিনি বলেন, আমি জামায়াতের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছি। তাছাড়া এখানে বিএনপি’র প্রার্থী না থাকায় বিএনপি’র পক্ষ থেকেও আমাকে সমর্থন জানিয়েছে। পাশাপাশি আমি এলাকাবাসীর ভোট প্রত্যাশী। আমার বিশ্বাস একটি শিক্ষিত ও মাদক মুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে ওয়ার্ডবাসী আমাকে ভোট দিবে। আর আমি নির্বাচিত হতে পারলে আমার ওয়ার্ডকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাদক মুক্ত করে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন করবো।

জামায়াত নেতা এই প্রার্থী’র দাবী অনুযায়ী ২৩নং ওয়ার্ডটি বিএনপি’র ভোট ব্যাংক। এখানে জামায়াত এবং বিএনপি’র দুই হারের মত রিজার্ভ ভোট রয়েছে। যা অনুকুলে যাবে না। আওয়ামী লীগের বিপক্ষে বিজয়ের জন্য রিজার্ভ ভোটের গুরুত্ব দিচ্ছেন জামায়াতের ওই প্রার্থী।

এই বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT