নাটক ও সংস্কৃতির অন্তঃপ্রাণ মানুষ সৈয়দ দুলাল এর আজ জন্মদিন নাটক ও সংস্কৃতির অন্তঃপ্রাণ মানুষ সৈয়দ দুলাল এর আজ জন্মদিন - ajkerparibartan.com
নাটক ও সংস্কৃতির অন্তঃপ্রাণ মানুষ সৈয়দ দুলাল এর আজ জন্মদিন

7:34 pm , July 2, 2018

নাটক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে যিনি বরিশালকে আন্দোলিত করে রাখেন, দেশ-বিদেশে যার এমন খ্যাতি -সেই নাটক ও সংস্কৃতির অন্ত:প্রাণ মানুষ সৈয়দ দুলাল এর আজ (৩ জুলাই) ৬৫তম জন্মদিন। সৈয়দ দুলাল বরিশালের অন্যতম নাট্য সংগঠন শব্দাবলী গ্রুপ থিয়েটার এর সভাপতি। শৈশবে পিতা সৈয়দ আলতাফ হোসেনের সৌখিন নাট্য চর্চা দেখে নাটকের প্রতি আগ্রহী হন। এরপরে বরিশালে নাটকের প্রাণপুরুষ প্রয়াত আকবর হোসেনের সংস্পর্শে এসে তৎকালীন সময়ে গড়ে ওঠা বরিশালে গ্রুপ থিয়েটার চর্চার প্রথম সংগঠন খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটারে কাজ শুরু করেন। বরিশালে দর্শনীর বিনিময়ে মঞ্চায়িত প্রথম নাটকে অভিনেতা ছিলেন সৈয়দ দুলাল।

পরবর্তীতে শব্দাবলীর প্রতিষ্ঠালগ্নে বন্ধু শাহনেওয়াজ ও মরহুম হুমায়ুন কবীর সেলিমের উৎসাহে শব্দাবলীতে যোগ দেন। খুব সল্প সময়ের মধ্যেই এ অঙ্গনের সকলের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন। কিছুদিনের মধ্যে শব্দাবলীর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বেশ কয়েকবছর কাজ করার পর নিজের রুটি রুজির প্রয়োজনে বিদেশে চলে যায়। বিদেশে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান আয়োজিত নির্দেশনা বিষয়ক কর্মশালায় অংশ নেন।

সেই কর্মশালায় তিনি ধারণা পান স্টুডিও থিয়েটারের। এরপর তিনি দেশে ফিরে এসে ১৯৯১ সালের ৩১ ডিসেম্বর ‘মেষ ও রাক্ষস’ নাটকের মঞ্চায়নের মধ্যদিয়ে শব্দাবলীতে স্টুডিও থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। এ ক্ষেত্রে বলতে হয় সৈয়দ দুলাল বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ স্টুডিও থিয়েটারের প্রবর্তকের আসনটি অর্জন করেছেন। শব্দাবলীতে তিনি সবচেয়ে বেশী সময় ধরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বরিশালে শিশুদের নিয়ে নাটকের কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন শব্দাবলী’র শিশু থিয়েটার।

ব্যক্তি জীবনে সৈয়দ দুলাল একজন ব্যবসায়ী। সেইসাথে তিনি বরিশালের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প ও সংস্কৃতির পটরেখায় মাসিক আনন্দ লিখন পত্রিকার সম্পাদনা করছেন। এর আগে বরিশালের অন্যতম আঞ্চলিক দৈনিক আজকের পরিবর্তন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। সহধর্মিনী রেহানা সৈয়দ রুনু। ছেলে সৈয়দ শুভ এবং মেয়ে ইপশিতা নীতি এই নিয়ে বটতলা মীরা বাড়িতে পৈতৃক ভিটায় তাঁর সংসার। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে সৈয়দ দুলাল পরিবারের বড় ছেলে। সৈয়দ দুলালের জন্ম ১৯৫৩ সালে ৩ জুলাই। শিক্ষাজীবন শুরু করেন নব আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৬৯ সালে বরিশাল এ কে স্কুল থেকে এস এস সি, ১৯৭২ সালে সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ থেকে এইচ এস সি এবং ১৯৭৬ সালে বি. এ (পাস) পাশ করেন।

সৈয়দ দুলাল শব্দাবলীর বাইরে বরিশাল সাংস্কৃতিক অংগনের সার্বজনীন সংগঠন বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদে দীর্ঘ ১১ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর কর্ম তৎপরতায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সার্বিক সচলতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৯৩ সালে বরিশালে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সৈয়দ দুলাল এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। প্রথমে আহবায়ক পরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০২ পর্যন্ত। তিনি নির্বাহী কমিটির সভাপতি মন্ডলীর সদস্য হিসেবে পর পর তিনবার নির্বাচিত হন। আন্তর্জাতিক নাট্যসংস্থা ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আই.টি.আই) বাংলাদেশ কেন্দ্রের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সৈয়দ দুলাল এ যাবৎ চারবার আন্তর্জাতিক নাট্য সম্মেলনে যোগ দেন। ২০০০ সালে আইটিআই-এর আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ফ্রান্সে দেশবরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ও রামেন্দু মজুমদারের সাথে যোগদেন এবং ইটালী, জার্মানীসহ ইউরোপ মহাদেশের বেশকয়েকটি দেশের নাট্যোৎসবে যোগদেন। ২০১৪ সালে আর্ন্তজাতিক নাট্য সম্মেলন আর্মেনিয়ায় যোগদেন।

নাটকে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০০৩ সালে ঢাকা নান্দনিক অজিত চট্টোপাধ্যায় পদকে ভূষিত করেন। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য ঢাকা পদাতিক প্রবর্তিত আবুল কাসেম দুলাল পদক লাভ করেন। এছাড়া প্রজন্ম নাট্যকেন্দ্র প্রবর্তিত দেবেন্দ্র পদক, অমৃত একাডেমি প্রবর্তিত দানবীর অমৃত পদক, সামাজিক প্রতিষ্ঠান সকাল-সন্ধ্যা পদক, ব্রজমোহন থিয়েটার প্রবর্তিত অশ্বিনী পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী প্রবর্তিত সম্মাননা-২০১৩ এবং ২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার নাট্যপদক লাভ করেন।

তাঁর লিখিত নাটকগুলোর মধ্যে ‘‘জীবন্ত পোষ্টার’’ এবং ‘‘একাত্তর এবং ইত্যাদি’’ উল্লেখযোগ্য। তার নির্দেশনায় নাটকের সংখ্যাও অনেক। চর্যাপদের উপর লেখা সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ নাটক নির্দেশনা দিয়ে বিপুল প্রশংসা অর্জন করেছেন। তাঁর অসংখ্য অভিনিত নাটকের মধ্যে মেষ ও রাক্ষস, বাজলো রাজার বারোটা, একজন নাবিক ও একটি শঙ্খচিল, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় উল্লেখযোগ্য। শিশুদের টেলিভিশন অনুষ্ঠান সিসিমপুর এ গুণী ময়রার চরিত্রে অভিনয় করে তিনি শিশুদের প্রিয় মানুষে পরিণত হয়েছেন।

সৈয়দ দুলালের সংস্কৃতিচর্চা প্রশংসার দাবী রাখে। সাংস্কৃতিক অংগনের যেকোন আন্দোলন সংগ্রামে তাঁর মূখ্য ভূমিকা সকলকে অনুপ্রাণিত করে। এছাড়া যে কোন সাংস্কৃতিক কর্মীর বিপদে, দুঃখ দুদর্শায় তাঁকে পাওয়া যায় আপনজন ও অভিভাবকের মতো। দীর্ঘ হোক তাঁর পথচলা। খবর বিজ্ঞপ্তির।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT