7:33 pm , July 2, 2018

রুবেল খান ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন তিন প্রার্থী। যারা তিনজনই মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই কার্যক্রমে প্রার্থী হিসেবে বহাল রয়েছেন। এরা হলেন আনিছুর রহমান দুলাল, সাবেক কাউন্সিলর আ.ন.ম সাইফুল আহসান আজিম ও তানভীর হোসেন রানা। এদের মধ্যে দুলাল এবং আজিম পৃথক দুই রাজনৈতিক দলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও রানা স্বতন্ত্র। তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনিছুর রহমান দুলাল এবং বিএনপি’র আ.ন.ম সাইফুল আহসান আজিম’র মধ্যেই লড়াই হবে বলে আশাবাদী ভোটাররা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থীত প্রার্থী আ.ন.ম সাইফুল আহসান আজিমকে পরাজিত করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন মো. শহীদুল ইসলাম। তবে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না বর্তমান কাউন্সিলর। যে কারনে ওয়ার্ডটিতে প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনী মাঠ অনেকটাই ফাঁকা। সেই সুযোগটাই নেয়ার চেষ্টা করছেন গতবারের নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা সাবেক কাউন্সিলর আ.ন.ম সাইফুল আহসান আজিম।
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে তিনি জানান, ২০০৩ সালে প্রথম ২২নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রায় দুই হাজার ভোট পেয়ে প্রথম হন তিনি। তবে ২০১৩ সালের নির্বাচনে শহীদুল ইসলামের কাছে পরাজিত হতে হয় তাকে।
নগরীর উত্তর জিয়া সড়কের বাসিন্দা ও মহানগর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের সাবেক এজিএস আ.ন.ম সাইফুল আহসান আজিম বলেন, গত পাঁচ বছর আমি কাউন্সিলর ছিলাম না। ওয়ার্ডবাসী আমাকে বাদ দিয়ে অন্যকে প্রার্থী করেছেন। সেটা যে তাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো তা এবার বুঝতে পেরেছে। কেননা বর্তমান কাউন্সিলরের বেশিরভাগ সময় কেটেছে রাজধানীতে। যে কারনে উন্নয়নের প্রতি তার আগ্রহ ছিলো না বলেই চলে। যার ফলে ওয়ার্ডবাসীকে জলাবদ্ধতা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সহ নানান দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ওয়ার্ডটির বর্ধিতাংশে এখনো ৩০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সেবা পাচ্ছে না। অন্ধকারে কাটছে তাদের দিন-রাত। ওয়ার্ডের মধ্যে এমন বহু সড়ক রয়েছে যা এখনো কাঁচা। বর্ষা মৌসুমে হাটু সমান কাঁদা-পানির মধ্যে দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর সেনিটেশন ব্যবস্থাতো রয়েছেই।
তিনি বলেন, বিগত নির্বাচনে আমি পরাজিত হলেও ওয়ার্ডের জনগনের সাথে আমার সম্পর্কের দুরত্ব হয়নি। বরং মানুষের মৌলিক অধিকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান সহ সার্বিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছি। যে কারনে ওয়ার্ডের মানুষও আমাকে তাদের কাছের মানুষ হিসেবে বেছে নিয়েছে। তারা আমাকে পুনরায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য বলেছে। এজন্যই আসন্ন সিটি নির্বাচনে আমি ২২নং ওয়ার্ড থেকে পুনরায় প্রার্থী হয়েছি।
তিনি বলেন, আমি চাই প্রান্তিক ভোট, গণমানুষের অধিকার। সাধারণ মানুষের এই অধিকার বাস্তবায়ন হলে আমি বিজয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী। আর আমি নির্বাচন নিয়ে অন্যন্যদের মত ইস্তেহার দিতে চাই না। জনগনের চাওয়া পাওয়া এবং দাবীই হবে আমার ইস্তেহার।
অপরদিকে ওয়ার্ডটিতে এবারের নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মো. আনিছুর রহমান দুলাল। একমাত্র প্রার্থী হিসেবে তাকেই নির্বাচনে দলীয় সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড। তাই এবারের নির্বাচনে ২২নং ওয়ার্ডটি আওয়ামী লীগের ঘরেই থাকবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং সমর্থকরা। এমনকি তার বিষয়ে আশাবাদী স্থানীয় ভোটাররাও। যদিও ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ৬০৭ ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থানে ছিলেন আনিছুর রহমান দুলাল।
বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও বিরোধী আমলে বারবার পুলিশের হামলা-মামলা ও কারা নির্যাতিত আনিছুর রহমান দুলাল বলেন, আমি নির্বাচনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে প্রার্থী হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কেননা যেই ৩০ জুলাই ভোট গ্রহন সেই ৩০ জুলাই আমার আদরের সন্তানের দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী। যে কারনে আমি মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারিনি। কিন্তু তার পরেও আওয়ামী লীগের তৃনমুল নেতা-কর্মীরা একমাত্র প্রার্থী হিসেবে আমাকেই সমর্থন দিয়েছে। তাদের দাবী পূরন করতেই আমাকে নির্বাচন করতে হচ্ছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে সর্বনি¤œ ভোট পেয়ে পরাজিত হওয়া প্রসঙ্গে আনিছুর রহমান দুলাল বলেন, পূর্বের আর বর্তমান প্রেক্ষাপট এক নয়। আমরা আওয়ামী লীগ এখন ঐক্যবদ্ধ। যতটুকু দুরত্ব ছিলো সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে দলের মনোনয়ন দেয়ায় তাও ঘুচে গেছে। তাই অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে আমরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ খুবই শক্তিশালী। ২০০৮ সালে যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি তখন দলের মধ্যেই ঐক্য ছিলো না। দলের ভোটাররাও অন্য প্রার্থীকে ভোট দিয়েছি। যে কারনে পরাজিত হতে হয়েছিলো। কিন্তু বিগত দিনের তুলনায় এবারে আমাদের ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র ভোটার প্রায় সমান। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ফরম পুরন করা আড়াই হাজার কর্মীই রয়েছে। যারা আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী।
তিনি বলেন, শুধু আওয়ামী লীগই নয়, ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের ভোটের বিষয়েও আমি আশাবাদী। কেননা ২০০৮ সালের পরে নির্বাচনে না আসলেও ওয়ার্ড ভিত্তিক রাজনীতি এবং সকল ধরনের সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। ওয়ার্ডে মাদক বিরোধী কার্যক্রম সহ অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভুমিকা রাখার চেষ্টা করেছি। যে কারনে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগই নয়, ওয়ার্ডের মুরুব্বী সমাজও আমাকে একমাত্র যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাছাড়া ইতিপূর্বে আওয়ামী লীগ থেকে কোন প্রার্থী দেয়া হয়নি এই ওয়ার্ডে। যে কারনে এখানকার ভোটাররা ভালো কোন প্রার্থী না পাওয়ায় যাকে তাকেই ভোট দিয়েছে। কিন্তু প্রথম বারের মত আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রার্থী দিয়েছে। যে কারনে ওয়ার্ডবাসীর মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তারা এখন পরিবর্তনের চিন্তা করছে। মাদক মুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।
আনিছুর রহমান দুলাল আরো বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি’র কাজ সমাজ উন্নয়নে কাজ করা। নির্বাচিত হতে পারলে আমার প্রথম কাজই হবে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। ওয়ার্ডের সর্বস্তরের মানুষকে সাথে নিয়ে মাদক নির্মুলে কাজ করবো। তাছাড়া ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতার সমস্যা রয়েছে। তা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাস্তা নির্মান, মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ার জন্য কাজ করবো। কেননা উন্নয়ন একমাত্র আওয়ামী লীগই করতে পারে। বিগত সময়ে শওকত হোসেন হিরন মেয়র থাকাবস্থায় বরিশাল নগরীকে উন্নয়নের রোল মডেল করতে পেরেছিলেন। কারন তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের মেয়র। এবার নির্বাচনে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আমরা আশাবাদী তিনিই মেয়র নির্বাচিত হবেন। তিনি নির্বাচিত হলে আমরাও ওয়ার্ড পর্যায়ে উন্নয়নের রোল মডেল গড়ে তুলতে পারব বলে দাবী করেন আনিছুর রহমান দুলাল।
এদিকে ওয়ার্ডটিতে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তানভীর হোসেন রানা। তিনি এই প্রথম বারের মত নির্বাচনে অংশ নিলেও তার বাবা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি জামাল হোসেন সিকদার ছিলেন সাবেক বরিশাল পৌরসভার কমিশনার। এমনকি তিনি বাকসু’র জিএসও ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার ছেলে তানভীর হোসেন রানা। নবগ্রাম রোড সিরাজী ভবনের বাসিন্দা রানা বলেন, আমি কোন দল চিনিনা। একজন সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছি। নির্বাচিত হতে পারলে ওয়ার্ডটিকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেন এই প্রার্থী।
তবে প্রার্থী তিনজন যে যার আশা ব্যক্ত করলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র মধ্যেই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। তার মধ্যে থেকে তানভীর হোসেন রানা’র প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারনে বিএনপি’র প্রার্থী আ.ন.ম সাইফুল আহসান আজিম’র ভোট কমার আশংকাও করছেন বিশেষ মহল।