6:51 pm , July 1, 2018
রুবেল খান ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে ২১নং ওয়ার্ডে দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছর একক আধিপত্য ধরে রেখেছেন বর্তমান কাউন্সিলর ও সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র আলহাজ্ব আলতাফ মাহমুদ সিকদার। ১৯৯৫ সালে তৎকালিন বরিশাল পৌরসভার আমল থেকে বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের ওই ওয়ার্ডটিতে দক্ষতার সাথে নির্বাচিত কাউন্সিলর’র দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। শীর্ষ স্থানীয় পর্যায়ের একজন বিএনপি নেতা হলেও তার ব্যক্তি ইমেজ আর সর্বমহলে জনপ্রিয়তার কাছে বার বারই পরাস্থ হচ্ছে একের পর এক প্রার্থী। তার কাছে কেউই পাত্তা পায়নি। তারপরেও বিজয়ের শতভাগ নিশ্চয়তা নিয়ে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বর্তমান কাউন্সিলর আলহাজ্ব আলতাফ মাহমুদ সিকদারের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শেখ সাঈদ আহমেদ মান্না। এর বাইরে বর্তমান কাউন্সিলরের পরিবার থেকে আরো একজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তিনি হলেন কাউন্সিলর আলতাফ মাহমুদ সিকদারের বড় ভাই সিরাজ আলম সিকদারের ছেলে আরিফুল ইসলাম সুমন। অবশ্য এই প্রার্থী নির্বাচনের ডামি প্রার্থী বলে মনে করছেন ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ১৯৯৫ এর পূর্বে খাল আর জঙ্গলে ভরপুর ছিলো নগরীর ২১নং ওয়ার্ডটি। যেখানে সন্ধ্যা নেমে আসলেই শেয়ালের হুংকারে ভীত হয়ে পরতো আশেপাশের মানুষ। বিষধর সাপ সহ বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ারদের অভয়ারন্য ছিলো। ১৯৯৪ সালে বরিশাল পৌরসভা নির্বাচনে কমিশনার নির্বাচিত হয়ে ওয়ার্ডটি’র দায়িত্ব গ্রহন করেন আলতাফ মাহমুদ সিকদার। সেই থেকেই পরিবর্তন আসতে শুরু করে ওয়ার্ডটিতে। ১৯৯৫ সালে দায়িত্ব গ্রহনের পরে বর্তমান ২০১৮ পর্যন্ত টানা প্রায় ২৪ বছরে অক্সফোর্ড মিশন রোড, গোরস্থান রোড, বৈদ্যপাড়া সহ গোটা ২১নং ওয়ার্ডের চেহারা পাল্টে দেন আলতাফ মাহমুদ সিকদার। বর্তমানে ওয়ার্ডটি’র এমন কোন সড়ক নেই যেখানে উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীন ১১টি প্রধান সড়ক সহ লিংক সড়ক গুলোও কার্পেটিং কিংবা আরসিসি রাস্তায় রুপ নিয়েছে। উন্নতি হয়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থার। ওয়ার্ডটিতে সব মিলিয়ে ৩৩৬টি ড্রেন নির্মান করেন তিনি। তাছাড়া ১৯৯৫ সালে প্রজেক্ট’র মাধ্যমে ওয়ার্ডটিতে স্যানিটেশন ব্যবস্থা শুরু করেন বর্তমান কাউন্সিলর। সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ওয়ার্ডটিতে শতভাগ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে বলে দাবী বর্তমান কাউন্সিলর আলতাফ মাহমুদ সিকদারের।
আলাপকালে তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০১৩ সালে বরিশাল সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। ওই নির্বাচনে আমরা মোট চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। যার মধ্যে সংগৃহিত ৪ হাজার ৩শত ভোটের মধ্যে এক হাজার ৯৭০ ভোটে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাথে তার ভোটের ব্যবধান ছিলো ৭শ’র মত।
তিনি বলেন, টানা ২৪ বছরে ওয়ার্ডটিতে উন্নয়ন হয়নি এমন কোন জায়গা খুঁজে যাওয়া যাবে না। ওয়ার্ডের কোন বসবাসকারী বলতে পারবে না যে তারা কোন সহযোগিতা চেয়ে আমার কাছ থেকে পাননি। আমি উন্নয়ন এবং ভালোবাসা দিয়ে মানুষের আপন জন হতে পেরেছি। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে কাউকে কোন কথা দিয়ে রাখিনি এমন কোন নজির খুঁজে পাবে না কেউ।
তিনি বলেন, বিগত ওয়ান ইলেভেনের আমলে সেনা শাসন আমলে বিসিসি’র অনেক কাউন্সিলরই আত্মগোপনে চলে যায়। কিন্তু তখনও আমি আমার অবস্থানেই ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা দুর্নীতি খুঁজে না পাওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র আওলাদ হোসেন দিলু’র আমলে আমাকে রাজস্বের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যা দীর্ঘ ১৯ মাস পালন করেছি। তাছাড়া ২০১৩ সালে শওকত হোসেন হিরন’র পদত্যাগ করার পরে টানা ৩ মাস ৮দিন দায়িত্বপ্রাপ্ত নগর পিতার দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু দায়িত্বপালনকালে কেউ কোন অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি খুঁজে পাননি। এখন ভোটে জেতার জন্য অনেকেই আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করতে পারে। কিন্তু আসল সত্যিটা কি তা এলাকার মানুষ খুব ভালো করেই জানে।
তিনি বলেন, আমার ওয়ার্ডে ভাতা প্রদান নিয়ে কোন অভিযোগ আদৌ ছিলো না আর কেউ করতেও পারবে না। বর্তমানে ৩২ জনকে মাতৃত্বকালীন ভাতা’র ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ২৮০ জন পাচ্ছে বয়স্ক ভাতা। প্রতিবন্ধি ভাতা পাচ্ছে আরো ২৫ জন। আমার বিশ্বাস ওয়ার্ডের মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে। সুষ্ঠু ভোট হলে এবং জনগন সুযোগ পেলে অবশ্যই তারা ৫ম বারের মত আমাকে কাউন্সিলর নির্বাচিত করবে।
অপরদিকে ২১নং ওয়ার্ডে প্রথমবারের মত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ কুতুব উদ্দিন আহমেদের ছেলে শেখ সাইদ আহমেদ মান্না। যিনি বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের আহ্বায়ক ও মহানগর যুবলীগের সদস্য। ওই ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগ থেকে তাকেই সমর্থন জানানো হয়েছে।
আলাপকালে শেখ সাঈদ আহমেদ মান্না বলেন, ১৯৯৯ সালে প্রথম বিএম কলেজ ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচনে সহ-ম্যাগাজিন সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছি। এর পর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছি।
তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিদের কাজ জনগনের সেবা করা। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঘটছে উল্টোটা। নিয়ম না থাকলেও জনপ্রতিনিধিরাই এখন ঠিকাদারী করছেন। কোন প্রকার জবাবদিহিতা ছাড়াই উন্নয়নের নামে অনিয়ম করা হচ্ছে। যে কারনে উন্নয়নের নামে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগন।
তিনি বলেন, ইতিপূর্বে ২১নং ওয়ার্ডে ভালো কোন প্রার্থী ছিলো না। আওয়ামী লীগও কখন তাদের দলীয় প্রার্থী দেয়নি। ভোটাররা ভালো কোন প্রার্থী না পেয়ে বর্তমান কাউন্সিলর আলতাফ মাহমুদ সিকদারকেই বার বার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে আসছে। তবে এলাকার ভোটাররা এখন পরিবর্তন চায়। আওয়ামী লীগ থেকে ওয়ার্ডে প্রার্থী সমর্থন দেয়ায় ভোটারদের মধ্যে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। তাছাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সর্বমহল থেকে আমাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য দাবী জানিয়েছে। তাদের দাবী পুরনের জন্যই আমি প্রার্থী হয়েছি। আর ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ আমার সাথে থাকলে অবশ্যই সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ন ভোটের মাধ্যমে আমি নির্বাচিত হব। আর নির্বাচিত হতে পারলে নগরীর মধ্যে একটি রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলব ২১নং ওয়ার্ডকে। কোন প্রকার ঠিকাদারী বা উন্নয়ন কাজের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করবো। উন্নয়ন সম্পন্নের পূর্বে অবশ্যই স্থানীয় মুরুব্বীদের কাছ থেকে বিল অনুমোদনের পদ্ধতি চালু করবো। এতে করে আমার ওয়ার্ডটি টেকসই ও মজবুত উন্নয়নে উন্নীত হবে।
এদিকে ২১নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আলতাফ মাহমুদ সিকদারের বড় ভাই সিরাজ আলম সিকদারের ছেলে আরিফুল ইসলাম সুমন। অবশ্য তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাবেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অবশ্য বিশেষ মহল বলছে বর্তমান কাউন্সিলরের সাপোর্টিং হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তার ভাতিজা। আলতাফ সিকদারের মনোনয়ন নিয়ে বড় ধরনের কোন জটিলতা দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে প্রার্থী হতে পারেন সুমন। আর তেমন কোন সমস্যা না থাকলে মনোনয়ন প্রত্যহারও করতে পারেন তিনি।