২০ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ক্ষমতাসীন দলের তিন নেতার লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি ২০ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ক্ষমতাসীন দলের তিন নেতার লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি - ajkerparibartan.com
২০ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ক্ষমতাসীন দলের তিন নেতার লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

6:46 pm , June 30, 2018

রুবেল খান ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে এবারের নির্বাচনে জনগুরুত্বপূর্ন ওয়ার্ড হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিচিতি লাভ করেছে ২০নং ওয়ার্ডটি। বিসিসি’র যে দুটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দেয়নি তার মধ্যে একটি ২০নং ওয়ার্ড। কেননা এই ওয়ার্ডটিতে যে তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের হলেও জনসমর্থনের দিক থেকে সমানে সমান। যে কারনে ওই তিন প্রার্থীকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ন হওয়ার নির্দেশ দেয় আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড। তাই ওয়ার্ডটিতে কাউন্সিলর পদে এবারে ত্রিমুখী উত্তেজনাকর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ধরে নিয়েছে ভোটার এমনকি প্রার্থীরাও। আর তাই প্রার্থীদের ব্যক্তি ইমেজ ও স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক সমর্থন জয়-পরাজয়ের কারন হয়ে দাড়াতে পারে।
সরেজমিনে জানাগেছে, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটি ব্যতিক্রম ধর্মী ২০নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে বিএনপি বা অন্য কোন দল থেকে কোন প্রার্থী নেই। তিন প্রার্থী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ’র নেতা। তিন নেতা আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রান। যে কারনে পূর্বে থেকেই ওয়ার্ডটির প্রতি দৃষ্টি ছিলো দলটির নেতা-কর্মীদের। কে পাবেন দলের সমর্থন সে নিয়ে আলোচনাও কম ছিলো না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওয়ার্ডটিতে দলীয় প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য উম্মুক্ত করা হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের তিন নেতা এখন কাউন্সিলর প্রার্থী।
এরা হলেন- বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক এর ভাই ও মহানগর যুবলীগের সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউর রহমান বিপ্লব এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোঃ সাইদুর রহমান ছগির। এদের মধ্যে নির্বাচনে এসএম জাকির ও জিয়াউর রহমান বিপ্লব’র পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলেও প্রার্থী হিসেবে একেবারেই নতুন সাইদুর রহমান ছগির।
জানাগেছে, ২০১৩ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২০নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এসএম জাকির হোসেন। ওই নির্বাচনে ওয়ার্ডটিতে প্রার্থীর সংখ্যা ছিলো মোট ৫ জন। তার মধ্যে ৬৬৫ ভোটে বিজয়ী হন এসএম জাকির হোসেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন জিয়াউর রহমান বিপ্লব।
কাউন্সিলর হওয়ার পরে গত প্রায় পাঁচ বছরে ২০নং ওয়ার্ডে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে দাবী বর্তমান কাউন্সিলর এসএম জাকির হোসেন’র। উন্নয়ন হলেও তাতে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন অনেকে। বিশেষ করে রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঠিকাদারী কাজে অনিয়মের অভিযোগ অনেকেরই। এসব অনিয়মে এসএম জাকির হোসেনের সরাসরিভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ না পেলেও তার লোকজন এসব অনিয়মের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ ওয়ার্ডবাসীর। এমনই একটি অনিয়মের উদাহরন তুলে ধরে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও ভোটাররা। জানিয়েছেন গত বর্ষা মৌসুমে ২০নং ওয়ার্ডের আওতাধীন জাহানারা ইসরাইল স্কুল এর সামনে সড়ক নির্মান করা হয়। সড়কটি নির্মানের একদিন পরেই বৃষ্টিতে তা ধুয়ে যায়। ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ওই রাস্তাটির নির্মান কাজ করেছে স্থানীয় নূর পাভেল। যিনি এসএম জাকির’র ঘনিষ্ট লোক বলে এলাকায় পরিচিত। তাছাড়া বিএম কলেজ এলাকায় হিন্দু সম্পত্তি জবর দখলের অভিযোগ নতুন বাজার এলাকার জাহিদুর রহমান ওরফে চাউল জাহিদের বিরুদ্ধে। যিনি ১৯নং ওয়ার্ড থেকে বিএনপি’র সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে। সেই চাউল জাহিদকে হিন্দু সম্পত্তি জবর দখলে পেছন থেকে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসএম জাকির’র সহযোগিদের বিরুদ্ধে। তবে তিনি বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তার সহযোগী এবং ঘনিষ্ট লোকজনের সন্ত্রাসী এবং দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ডের প্রভাব এসএম জাকিরের নির্বাচনে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
অবশ্য এসএম জাকির হোসেন বলেছেন, আমি ওয়ার্ডবাসির দুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। উপকার করতে না পারি আমার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলতে পারবে না। ওয়ার্ডের অভ্যন্তরে এমন কোন রাস্তা নেই যেখানে উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। এলইডি বাতির আলোতে আলোকিত হচ্ছে রাতের ২০নং ওয়ার্ড। এর বাইরে আরো অনেক উন্নয়নই হয়েছে যা দৃশ্যমান।
তিনি বলেন, এলাকার জনগন আমাকে পুনরায় কাউন্সিলর হিসেবে দেখতে চায়। যার কারনে আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আশা করি সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর সেই নির্বাচনে আল্লাহ’র ইচ্ছায় আমি নির্বাচিত হবো বলে শতভাগ আশাবাদী।
এদিকে কাউন্সিলর পদে দ্বিতীয়বারের মত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন জিয়াউর রহমান বিপ্লব। যিনি ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রচার প্রচারনায় সল্প সময় পেলেও ভোটের লড়াইতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। ওই নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের বিশাল একটি অংশ তার বিপক্ষে কাজ করেছিলো। তবে এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট পুরোটাই ভিন্ন বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। কেননা এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ জিয়াউর রহমান বিপ্লবের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। শুধু তাই নয়, ওয়ার্ডের বিএনপি সহ মুরুব্বি মহলও জিয়াউর রহমান বিপ্লবকে সমর্থন জানিয়েছেন বলে দাবী সংশ্লিষ্টদের। যে কারনে এবারের নির্বাচনে ভোটের আবহাওয়ায় পরিবর্তন আসতে পারে। এছাড়াও বিপ্লবের পারিবারিক ঐতিহ্য এবার ভোটে প্রভাব ফেলবে বলে ওয়ার্ডের অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে তার দুই ভাই ও পাঁচ বোন প্রত্যেকেই উচ্চ শিক্ষিত এবং স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। এটিও বিপ্লবের জন্য ইতিবাচক হবে বলেই ওয়ার্ডবাসী মনে করছেন।
এছাড়াও ২০১৩ সালের নির্বাচনে হেরে গিয়ে ঘরে উঠে যাননি জিয়াউর রহমান বিপ্লব। তিনি ওয়ার্ডবাসীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। অনিয়ম-দুর্নীতি বিরুদ্ধে অবস্থান এবং দরিদ্র মানুষের পাশে দাড়ান। এলাকাভিত্তিক সকল সামাজিক আন্দোলন, অনুষ্ঠান, জন্ম-মৃত্যু সহ সকল ক্ষেত্রে মানুষের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করেন বিপ্লব। যে কারনে এবারের নির্বাচনে তিনি বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাড়িয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলরের বিজয়ের পথে।
জিয়াউর রহমান বিপ্লব বলেছেন, বিগত নির্বাচনে আমার খুঁটিনাটি ভুলত্রুটি ছিলো। যা আমি শুধরে নেয়ার চেষ্টা করেছি। ২০নং ওয়ার্ডের মানুষ পরিবর্তনশীল। তারা এখন পরিবর্তন চাচ্ছে। ওয়ার্ডবাসীই আমাকে দ্বিতীয়বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য অনুরোধ করেছে। মানুষের কথা রাখতেই আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আশা করি ওয়ার্ডবাসি আমার পাশে আছে। তাদের ভোট আর সহযোগিতায় ইনশাআল্লাহ আমি নির্বাচিত হব। ধর্মভীরু বিপ্লবের সাথে এবার মুসুল্লীরা একজোট হওয়ায় জয়ী হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী বিপ্লবের সমর্থকরা।
অপরদিকে ২০নং ওয়ার্ডে ভোটের মাঠে নতুন মুখ সাইদুর রহমান ছগির। আওয়ামী লীগের অনুসারী বিশিষ্ট সমাজ সেবক এলাকার উন্নয়নে ভোটের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছেন। এলাকার মানুষের দাবী পূরনের লক্ষ্যে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকারও ঘোষনা দিয়েছেন তিনি।
ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সমাজ সেবক সাইদুর রহমান ছগির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় ভোটের হিসাব নিকাশ অনেকটাই পাল্টে যাচ্ছে। কেননা বিগত নির্বাচনে গোরস্থান রোড এলাকার ভোটে বিজয়ের ক্ষেত্রে এগিয়ে যান বর্তমান কাউন্সিলর এসএম জাকির হোসেন। কিন্তু এবার গোরস্থান রোড এলাকা থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাইদুর রহমান ছগির। তার এলাকাতেই দেড় হাজারের বেশি ভোট রয়েছে। যে কারনে গোরস্থান রোড এলাকার ভোট এবং প্রার্থীই অন্য প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।
নির্বাচনের নতুন মুখ সমাজ সেবক সাইদুর রহমান ছগির বলেন, আমি নিজের ইচ্ছায় নয়, এলাকাবাসির দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনে এসেছি। এলাকার কয়েকশ’ লোক বিগত ২০১৩ সালের নির্বাচনেও আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বলেছিলেন। কিন্তু আমার পরিবারের সম্মতি না থাকায় নির্বাচনে অংশ নেইনি। এবারেও ওয়ার্ডের মুরুব্বি এবং যুব সমাজ আমাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ধরেছে। তারা আমার পরিবারের কাছ থেকেও নির্বাচনের বিষয়ে অনুমতি নিয়েছে। যে কারনে এলাকাবাসীর কথা রাখতেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমি আশাবাদী এলাকার লোকজন আমার পাশে থাকলে আমি অবশ্যই নির্বাচিত হব।
এদিকে প্রার্থী যারাই হোক, ২০নং ওয়ার্ডে এবারে ভোটের হিসাব নিকাশ পুরোটাই ভিন্ন। এলাকাভিত্তিক হেভিওয়েট প্রার্থীর পাশাপাশি গতবারের তুলনায় এবার প্রার্থীর সংখ্যাও কম। বিগত নির্বাচনে ওয়ার্ডে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো। তাই অল্প ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন বর্তমান কাউন্সিলর। কিন্তু এবার প্রার্থী কমায় বিজয়ের জন্য ভোটের ব্যবধানও বেড়ে গেছে। তাই সেভাবেই হিসাব-নিকাশ করতে হচ্ছে প্রার্থীদের।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT