নগর উন্নয়নে মেয়র প্রার্থীদের ভোটারদের দেয়া প্রতিশ্রুত সংরক্ষন করবে সুজন নগর উন্নয়নে মেয়র প্রার্থীদের ভোটারদের দেয়া প্রতিশ্রুত সংরক্ষন করবে সুজন - ajkerparibartan.com
নগর উন্নয়নে মেয়র প্রার্থীদের ভোটারদের দেয়া প্রতিশ্রুত সংরক্ষন করবে সুজন

6:43 pm , June 30, 2018

মর্তুজা জুয়েল ॥ সিটির মেয়র পদের প্রার্থীদের নগর উন্নয়নে প্রার্থীদের ভোটারদের কাছে দেয়া প্রতিশ্রতি ও ইশতেহার লিখিতভাবে সংরক্ষন করবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। নির্বাচনের ছয় মাস পর প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের চিত্র জনসাধারনের সামনে তুলে ধরা হবে।
সূজনের বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস হোসেন জানান, সুজনের পক্ষ থেকে বিগত নির্বাচনগুলোতে মেয়র প্রার্থীদের নিকট থেকে ইশতেহার গ্রহন করা হয়েছিল। প্রার্থীরা নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকে ইশতেহার প্রদান করে ভোটারদের নিকট অঙ্গিকার করে নির্বাচিত হলে, অঙ্গিকার অনুযায়ী কাজ করবেন এটাই সাধারন ভোটারদের প্রত্যাশা। কেননা “আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশী তাকে দেব” এ শ্লোগান এখন আর নেই। এখন “আমার ভোট আমি দেবো, যেনে শুনে বুঝে দেব” ভোটারদের এ শ্লোগানে সচেতন করছে সূজন। ফলে সকল প্রার্থীর নিকট থেকে সুষ্পষ্ট ইশতেহার ঘোষনা প্রয়োজন। ইশতেহারের মাধ্যমেই একজন প্রার্থী ভোটারদের নিকট তার অঙ্গিকার করেন।
সরকারী বিএম কলেজের অর্খনীতি বিভাগের শিক্ষক মো ঃ আকতারুজ্জামান খান বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার হলো নির্বাচিত মেয়রের ৫ বছরের রোডম্যাপ। নির্বাচিত হলে আগামী ৫ বছর তিনি কিভাবে নগর পরিচালনা করবেন তার রুপরেখা। বরিশালের প্রেক্ষাপটে ওয়ার্ড ভিত্তিক পৃথক উন্নয়ন পরিকল্পনা উঠে আসা উচিত। এখানের এককটি ওয়ার্ডে এক এক রকম উন্নয়নের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে বর্ধিত ওয়ার্ড আর তৎকালীন মূল পৌর এলাকার অংশের উন্নয়নের চাহিদা এক রকম নয়। এছাড়া ইশতেহার বাস্তবায়নের জন্য বাৎসরিক পর্যালোচনার একটি ধাপ থাকতে হবে। সেখানে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী নতুন পরিকল্পনা করা যেতে পারে।
মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন, শুধুমাত্র স্বদিচ্ছা এবং পরিকল্পনার কারনে বিগত মেয়দের ইশতেহারের সামান্যতম বাস্তবায়ন হয়নি। যতটুকো বাস্তবায়ন হয়েছে তা আবার কার্যকর ও টেকসই হয়নি। ভোটাদের মনজয় করতে হলে নগরীর প্রধান সমস্যা গুলো সমাধানের পদ্ধতির রুপরেখা তৈরী করে ইশতেহার প্রকাশ করটা জরুরী। বর্তমানে নগরীতে চলমান সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম সমস্যা বর্ধিত এলাকার অনুন্নয়ন, ড্রেনেজ ব্যাবস্থ্য, জলাবদ্ধতা, যানজট, মাদক বিক্রয় ও সেবন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, মশার উপদ্রপ ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এসকল সমস্যা রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের মত বরিশালে প্রকট নয়। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যক্তিদের স্বদিচ্ছা না থাকা পাশাপশি দক্ষ উদ্যোক্তা রাজনীতীবিদ তৈরী না হওয়ার কারনে এসকল সমস্যা ধীরে ধীরে বড় আকার ধারন করছে। কিন্তু বাস্তবে এসকল সমস্য সমাধানের জন্য স্থানীয় যোগানই যথেষ্ট। কিন্তু পেশী শক্তি তৈরী করা, ভোটের হিসেব ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবানের প্রবনতার কারনে এ সমস্যাগুলো আমাদের অনেক নেতারাই কৌশলে জিইয়ে রেখেছে। আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে এ সকল ইস্যুতে কার কি অবস্থান তা পারিষ্কার করে ইশতেহার ঘোষনা করতে হবে। আমরা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরী করতে পারি কিন্তু অন্য দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় না থাকার কারনে তা চালু করতে পারিনা, ফলে নগরীতে বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরী হচ্ছে। এ সমস্যার জন্যতো আমরাই দায়ী। আমাদের পদধারী মেয়র কিংবা নেতাদের কাজটি কি ? টিয়াখালীর সড়কের হিসাব করে সদড় রোডে অটোরিক্স ছেড়ে দিলে যানযট তৈরী হবেই। গনপরিবহনের যে নীতিমালা রয়েছে তা সিটি মেয়র অন্যান্য প্রশাসনের সহযোগীতা নিয়ে বাস্তবায়ন করবে তাহলেইতো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু তা না করে সমস্যা গুলোকে আরো জটিল করে তোলা হচ্ছে নেতাদের নিজেদের স্বার্থে। এ থেকে বেরিয়ে এসে জনগনের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে প্রার্থীরা ইশতেহার ঘোষনা করবে এটা আমাদের প্রত্যাশা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক তানভীর কায়সার কলেন, নগর বিকেন্দ্রীকরন ছাড়া সুষম উন্নয়ন সম্ভব নয়। মানুষ এখন বর্ধিত এলাকায় জমি কিনছে। ভবিষ্যতে সেখানে বাড়ি নির্মানের স্বপ্ন দেখছে। বিগত মেয়র সেখানে তেমন একটা নজর দেননি। ফলে বর্ধিত এলাকার উন্নয়নের চিত্র প্রভাব ফেলবে আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। ৩০ টি ওয়ার্ডের ১০ টি বর্ধিত ওয়ার্ডের ভোটাররা বিগত সময়ে কতটুকো নাগরিক সেবা পেয়েছেন তার উপর ভিত্তি করে ভোট প্রদান করবেন আসন্ন নির্বাচনে। এক্ষেত্রে উন্নয়ন বঞ্চিত ৩৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৯০ হাজার ভোটারের ভোটে অনেকটাই পরিবর্তান হবে পূর্বের নির্বাচনী ফলাফল। বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলরদের পদে ভোটের প্রভাবসহ মেয়র পদে গত নির্বাচনের ভোটের হিসেব পাল্টে যেতে পারে। সময়ের প্রয়োজনে এখন বর্ধিত এলাকাটি হতে পারে যে কোন প্রার্থীর জন্য ভোট ব্যাংক। যে প্রার্থী বর্ধিত ওয়ার্ডের উন্নয়নের রোড ম্যাপ দিয়ে ইশতেহার ঘোষনা করবেন ভোটাদের মধ্যে তার পক্ষে জনমত তৈরী হবে।
বরিশাল সাংস্কিৃতিক সমন্বয় সংগঠনের সভাপতি কাজল ঘোষ বলেন মেয়র প্রার্থীদের কাছে আমরা এমন ইশতেহার চাই যেখানে, যেখানে যুব ও সংস্কৃতি বান্ধব নগরী বিনির্মানের প্রতিশ্রুতি উঠে আসবে। উন্নয়নের পাশাপাশি সংস্কৃতিবান্ধব নগরী গড়ে ওঠাও প্রয়োজন। ক্রীড়া ও সংস্কিৃতিবান মানুষ গড়ে উঠলে জঙ্গিবাদ নির্মূল হবে এবং সুন্দর নগরী গড়ে তোলা সহজ হবে।
এদিকে আনুষ্ঠানিক প্রচারনা আরম্ভ হওয়ার পূর্বে মেয়র প্রার্ধীরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাদ সাদিক আব্দুল্লাহ বলেছেন, আমরা মহানগনর এলাকার বিভিন্ন সমস্যা জরিপ করেছি। অনেক সমস্য উঠে এসেছে। আমি নির্বাচিত হলে যেখানে সমস্যা সেখানেই উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, মানুঘের জন্য আমি রাজনীতি করি। সে হিসেবে আমি সবসময়েই বরিশাল বাসীর পাশে থাকবো। মেয়র নির্বাচিত হলেও জানগনের জন্য কাজ করবো না হলেও জনগনের জন্য কাজ করবো। এজন্য নির্দিষ্ট কোন ইশতেহার দিতে চাইনা। নগরবাসীর যে কোন সমস্যা সমাধান করাই হবে আমার ইশতেহার।
জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বর্ধিত এলাকার বাশের সাকো ব্যবস্থা বাতিল করে পুল নির্মান করার কথা বলে আসছেন প্রথম থেকে। এছাড়া তিনি নির্বাচিত হলে নিজে দুনীতি করবেন না এবং অন্যাকে দূর্নীতি করতে দিবেনা বলে ঘোষনা করেছেন।
বিএনপি প্রার্থী এ্যাড.মুজিবর রহমান সরোয়ার বলেছেন, নির্বাচিত হলে ট্যাক্স না বাড়িয়ে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন আমি বিশ্বাস করি মেয়রের স্বদিচ্ছা থাকলে টাকা না থাকলেও স্থানীয় যোগানের ভিত্তিতে সুন্দর নগরী গড়ে তোলা সম্ভব। সিটি কর্পোরেশন একটি মিনি পার্লামেন্ট, এখানে মেয়রের সঙ্গে কাউন্সিলর রয়েছেন, ভোটার রয়েছেন। তাদের নিয়ে সুন্দর নগরী গড়ে তোলা সম্ভব। আমি প্রথমবার নির্বাচিত হয়েই কর্পোরেশনের আয়ের জন্য ১১টি মার্কেট নির্মান করেছিলাম সেই টাকায় সিটি কর্পোরেশনের বেতন ভাতা দিয়েছি। এভাবে আয়ের উৎস্য তৈরী করে উন্নয়ন করা সম্ভব। নির্বাচিত হলে কোন ট্রাক্স বৃদ্ধি করা হবেনা বলে তিনি ঘোষনা দেন।
বাসদ প্রার্ধী ডা. মনীষা চক্রবর্তী ইতিমধ্যে লিখিক আকারে নগর উন্নয়ন ও নির্বাচন পরিচালনার পদ্ধতির রূপরেখা প্রকাশ করেছেন। সেখানে প্রশাসনিক দুর্বৃত্তায়ন ও লুটপাটের রাজনীতি বন্ধ করার ঘোষনা দেন তিনি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ হেলালুদ্দিন খান বলেন, ইশতেহার ঘোষনা কোন বাধ্যতামূলক বিষয় নয়। যেহেতু একজন প্রার্থী ভোট প্রত্যাশা করেন, সেক্ষেত্রে ভোটার কেন তাকে ভোট দিবেন এজন্য প্রার্থীরা ভোটারদের প্রতিশ্রুতি বা ইশতেহার দিয়ে থাকেন। আগামী ১০ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারনা আরম্ভ হলে মেয়র প্রার্থীদের নিকট থেকে ইশতেহারে বিস্তারিত ঘোষনা আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT