7:01 pm , June 26, 2018
রুবেল খান ॥ বিসিসি’র ১৮ নম্বর ওয়ার্ডটিকে বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে আখ্যায়িত করছেন স্থানীয়রা। তবে মেয়র প্রার্থীর ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাব থাকলেও কাউন্সিলর নির্বাচনে ব্যক্তি ইজেমের প্রাধান্য পাচ্ছে। যার বাস্তব প্রমান ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মীর একেএম জাহিদুল কবীর। তিনি রাজনৈতিক প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র মহানগর পর্যায়ের দায়িত্বশীল পদে থেকে রাজনীতি করলেও তার প্রভাব পড়েনি নির্বাচনে। যার দরুন সিটি কর্পোরেশন ঘোষনার পর ২০০৩ সাল থেকে টানা ১৫ বছর কাউন্সিলর হিসেবে জনপ্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। তবে এবারের নির্বাচন তার জন্য চ্যালেঞ্চ হতে পারে বলে মনে করছেন ওয়ার্ডের ভোটাররা। কেননা এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মত আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলরের এক সময়ের কর্মী এবং তরুন ছাত্র নেতা। কিন্তু প্রার্থী যেই হোক আসন্ন ৩০ জুলাই’র নির্বাচনে বিজয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী বর্তমান কাউন্সিলর মীর একেএম জাহিদুল কবীর জাহিদ।
জানাগেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ঘোষনার পরে ২০০৩ সালে প্রথম ১৮নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মীর একেএম জাহিদুল কবীর জাহিদ। ওই নির্বাচনে ২২২ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। এর পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। এমনকি সর্বশেষ ২০১৩ সালের নির্বাচনেও বিজয়ের ধারা অব্যাহত থাকে মীর জাহিদের। ওই নির্বাচনে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। জয়ের আশা নিয়ে চতুর্থবারের মত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিবেন বলে জানিয়েছেন মীর একেএম জাহিদুল কবীর জাহিদ।
তিনি বলেন, ওয়ার্ডবাসি আমাকে ভোট দিয়ে টানা ১৫ বছর ১৮নং ওয়ার্ডে তাদের খেদমত করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাই আমিও তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। ওয়ার্ডের উন্নয়নে কাজ করেছি। একমাত্র ১৮ নং ওয়ার্ড যেখানে বাল্য বিয়ে ও মাদক ব্যবসার সুযোগ নেই। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে এ দুটি সামাজিক ব্যাধি থেকে ওয়ার্ডবাসিকে রক্ষা করতে পেরেছি। ১৮নং ওয়ার্ডে উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি এমন যায়গা খুজে পাওয়া যাবে না। রাস্তা-ঘাট, ড্রেন, ফুটপাত এবং পয়নিস্কাসন সহ সকল ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে দিয়েছি। এখন দুটি সড়কের কাজ বাকি আছে। সড়ক দুটি হলো শ্রিনাথ চ্যাটার্জী লেন ও আদম আলী হাজির গলি। এ দুটি সড়কের নির্মান কাজের টেন্ডার হয়েছে। খুব শিঘ্রই কাজ শুরু করা যাবে। সর্বোপরি আমি জনগনের সাথে ছিলাম বিধায় জনগন আমার সাথে আছে। আমাদের ওয়ার্ডের জনগন সচেতন। তারা ভালো-মন্দ চিনতে ভুল করে না। তাছাড়া ওয়ার্ডটিতে ভোটের রাজনীতিতে দলের প্রভাব নেই। ব্যক্তি ইমেজকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন ভোটাররা। সুতরাং সুষ্ঠু ভোট হলে এবারেও আমার বিজয় নিশ্চিত বলে আশাব্যক্ত করেন মীর একেএম জাহিদুল কবীর জাহিদ।
এদিকে ওয়ার্ডের বিশেষ কিছু মহল দাবী করছে এবারের নির্বাচন বিধি অনুযায়ী অযোগ্য হতে পারেন মীর জাহিদ। কেননা তার বিরুদ্ধে একাধিক রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। এমনকি আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে তার নামে। যে মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে। ওই মামলাই তার নির্বাচনে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে। তবে এসব রাজনৈতিক মামলা নির্বাচনের বাঁধা সৃষ্টি করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন এ্যাড. মীর একেএম জাহিদুল কবীর জাহিদ। কিন্তু তার পরেও ঝুকি নিতে রাজি নন তিনি। তাইতো বিগত বছরের ন্যায় এবারেও বিকপ্ল প্রার্থী হিসেবে নিজের সহধর্মীনিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে নামিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার মীর জাহিদ এবং তার স্ত্রী শাহানা কবীর কাউন্সিলর পদে পৃথক দুটি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে মীর জাহিদের মনোনয়নপত্র দাখিল কালে ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ, বিএনপি সহ বিভিন্ন পর্যায়ের ভোটাররা উপস্থিত ছিলেন। কোন কারনে মীর জাহিদের মনোনয়নপত্র বাতিল হলে তার স্ত্রী শাহানা কবীর কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন মীর জাহিদ।
অপরদিকে প্রথমবারের মত ১৮নং ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মিঞা মো. কামরুজ্জামান সোনা এবারের নির্বাচনে বর্তমান কাউন্সিলর মীর জাহিদের বিপক্ষে লড়বেন। কাউন্সিলর পদে এটাই হবে তার প্রথম নির্বাচন। তাই সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছেন তিনি। ১৯৯৬ সাল থেকে চলতি ২০১৮ সাল পর্যন্ত কখনো ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কামরুজ্জামান সোনা ১৯৮১ সালে বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে বাকসু’র ভিপি জাহাঙ্গীর কবির নানক ও জিএস শহীদ খান’র কমিটির নির্বাচিত সদস্য ছিলেন।
মিঞা মো. কামরুজ্জামান সোনা বলেন, ইতিপূর্বে ১৮নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিএনপি’র একক প্রার্থী ছিলো। যে কারনে বর্তমান কাউন্সিলর বারবারই বিজয়ী হয়েছেন। এই প্রথম আমাকে ওয়ার্ডটিতে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য আওয়ামী লীগ থেকে আমাকে প্রার্থী করা হয়েছে। ওয়ার্ডটিতে আমাকে আওয়ামী লীগ থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী করায় মানুষের মধ্যে উৎসহ-উদ্দিপনা দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী দেয়ায় আমি মনে করছি মানুষের মধ্যে স্বতস্ফুর্ত ভাব ফিরেছে।
তিনি বলেন, একজন মানুষ সব সময় যাকে দেখবে তার কথাই সে বলার চেষ্টা করবে। কন্তিু যখন ওই একজনের বাইরে অন্য কাউকে দেখতে পাবে তখন তার দিকেই সবাই ঝুকবে। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে ওয়ার্ডের মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। তাই ওয়ার্ডবাসি আমাকে নির্বাচনে সমর্থন করবে বলে আমার বিশ্বাস। তাছাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, তরুন এবং যুব সমাজ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে আমাকে বিজয়ী করবে বলে আমার বিশ্বাস।
এদিকে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় সমর্থন পেলেও নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী মিঞা মো. কামরুজ্জামান সোনা’র বিজয়ের পথে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে তারই আপন ভাতিজা বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জাবের আবদুল্লাহ সাদী। ওয়ার্ডে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ১৮নং ওয়ার্ডে এবারের নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন জাবের আব্দুল্লাহ সাদী। শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে নিজ ঘরের ভোট হারাতে পারেন আ’লীগের প্রার্থী মিঞা মো. কামরুজ্জামান। তাছাড়া ওয়ার্ডের যুব ও ছাত্র সমাজের বিশাল একটি অংশ জাবের আব্দুল্লাহ সাদীকে সমর্থন দিয়েছে। অবশ্য সাদীর প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন চলল্যেও এখন পর্যন্ত তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি বলে জানাগেছে।
অপরদিকে ১৮নং ওয়ার্ডে মীর জাহিদের সহজ জয়ের পথে বাঁধা হতে পারে যুবদল নেতা মনিরুল ইসলাম। তিনি এক সময় মীর জাহিদের কর্মী হয়ে নির্বাচনে কাজ করলেও এবারে নিজেই কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সামিল হচ্ছেন। এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার মনির হোসেন নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে। তবে মীর জাহিদের জনপ্রিয়তার কাছে নতুন ওই প্রার্থী অবস্থান শূণ্য’র কোটায় বলে মনে করছেন ওয়ার্ডের ভোটাররা। যে কারনে শেষ পর্যন্ত আসন্ন ৩০ জুলাই’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের অপেক্ষা করছেন ওয়ার্ডের প্রায় পাঁচ হাজার ভোটার।