6:07 pm , June 25, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৮টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ঘোষনা করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। শুধুমাত্র ২টি ওয়ার্ড দলীয় প্রার্থীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। ওয়ার্ড দুটি হলো- ২০ ও ২৩। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের চুড়ান্ত করা কাউন্সিলর প্রার্থীদের তালিকা গতকাল সোমবার ঘোষনা করে মহানগর আওয়ামী লীগ। ২৮টি সাধারণ সহ মোট ৩৮টি ওয়ার্ডে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ প্রার্থী হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা এমনকি বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. একেএম জাহাঙ্গীর।
এদিকে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বেশিরভাগ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে তরুনদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টি ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে নতুন মুখ। ইতিপূর্বে যাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভিজ্ঞতা নেই। তাছাড়া ওই ১২টি ওয়ার্ড থেকে কখনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাউন্সিলর হতে পারেনি। বিএনপি ও জামাত পন্থিদের দখলেই রয়েছে ওয়ার্ডগুলো। তাছাড়া আওয়ামী পন্থি ৬ জন বর্তমান কাউন্সিলরকে পুনরায় নির্বাচনের জন্য সমর্থন জানিয়েছে দলটির হাই কমান্ড। মনোনয়ন পাওয়া বাকি ১০ জন ইতিপূর্বে একাধিকার নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। পাশাপাশি সংরক্ষিত ১০টি আসনে যাদের সমর্থন দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ৮ জনই বতর্মান কাউন্সিলর।
মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে প্রাকাশিত দলের মনোননিত প্রার্থীরা হলেন- বিসিসি’র ১নং ওয়ার্ডে দলের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বিশ্বাস। ২নং ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন নিখোঁজ যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম মোনায়েমের ভাই মো. আহসান উল্লাহ মাঈনুল। যিনি ২০১৩ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নেতা এ্যাড. একেএম মুরতজা আবেদীনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। ৩নং ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মৃধা, ৪নং ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপিতে থেকে আওয়ামী লীগে যোগদেয়া সাবেক কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম বাদশা, ৫নং ওয়ার্ডে দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সমর্থন পেয়েছেন ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আনোয়ার হোসেন ছালেক। যিনি ২০০৮ ও ২০১৩ সালে নির্বাচন করেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। ৬নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে নতুন মুখ আক্তারুজ্জামান। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ৭নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম খোকন ওরফে মামা খোকন। যিনি এই প্রথমবারের মত নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যদিও ইতিপূর্বে তিনি নির্বাচনে অংশ নিবেন না বলে দাবী করেছিলেন। তার পরেও দল থেকে তাকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ৮নং ওয়ার্ডে দলের সমর্থন পেয়েছেন হিন্দু-বৈদ্য-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা সুরঞ্জিৎ দত্ত লিটু। প্রথমবারের মত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলা লিটু ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ৯নং ওয়ার্ডে নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলের সমর্থন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুটবলার এএসএম মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম ভূইয়া। ১০নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন দেয়া হয়েছে বর্তমান কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীনকে। ১১নং ওয়ার্ডে সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মজিবর রহমান। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সমর্থন দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. জাকির হোসেন ভুলুকে। ২০১৩ সালে প্রথম নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। এটি তার দ্বিতীয়বার অংশগ্রহন। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মেহেদী পারভেজ খান আবিরকে সমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগ। ১৪নং ওয়ার্ডে সমর্থন পেয়েছেন ক্রীড়াপ্রেমি মো. তৌহিদুর রহমান ছাবিদ। তিনি ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। প্রথমবারের মত তিনি বরিশাল সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন। অবশ্য ইতিপূর্বে ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিলেও রাজনৈতিক চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যেতে পারেনি। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে দলের সমর্থন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেন খান লাভলু। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনের জন্য সমর্থন দেয়া হয়েছে বর্তমান কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মোশাররফ আলী খান বাদশাকে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমান কাউন্সিলর আক্তার উজ্জামান গাজী হিরুকে সমর্থন দেয়া হয়েছে। তিনি টানা ১০ বছর কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালে বিএনপি’র সমর্থন নিয়ে এবং ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হন। ১৮রং ওয়ার্ডে আ’লীগ নেতা মিঞা মো. কামরুজ্জামান সোনা, ১৯নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী নঈমুল হোসেন লিটুকে সমর্থন দেয়া হয়েছে। ২১নং ওয়ার্ডে সমর্থন পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক শেখ সাইদ আহমেদ মান্না। ২২নং ওয়ার্ডে আবদুর রশীদ, ২৪ নং ওয়ার্ডে বরিশাল জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য শরীফ মো. আনিছুর রহমান ওরফে আনিছ শরীফ। তিনি প্রথমবারের মত নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ২৫নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে দলের সমর্থন পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম মনির মোল্লার ভাই এম সাইদুর রহমান জাকির ওরফে জাকির মোল্লা। তিনি প্রথমবারের মত নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ২৬নং ওয়ার্ডে সমর্থন দেয়া হয়েছে জাগুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবিরকে। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। ইতিপূর্বে তিনি নির্বাচন করে পরাজিত হন। এর আগে তার স্ত্রী ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। ২৭নং ওয়ার্ডে দলের সমর্থন পেয়েছেন আবদুর রশিদ হাওলাদার। যিনি মহানগর আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। ইতিপূর্বে একাধিকবার কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তবে কোনবারই নির্বাচিত হননি। ২৮নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন বরিশাল জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। ইতিপূর্বে আরো একবার নির্বাচন করেছিলেন তিনি। ২৯নং ওয়ার্ডে দলের সমর্থন পেয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর মো. ফরিদ আহমেদ। এছাড়া ৩০নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা জলকাদের মোল্লা’র ছেলে আজাদ হোসেন মোল্লা কালাম ওরফে কালাম মোল্লা। বাকি ২০ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে কোন প্রার্থীকেই দলীয় সমর্থন দেয়নি আওয়ামী লীগ। এ দুটি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন প্রত্যাশী ছিলেন বর্তমান কাউন্সিলর এসএম জাকির হোসেন ও গতবারের নির্বাচনে অংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জিয়াউল হক বিপ্লব। ২৩নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়ে আবেদন করেন বর্তমান কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার ও বিগত নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী এমরান চৌধুরী জামাল। দুটি ওয়ার্ডে ওই চারজন প্রার্থী’র জনসমর্থন ভালো হওয়ায় ওয়ার্ডটিতে দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
এছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলরের ১০টি আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থন চুড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২টি আসনে নতুন মুখ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বাকিরা সবাই পুরানো এবং বর্তমান কাউন্সিলর। আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়ারা হলেন- সংরক্ষিত আসন-১ (ওয়ার্ড নং- ১.২.৩) আওয়ামী মহিলা লীগের নেত্রী মিনু রহমান। যিনি ইতিপূর্বে কাউন্সিলর ছিলেন। সংরক্ষিত আসন-২ (ওয়ার্ড নং- ৪.৫.৬) বর্তমান কাউন্সিলর আলমতাজ বেগম, সংরক্ষিত আসন-৩ (ওয়ার্ড নং- ৭.৮.৯) বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কহিনুর বেগম। সংরক্ষিত আসন-৪ (ওয়ার্ড নং- ১০.১১.১২) বর্তমান কাউন্সিলর মাকসুদা আক্তার মিতু, সংরক্ষিত আসন-৫ (ওয়ার্ড নং- ১৩.১৪.১৫) বর্তমান কাউন্সিলর কামরুন্নাহার রোজী, সংরক্ষিত আসন-৬ (ওয়ার্ড নং- ১৬.১৭.১৮) গায়েত্রী সরকার। যিনি প্রথমবারের মত নির্বাচনে অংশগ্রহন করছেন। সংরক্ষিত আসন-৭ (ওয়ার্ড নং- ১৯.২০.২১) বর্তমান কাউন্সিলর সালমা আক্তার শিলা। সংরক্ষিত আসন-৮ (ওয়ার্ড নং- ২২.২৩.২৭) বর্তমান কাউন্সিলর রেশমী বেগম। সংরক্ষিত আসন-৯ (ওয়ার্ড নং- ২৪.২৫.২৬) ডালিম বেগম। যিনি নতুন প্রার্থী। এছাড়া সংরক্ষিত আসন-১০ (ওয়ার্ড নং- ২৮.২৯.৩০) এ বর্তমান কাউন্সিলর রোজী বেগমকে আওয়ামী লীগের সমর্থন দেয়া হয়েছে।