6:48 pm , June 21, 2018

রুবেল খান ॥ আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা আজ। এই সভার মাধ্যমেই নির্ধারন হবে নৌকার প্রার্থী। তাছাড়া আজ-কালের মধ্যেই মেয়র প্রার্থী ঘোষনা করবে বিএনপি। আর তাই মনোনয়ন দৌড়ে সামিল হওয়া দুই দলের ১৪ মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে বিরাজ করছে চরম উৎকন্ঠা। সেই সাথে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র তৃণমুল নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে গোটা বরিশালবাসী। কে হবে আওয়ামী লীগের নৌকা এবং বিএনপি’র ধানের শীষের কান্ডারী সে নিয়ে উৎকন্ঠার শেষ নেই তাদের মধ্যে।
অবশ্য বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। আর বিএনপিতে নতুন চমক হচ্ছেন যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগর বিএনপি’র সভাপতি এড. মজিবর রহমান সরোয়ার। এতে বিএনপি’র প্রার্থী চুড়ান্তে চমক আসছে বলে জানিয়েছেন নগরীর সচেতন মহল। এ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ার দলীয় মনোনয়ন জমা দেয়া ও বোর্ডে সাক্ষাতকার দেয়ায় প্রার্থী চুড়ান্তের সিদ্বান্তে আবারো নতুন চমক সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক ও নির্বাচনের অভিজ্ঞতার বিবেচনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র কান্ডারী কে হবেন ? তা কয়েক ঘন্টার মধ্যে নির্ধারিত হচ্ছে। কারন উভয় দল তাদের মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষনা করবে আজ।
এদিকে নির্বাচনে বিমুখ এড. সরোয়ার শেষ মুহুর্তে এসে চমক সৃষ্টি করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ দিনে তিনি মনোনয়ন সংগ্রহ ও পূরন করে জমা দেন। পরে মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এ বিষয়ে এ্যাড. সরোয়ার জানিয়েছেন, দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে তিনি মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়ে সাক্ষাতকার দিয়েছেন। দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয়, সেক্ষেত্রে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসবেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনের ঘোষনা অনুযায়ী বরিশাল সহ তিন সিটি কর্পোরেশনে প্রথম বারের মত দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ জুলাই। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এই তিন সিটির নির্বাচনকে গুরুত্বের সাথে দেখছে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি। দেশের বৃহৎ দুটি সংগঠনেরই টার্গেট তিন সিটিতে জয়লাভ করা। তাই তো দলীয় প্রার্থী নির্ধারনের শেষ সময়ে চলছে চুল চেরা বিশ্লেষন।
এদিকে নির্বাচনে প্রার্থী নির্ধারনের লক্ষ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুই দলেরই মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার শেষ দিন ছিলো। সে অনুযায়ী বরিশাল সিটিতে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে ইচ্ছুক আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র ১৩ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। যার মধ্যে আওয়ামী লীগের ৫ জন এবং বিএনপি’র ১০ জন। মনোনয়ন ফরম গ্রহন শেষে গতকালই প্রার্থীদের স্বাক্ষাৎকার গ্রহন করেছে দলের হাই কমান্ড। সর্বশেষ আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংক্রান্ত মনোনয়ন বোর্ডের সভার মাধ্যমে প্রার্থী ঘোষনা করা হবে। তাছাড়া বিএনপিও আজ অথবা কালের মধ্যে তাদের ধানের শীষের প্রার্থী ঘোষনা করবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। তাই কেন্দ্রের সিন্ধান্তের অপেক্ষায় রাজধানীর দিকে তাকিয়ে গোটা বরিশালবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বরিশাল সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ সমর্থিত একমাত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও বরিশাল জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক এ্যাড. খান আলতাফ হোসেন ভুলু, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন ও বরিশাল শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন মোহন।
এদের মধ্যে সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার দলের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে তিনি মনোনয়ন ফরম জমা দেন। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুস-এমপি, বিসিসি’র প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরন’র সহধর্মীনি ও বরিশাল সদর আসনের এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. একেএম জাহাঙ্গীর সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীক পেতে মনোনয়ন ফরম দাখিল করেছেন বরিশাল সিটি’র বর্তমান মেয়র মো. আহসান হাবিব কামাল, বিএনপি’র বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ্ব এবায়েদুল হক চান, সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আবুল কালাম শাহীন, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া, বিএনপি’র নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মহানগর বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ নেতা এ্যাড. আলি হয়দার বাবুল, বরিশাল দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি এ্যাড. পারভেজ আকন বিপ্লব ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল মহানগরের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন। এদিকে বিএনপি’র নয় নেতা দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করলেও জমা দিয়েছেন আটজন। মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেও জমা দেয়নি যুবদল নেতা পারভেজ আকন বিপ্লব।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, দুই দল থেকে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও বিভিন্ন কারনে আওয়ামী লীগ থেকে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবং বিএনপি থেকে বর্তমান মেয়র মো. আহসান হাবিব কামাল মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। এ দু’জনই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে বরিশাল সিটি নির্বাচনে দলের টিকেট পাবে বলে আশাবাদী বিশেষ মহল।
এর কারন খোঁজতে গিয়ে জানাযায়, মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। বরিশালের তৃনমুল আওয়ামী লীগের সরাসরি সমর্থন রয়েছে তার বিষয়ে। তাছাড়া বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন’র মৃত্যুর পরে বরিশালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তার প্রচেষ্টায় মহানগর আওয়ামী লীগ একটি শক্ত ভিতে পৌঁছায়। এসব কারনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় হাই কমান্ড সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র প্রতি আস্থাশীল হয়ে পড়েছে। বরিশাল সিটিতে তাকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে আশাবাদী কেন্দ্রের হেভিওয়েট নেতারা। তাছাড়া সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকার অন্য কারন বরিশাল সদর আসনের এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ’র সমর্থন। বিসিসি’র সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন’র সহধর্মী জেবুন্নেছা আফরোজ এমপি ইতিপূর্বে সাদিকের বিপক্ষে মনোভাব প্রকাশ করলেও এখন তিনিও মেয়র পদে সমর্থন জানিয়েছেন সাদিক আবদুল্লাহকে। তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার দাবী জানিয়েছেন তিনি। এসব কারনে মনোনয়ন দৌড়ে সাদিক আবদুল্লাহ’র এগিয়ে থাকার বিষয়ে প্রতীয়মান হয়।
সাংবাদিকদের দেয়া এক বক্তব্যে বরিশাল সদর আসনের এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ বলেন, শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পরে সংগঠনের যেটুকু কাজ করা বা সাংগঠনকে ধরে রাখতে যেটুকু দরকার তা একমাত্র সাদিক আবদুল্লাহই করেছে। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পরে গত চার বছর বিসিসি’র ৩০টি ওয়ার্ডে যতটুকু কাজ করার তা ওই (সাদিক আবদুল্লাহ) করেছে। নেতা-কর্মীদের আগলে রাখা এবং শওকত হোসেন হিরনের যেটুকু অসমাপ্ত কাজ এবং তিলোত্তমা বরিশাল নগরী পরিনত করার ব্যাপারে যতটুকু করা প্রয়োজন আশা করি আমার ছোট ভাই সাদিক আবদুল্লাহ নিশ্চয়ই করবে। আমি শওকত হোসেন হিরনের স্ত্রী হয়ে আমি সাদিক আবদুল্লাহকে সহযোগিতা করবো।
এর পূর্বে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মনোনয়ন ফরম দাখিল শেষে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আমাকে সমর্থন দিয়েছে। তৃনমুল থেকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রার্থী হিসেবে আমার নাম প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু সিদ্ধান্তের মালিক জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যাকে নৌকা দিবেন তার জন্য আমরা মহানগর আওয়ামী লীগ কাজ করতে প্রস্তুত। সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, আমি নির্বাচনের কোন ইস্তেহার দিতে চাই না। বরিশালবাসি, সাধারণ মানুষের চাহিদা পুরনই হবে আমার ইস্তেহার, সেটাই হবে আমার লক্ষ্য।
এদিকে বিএনপি’র দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে বিসিসি’র বর্তমান মেয়র মো. আহসান হাবিব কামাল এগিয়ে ছিলেন। এ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ার আসায় সে পিছিয়ে পড়েছেন। সূত্রগুলো আরো জানায়, ২০১৩ সালের নির্বাচনে আহসান হাবিব কামাল এর বিজয়ে’র পেছনে বিএনপি’র বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগরের সভাপতি আলহাজ্ব এ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ারের অবদান রয়েছে। আসন্ন নির্বাচনেও মজিবর রহমান সরোয়ার আহসান হাবিব কামাল এর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তার পক্ষে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করছেন সরোয়ার। কিন্তু শেষ মুহুর্তে আসায় প্রার্থী চুড়ান্তের সিদ্ধান্ত লন্ডন থেকে আসবে। তাই আপাতত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। ধারণা করা হচ্ছে, মজিবর রহমান সরোয়ার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন না করলে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আহসান হাবিব কামালের পাল্লাই ভারী।