উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন - ajkerparibartan.com
উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন

1:55 pm , June 19, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য ও হাসি-আনন্দের মধ্যে দিয়ে বরিশালে পালিত হয়েছে মুসলমানদের সব থেকে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র ঈদ উল ফিতর। ঈদের দিন নতুন পোশাকে ঈদের নামাজ আদায়, বিরোধ ভুলে পরস্পর ঈদের কোলাকুলি, ফিরনি, সেমাই খাওয়া এবং ঈদ সালামী গ্রহণ সহ বিভিন্ন ধর্মীয় রীতি-নীতি মানুষকে ফিরিয়ে আনে আপন চেতনায়। শিশু-কিশোর সহ বয় বৃদ্ধ পর্যন্ত ঈদের খুশিতে মেতে ওঠে।

তাছাড়া ঈদে বরিশালবাসীকে একটি শান্তিপূর্ন ঈদ উপহার দিতে নিরসলভাবে কাজ করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। নিজেদের ঈদ আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে সাধারণ মানুষকে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা ও নজিরবিহীন নিরাপত্তা দিয়েছেন তারা। বিশেষ করে নগর পুলিশের প্রত্যেকটি সদস্য ঈদের আগে এবং পরে দিন-রাত নিদ্রাহীন বরিশালবাসীর অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে কাজ করেছেন।

এর আগে টানা একমাস সিয়াম সাধনা শেষে ঈদের দিন সকাল হতেই মুসলমানদের প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে ঈদের নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি শুরু হয়। সকাল ৭টার মধ্যেই গোসল শেষে পাক-পবিত্র হয়ে ঈদের নতুন পোশাক, পাঞ্জাবী, পাজামা এবং টুপি মাথায় মসজিদ কিংবা ঈদগাহমুখী হয়। কেননা নগরী সহ জেলার আশাপাশে যেসব ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে তা সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।

এর মধ্যে বরিশাল নগরীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় বান্দ রোডস্থ হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাহ ময়দানে। সকাল ৮টায় সেখানে ঈদের জামাতে ইমামতি করেন নগরীর স্টিমার ঘাট জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মো. শিহাব উদ্দিন বেগ। ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে ঈদগাহ ময়দান প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মিলন মেলায় পরিনত হয়। একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আদায় করেন ঈদের জামাত। ঈদের জামাতে বরিশাল সিটি মেয়র মো. আহসান হাবিব কামাল, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শহীদুজ্জামান, বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. মাহফুজুর রহমান, বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. একেএম জাহাঙ্গীর, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল, জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস, আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম সহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহন করে। ঈদের জামাত আদায় শেষে বিশেষ মোনাজাতে দেশ-জাতির অগ্রগতি, মুসলিম উম্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি ঈদের প্রধান জামাত থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। দোয়া-মোনাজাত শেষে ঈদের প্রধান জামাতে অংশগ্রহনকারীরা একে অপরের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কোলাকুলি এবং ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

এদিকে হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাহ ছাড়াও বরিশাল বিভাগের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে নগরীর অদুরে চরমোনাই পীরের দরবারে। সেখানে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত ঈদের জামাতে ইমামতি করেন চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মু. রেজাউল করিম।

সকাল ৯টায় দ্বিতীয় বৃহত্তর ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় পিরোজপুরের নেছারাবাদ ছারছিনা দরবার শরীফে। এছাড়াও ঝালকাঠি কায়েদ সাহেব হুজুরের দরবার, পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জ মরহুম হযরত ইয়ারউদ্দিন খলিফা (র.) দরবার শরীফ ও উজিরপুরের গুঠিয়া বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্সে সকাল ৯টায় একটি করে বৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বরিশাল নগরীতে জামে কসাই মসজিদ, বায়তুল মোর্কারম জামে মসজিদ ও জামে এবায়েদুল্লাহ মসজিদে দুটি করে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া নগরীর অন্যান্য মসজিদ ও ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৮টা হতে ৯টার মধ্যে একটি করে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকল প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এবং নাশকতা এড়াতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়ে নগরীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান সহ অন্যান্য ঈদগাহগুলো। যে কারনে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে ঈদের নামাজ আদায় শেষে শিশু-কিশোর সহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ নতুন পোশাক গায়ে আপনজনদের নিয়ে ঈদ আনন্দে মেতে ওঠে। আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর নেয়া, ফিরনী, সেমাই এবং পোলাও-মাংস খাওয়া সহ আতিথেয়তায় ব্যস্ত সময় পার করে তারা। তাছাড়া ঈদের দিন নগরীর প্রত্যেকটি বিনোদন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড় পড়ে। ভ্রমন পিয়াসু মানুষগুলো পরিবার-পরিজন, স্বামী-স্ত্রী-সন্তান এবং প্রেমিক যুগল এক স্পট থেকে অন্য স্পটে ঘুরে ফিরে ঈদ আনন্দ উপভোগ করে। শুধুমাত্র ঈদের দিনই নয়, ঈদের পরে গত দু’দিন বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে উপচে পড়া ভীর দেখা যায়। বিশেষ করে নগরীর ত্রিশ গোডাউন বধ্যভূমি এলাকায় কীর্তনখোলা নদীর তীরে বেড়িবাধে, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, দপদপিয়া শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু, নগরী থেকে অদুরে দুর্গাসাগর পাড়, গুঠিয়া মসজিদ সহ বিভিন্ন ভ্রমন স্পটগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভীরে তিল ধারনের ঠাঁই ছিলো না। ওইসব বিনোদন স্পটে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনীর পোশাকধারী এবং সিভিল পোশাকে পুলিশ সদস্যদের তীক্ষ্ম দৃষ্টি ছিলো। সব মিলিয়ে উৎসহ-উদ্দীপনা আর হাসি-খুশি ও আনন্দে উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদ উল ফিতর।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT