শেবাচিম’র টেন্ডার দুর্নীতি করতে দৌড়ঝাপ করছে বির্তকিত দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শেবাচিম’র টেন্ডার দুর্নীতি করতে দৌড়ঝাপ করছে বির্তকিত দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান - ajkerparibartan.com
শেবাচিম’র টেন্ডার দুর্নীতি করতে দৌড়ঝাপ করছে বির্তকিত দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান

6:43 pm , April 22, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ কোটি টাকার টেন্ডার দুর্নীতিতে আলোচিত সেই মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও বেঙ্গল সাইনটিফিক এন্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির এবারের টার্গেট ৪ কোটি টাকার টেন্ডার। ৬৮১৩ কোড এর মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এন্ড ইনস্টুমেন্ট খাতের ওই টেন্ডারের কার্যাদেশ পেতে এরই মধ্যে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করে টেন্ডারের কার্যাদেশ নিজেদের অনুকুলে রাখতে বিভিন্ন কৌশল ও লবিং-তদবির চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে টেন্ডারের স্বচ্ছতা নিয়ে ফের শংকায় পড়েছেন সাধারণ ঠিকাদাররা। অবশ্য এবারের টেন্ডার নিয়ে কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির সুযোগ পাবে না বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. আব্দুল বাকির হোসেন।
হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, সম্প্রতি ১৩০ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এন্ড ইনস্টুমেন্ট খাতে ৪ কোটি টাকার ভারি যন্ত্রপাতি সরবরাহের দরপত্র আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে ইসিজি, এক্সরে ও আলট্রাসনোগ্রাম সহ পরীক্ষা নিরীক্ষার ১০টি মেশিনারী। গতকাল রোববার ছিলো দরপত্র জমা দানের শেষ দিন। বেলা ১২টায় দরপত্র গ্রহন শেষে দেখা গেছে ১০টি গ্রুপের বিপরিতে ৫টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহন করেছে। যে ৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আলোচিত দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। একই হাসপাতালে ১৩০ কোটি টাকা প্রকল্পের আওতায় ৯ কোটি টাকার ভারি যন্ত্রপাতি সরবরাহে যে প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও বেঙ্গল সাইনটিফিক এন্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি। এছাড়া বাকি ৩টি প্রতিষ্ঠান হলো আহসান ব্রাদার্স, পিপলাই এন্টারপ্রাইজ ও সাইফুল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।
চার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয়ের টেন্ডারে অংশ নেয়া ঠিকাদাররা জানিয়েছে, দরপত্র আহ্বানের পূর্বে থেকেই মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও বেঙ্গল সাইনটিফিক এন্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির সংশ্লিষ্টরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে নতুন করে দরপত্র আহ্বান ছাড়াই পূর্বের কার্যাদেশের মাধ্যমে ৪ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সরবরাহের চেষ্টা করে। কিন্তু সাধারণ ঠিকাদারদের বাঁধার মুখে ব্যর্থ হন দুর্নীতি এবং অনিয়মে আলোচিত ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও বেঙ্গল সাইনটিফিক এন্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি। কিন্তু তবুও তারা থেমে থাকেননি। বরং বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং টেন্ডার কমিটির উপর চাপ সৃষ্টি করে দরপত্র ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রশাসনিক বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ইতিপূর্বে ১৩০ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় শেবাচিম হাসপাতাল ও কলেজের ২০ কোটি টাকার মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এন্ড ইনস্টুমেন্ট টেন্ডার বাগিয়ে নেয় মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও বেঙ্গল সাইনটিফিক এন্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি। সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে টেন্ডার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই কাজ বাগিয়ে নেয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুটি মেশিনারী সরবরাহের নামে পুকুর চুরির মিশনে নামে। কম মূল্যের নি¤œ মানের মেশিনারী সরবরাহের মাধ্যমে দুর্নীতি এবং অনিমকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও বেঙ্গল সাইনটিফিক এন্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি। তার মধ্যেও মেডিকেল কলেজে যন্ত্রপাতি সরবরাহের ১১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে সক্ষম হলেও আটকে যায় হাসপাতালের বিল। মেশিনারী সরবরাহের বৈধতা না থাকা এবং দুর্নীতির কারনে ৯ কোটি টাকার হিসাব আটকে দেয়া হয় মন্ত্রনালয় থেকে। শেষ পর্যন্ত অবৈধ যন্ত্রপাতির বৈধতা দিতে এবং আটকে যাওয়া বিল উত্তোলনের জন্য আটঘাট বেধে নামে প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। এমনকি অবসরপ্রাপ্ত সাবেক পরিচালক ডা. সিরাজুল ইসলাম এবং সার্ভে কমিটির প্রধানকে ৭৫ লাখ টাকায় ম্যানেজ করে তারা। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় একাধিক সংবাদ প্রকাশের কারনে হিসাব বিভাগে গিয়ে আটকে যায় বৈধ বিলের কাগজ। ঠিকাদারী বিল পরিশোধ করতে সাবেক পরিচালক ডা. সিরাজুল ইসলাম একক ক্ষমতা বলে এবং মন্ত্রনালয়ের একজন লাইন ডায়রেক্টর এর সহযোগিতায় ঠিকাদারের ৯ কোটি টাকার বিল পরিশোধের পায়তা করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে অবসরে যেতে হয়েছে ডা. সিরাজুল ইসলামকে। এখন বিল আটকে থাকা দুর্নীতি এবং অনিয়মে আলোচিত সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও বেঙ্গল সাইনটিফিক এন্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি পুনরায় ৪ কোটি টাকার কার্যাদেশ ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় হাতিয়ে নেয়ার জন্য মিশন বাস্তবায়নের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ এবং চাপ প্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ সাধারণ ঠিকাদারদের।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল কাবির হোসেন বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান কালো তালিকা ভুক্ত হলে তারা সেই প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহন করতে পারবে না। অংশগ্রহন করলেও তা বাতিল হয়ে যাবে। তবে মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও বেঙ্গল সাইনটিফিক এন্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি দুটি কালোতালিকাভুক্ত নয় বলে শুনেছি।
ম্যানেজ চেষ্টা এবং চাপ সৃষ্টির অভিযোগের সত্যতা জানতে চাওয়া হলে পরিচালক বলেন, কেউ কাজ পেতে চাইলে সে তদবির করতেই পারে। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষেও সুপারিশ এসেছে। যে চাপই আসুক না কেন দরপত্র নিয়ে কোন দুর্নীতি হবে না। পূর্বে কি হয়েছে না হয়েছে তা আমার দেখার বিষয় নয়, আমি চাই স্বচ্ছ ভাবেই দরপত্র কার্যক্রম শেষ হবে। নিয়ম অনুযায়ী যে প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পাবার যোগ্য তাকেই তাকেই কার্যাদেশ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিচালক।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT