বর্তমান কাউন্সিলর আবির সহ মাঠে ৬ প্রার্থী  বর্তমান কাউন্সিলর আবির সহ মাঠে ৬ প্রার্থী  - ajkerparibartan.com
বর্তমান কাউন্সিলর আবির সহ মাঠে ৬ প্রার্থী 

6:55 pm , June 10, 2018

রুবেল খান ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সহ চার দল থেকে এ পর্যন্ত ৬ জনের নাম উঠে এসেছে প্রার্থীর তালিকায়। যার মধ্যে রয়েছেন বর্তমান ও সাবেক দুই কাউন্সিলর। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সহ অন্যান্য দল থেকে একজন করে প্রার্থী আলোচনায় থাকলেও আওয়ামী লীগের রয়েছে একাধিক। যারা সবাই আসন্ন সিটি নির্বাচনে ভোটের লড়াইতে থাকবেন বলে আশা ব্যক্ত করেছেন। তবে সূত্র বলছে, সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় থাকা দুই বারের সাবেক কাউন্সিলর ও জাতীয় পার্টি নেতা মীর আলফাজ উদ্দিন জসিম’র প্রার্থী হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কেননা ঢাকা ব্যাংক বরিশাল শাখার আলোচিত সাড়ে সাত কোটি টাকার দুর্নীতি মামলা তার প্রার্থীতার পথে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে। দুর্নীতি দমন কমিশনের ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এই অভিযোগের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন সাবেক কাউন্সিলর মীর আলতাফ উদ্দিন জসিম।

সরেজমিনে জানাগেছে, বিসিসি’র ১৩নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মেহেদী পারভেজ খান আবির। যিনি আসন্ন ৩০ জুলাই’র নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে সাবেক কাউন্সিলর মীর আলফাজ উদ্দিন জসিমকে প্রায় সাড়ে ৯শত ভোটে পরাজিত করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী পন্থি কাউন্সিলর আবির’র প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ২ হাজার ২৯৪।

নির্বাচন পরবর্তী ওয়ার্ড এবং ওয়ার্ডবাসীর উন্নয়নে কাজ করেছেন তিনি। যা আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতির একটি অংশ ছিলো তার। অবশ্য এবারের নির্বাচনে ওয়ার্ডবাসির কাছে তার খুটিনাটি ভুলত্রুটি উঠে এসেছে। যা ৩০ জুলাই’র নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

ওয়ার্ডের অধিনস্ত সিকদারপাড়া, খান সড়ক ও কাজীপাড়া এলাকার কয়েকজন ভোটারের সাথে আলাপ হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের। এসময় তারা তুলে ধরেন বর্তমান কাউন্সিলর আবির এর গত পাঁচ বছরের কিছু খুটিনাটি ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার কথা। সিকদার পাড়া খান সড়কের কয়েকজন জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে কিছু উন্নয়ন হয়েছে। তবে তা তুলনামুলক নয়। কারন মেহেদী পারভেজ খান আবির নিজ এলাকা ব্যতিত অন্য এলাকার দিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। যার দরুন ময়লা-আবজর্নার ভাগারে পরিনত হয় খান সড়ক মসজিদ সংলগ্ন সড়কটি। সালিশ মিমাংসার বিষয়েও তিনি অভিজ্ঞ নন। নিজের ভোট বাড়াতে এলাকার বখাটে যুবকদের অন্যায়ের প্রশ্রয় এবং কৌশলী ভুমিকা গ্রহন সহ বিভিন্ন অনিয়মের কথা প্রকাশ করেন এলাকার কিছু সংখ্যক ভোটার। তবে এসব খুটিনাটি বিষয় ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন আবির সমর্থকরা।

সম্ভাব্য প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর মেহেদী পারভেজ খান আবির বলেন, প্রথম কাউন্সিলর হিসেবে ভুলত্রুটি হতে পারে। তবে একজন নতুন কাউন্সিলর হিসেবে ওয়ার্ডের যে উন্নয়ন করেছি তা ইতিপূর্বে অনেকেই পারেনি। ওয়ার্ডের রাস্তাÑঘাট উন্নয়ন, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, পয়ঃনিষ্কাশন এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেছি। ওয়ার্ডে এ পর্যন্ত ১০টি টিউবওয়েল স্থাপন করেছি। এখনো ৫০টি টিউবওয়েল স্থাপন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

তিনি বলেন, গত প্রায় পাঁচ বছরে আমি যে সালিশ মিমাংশা করেছি তা দীর্ঘ বছরেও কেউ করতে পারেনি। দীর্ঘ ৪০/৫০ বছরের জমি নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তি করেছি। আমতলা শরীফ বাড়িতে সাবেক কাউন্সিলরের ক্রয়কৃত জমি নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তিও আমার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সালিশের কারনেই হয়েছে।

মেহেদী পারভেজ খান আবির বলেন, আমি আমার জন্য নয় বরং ওয়ার্ডবাসির উন্নয়নের জন্যই দ্বিতীয়বারের মত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি। কেননা কাউন্সিলর হওয়ার পরে কাজ এবং সবকিছু বুঝে উঠতেই আমার তিন বছরের মত সময় লেগেছে। যে কারনে যেসব পরিকল্পনা গ্রহন করেছি তা পুরোপুরি ভাবে বাস্তবায়ন করতে পারিনি। অসমাপ্ত উন্নয়ন সম্পন্ন করতেই আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। ভালো কাজ করে থাকলে জনগনও আমায় ফেলতে পারবে না বলে আশাব্যক্ত করেন তিনি।

এদিকে ১৩নং ওয়ার্ডে চতুর্থ বারের মত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা ভাবছেন সাবেক কাউন্সিলর ও জাতীয় পার্টি নেতা মীর আলফাজ উদ্দিন জসিম। যিনি সিটি কর্পোরেশন ঘোষনার পরে ২০০৩ সালে এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা ১০ বছর কাউন্সিলর ছিলেন। তবে ২০১৩ সালের নির্বাচনে ১ হাজার ৩৩০ ভোট পেয়ে হেরে যান। এবারের নির্বাচন অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই’র নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি রয়েছে বলে শোনা গেছে। এরই মধ্যে ওয়ার্ডের ভোটারদের মুখেও প্রার্থী হিসেবে তার নামটি শোনা যায়। তবে শেষ পর্যন্ত মীর আলফাজ উদ্দিন জসিম নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা তা জানা নেই তার নিজেরও। কেননা তার বিরুদ্ধে ঝুলে থাকা দুদকের দুর্নীতি মামলাই নির্বাচনে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা ব্যাংক বরিশাল শাখা থেকে সাড়ে ৭ কোটি টাকার একটি দুর্নীতি মামলার তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তদন্তে মীর আলফাজ উদ্দিন জসিম এর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। মীর আলফাজ উদ্দিন জসিমের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা আত্মসাতের আলামত খুঁজে পেয়েছে দুদক। যে কারনে ওই মামলায় চূড়ান্তভাবে ফাঁসতে পারেন জসিম। তাই তার নির্বাচনে অংশগ্রহনও অনিশ্চিত হয়ে আছে। কেননা নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী ঋন খেলাপি কিংবা ফৌজদারী মামলার আসামী কোন ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। অবশ্য গত নির্বাচনেও তার বিরুদ্ধে নিজের সন্তানের আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলার তথ্য গোপন করে নির্বাচনে অংশগ্রহনের অভিযোগ রয়েছে মীর জসিমের বিরুদ্ধে।

মীর আলফাজ উদ্দিন জসিম বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা রয়েছে। রয়েছে মানসিক প্রস্তুতিও। কিন্তু দুদকের ওই মামলাটির কারনে এখনো চুড়ান্ত ভাবে কোন সিদ্ধান্তে পৌছতে পারিনি। ঈদের পরে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

অবশ্য ওয়ার্ডের ভোটাররা বলছেন, মীর আলফাজ উদ্দিন জসিম নির্বাচন না করতে পারলেও তার বিকল্প হিসেবে পরিবারের মধ্যে থেকেই একজন সম্ভাব্য প্রার্থী হয়েছেন। তিনি হলেন, ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল মোর্শেদ খান শাহিন। বরিশাল পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান সিকদারপাড়া খান সড়কের মরহুম কালু খান এর নাতি খান শামিম সাবেক কাউন্সিলর মীর আলফাজ উদ্দিন জসিম’র স্ত্রীর বড় ভাই। মামলা জটিলতায় মীর জসিম নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা হলে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন খান শামিম। যেমনটি ২০১৩ সালের নির্বাচনেও করেছিলেন মীর জসিম। ওয়ার্ড পরিক্রমায় উঠে আসা এমন তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে খান শামীমের কাছ থেকেও।

তিনি আজকের পরিবর্তনকে জানান, অনেক আগে থেকেই জনগন আমাকে চাচ্ছে। কিন্তু বোন জামাই নির্বাচন করায় কোনবারই আমি নির্বাচনে অংশ নেইনি। তবে এবার নির্বাচনে অংশগ্রহনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকব কিনা তা নির্ভর করবে মীর জসিমের উপর। সে নির্বাচন করলে আমি আর সেদিকে আগাবো না। সে না করলে অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতার শেষ পর্যায়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। অবশ্য সে জন্য দলীয় সমর্থনের আশাও করছেন তিনি।

অপরদিকে একই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও সদর আসনের এমপি প্রয়াত শওকত হোসেন হিরন’র মামাত ভাই মারুফ খান। তিনি জানিয়েছেন, ২০০৮ সালে এই ওয়ার্ড থেকে প্রথম নির্বাচন করেছিলেন। ওই নির্বাচনে দ্বিতীয় হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে শওকত হোসেন হিরন নির্বাচন করায় ২০১৩ সালের নির্বাচনে আর অংশ নেননি। তবে এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে ১৩নং ওয়ার্ডে বিএনপি’র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের (বাকসু) সাবেক সদস্য এবং কলেজ শাখা ছাত্র দলের সহ-সভাপতি মো. মতিউর রহমান মিঠু।

তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকেই মানুষের উন্নয়ন এবং কল্যানে কাজ করার ইচ্ছা। তাই এলাকায় অসহায় মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরন, শিক্ষা উপকরন, সাহায্য সহযোগিতা প্রদান সহ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন এবং আন্দোলনে কাজ করেছি। আমার ইচ্ছা উন্নয়ন বঞ্চিত এই ওয়ার্ডটিকে মডেল ওয়ার্ডে পরিনত করার। এজন্যই আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহনে ইচ্ছা প্রকাশ করছি। কেননা একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের কাছাকাছি গিয়ে উন্নয়ন করা সম্ভব।

তিনি বলেন, আমার নেতা বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার’র অনুমতি নিয়ে আমি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি। একটি দলের রাজনীতি করলেও সকলের একজন হয়ে সবাইকে সাথে নিয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করার আশা ব্যক্ত করে বলেন, ওয়ার্ডে যে সংখ্যক প্রার্থী রয়েছেন, তাদের মধ্যে আমি শিক্ষা, সামাজিকতা সহ কোন দিক থেকেই পিছিয়ে নেই। এলাকার অসংখ্য জনগন আমাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য বলেছেন। সুতরাং আমার বিশ্বাস জনগন আমাকে ফিরাবে না।

ওদিকে ১৩নং ওয়ার্ডে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন হাফেজ মো. কাওসার হোসেন। যিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১৩নং ওয়ার্ডের সেক্রেটারী। ওই ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলীয়ভাবে তাকে মনোনিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ।

এছাড়াও ওয়ার্ডটিতে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মনির হোসেন ও বর্তমান কাউন্সিলরের চাচা কবির হোসেন’র নাম শোনা যাচ্ছে। তবে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT