6:40 pm , June 9, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ঈদের আগে ও পড়ে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও পূর্বাঞ্চলের সাথে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক পরিবহনকে নির্বিঘœ রাখতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সবগুলো ফেরি সেক্টরে বাড়তি যানবাহন পারাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। দেশের প্রধান দুটি ফেরি সেক্টর সহ সবগুলো সেক্টরে ঈদের আগে-পড়ে লক্ষাধিক যানবাহন সহ প্রায় ৫ লাখ যাত্রী পারাপার করবে বিআইডব্লিউটিসি। যানবাহনের বাড়তি চাপ সামাল দিতে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৪০টি ফেরি নিয়োজিত থাকছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম-বরিশাল-খুলনা/মংলা মহাসড়কের ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও ভোলা-বরিশাল ফেরি সেক্টরে যানবাহন পারপারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে ফেরির অভাবে এ দুটি সেক্টরে যানাবহান পারাপার কিছুটা বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি মাদারীপুর-শরিতপুর সড়কের বেহাল দশার কারনে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ থাকায় চাঁদপুর-শরিয়তপুর সেক্টরে ফেরি পারাপারও প্রায় বন্ধ রয়েছে।
তবে এসব কিছুর পরেও আসন্ন ঈদ উল ফিতরের আগে পড়ে বিআইডব্লিউটিসি তার ফেরি সেক্টরগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ন্যুনতম ১২ হাজার যানবাহন পারাপারের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। গতবছরও ঈদের আগে পড়ের দশ দিনে সংস্থাটির ফেরি বহর লক্ষাধিক যানবাহন পারাপার করে।
সংস্থাটি তার জন্মলগ্ন থেকে রাজধানী ও সন্নিহিত এলাকার সাথে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক পরিবহন খাতে এক ‘চলন্ত সিড়ি’র ভূমিকা পালন করে আসছে। সংস্থাটির বহরে এখন প্রায় ৪৫টির মত নতুন ও পুরনো ফেরি রয়েছে। গতকাল সকাল ৬টার পূর্ববর্তী ২৪ঘন্টায় বিআইডব্লিউটিসি তার ফেরি সেক্টরগুলোতে প্রায় ৯ হাজার ৭শ’ যানবাহন পারাপার করে। তবে এসব কিছুর পরেও গতকাল (শনিবার) সকালে প্রায় ৭শ’ যানবাহন পারপারের অপেক্ষায় ছিল। এরমধ্যে পাটুরিয়া সেক্টরে প্রায় ৩শ’ ও মাওয়া সেক্টরে দেড়শর কিছু কম যানবাহন অপেক্ষমান ছিল।
তবে এবার ঈদ মৌসুমে পদ্মায় নাব্যতা সংকট খুব প্রকট না থাকায় ফেরি চলাচলে বড় ধরনের কোন সংকটের সম্ভবনা নেই বলে মনে করছেন বিআইডব্লিউটিএ ও টিসি’র দায়িত্বশীল মহল। শুধুমাত্র শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী রুটের লৌহজং টার্ণিং পয়েন্টের কিছু অংশে পদ্মায় নব্যতার অভাব রয়েছে। আইডব্লিউটিএ সেখানে ড্রেজিং করে চ্যানেল পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন মাওয়া সেক্টরে বিআইডব্লিউটিসি’র ডিজিএম খালেদ নেওয়াজ।
তবে এবার আষাঢ়ী বর্ষার অমাবশ্যার ভরা কোটালে ভর করেই ঈদের আগের ঘরমুখী যাত্রী নিয়ে যানবাহনের চাপ বাড়বে ফেরি ঘাটগুলোতে। সেক্ষেত্রে আবহাওয়া বৈরী হলে ফেরি পারপারে সংকট সৃষ্টির আশংকা থাকতে পারে। তবে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনা করেই ফেরি সহ সব নৌযান চলাচলের নির্দেশনা দিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। বিআইডিব্লিউটিসি ও আইডব্লিউটিসি যেকোন আপদকালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলেও জানা গেছে।
ঈদের ভীড় সামাল দিতে দেশের সর্ববৃহৎ ফেরি সেক্টর আরিচার পাটুরিয়ার-দৌলতদিয়া রুটে গতকাল পর্যন্ত ৯টি রো-রো ও ৬টি ইউটিলিটি সহ ১৯টি ফেরি চলাচল করছিল। আরো ২টি রো-রো ফেরি আজকের মধ্যেই বহরে যূক্ত হবে। ফলে এ সেক্টরে যানবাহন পারপারে তেমন কোন সমস্যার সম্ভবনা নেই বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল মহল। এ সেক্টরের সবগুলো ফেরি ঘাটও স্বাভাবিক পরিচালন অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফেরি সেক্টর মাওয়াতেও গতকাল পর্যন্ত ১৭টি ফেরি চলাচল করছিল। আরো ২টি ফেরি বহরে যুক্ত হবে দু-একদিনের মধ্যেই। এ সেক্টরে গতকাল পর্যন্ত ৪টি রো-রো, ৫টি কে-টাইপ, ৬টি ডাম্ব ফেরি ও ২টি মিডিয়াম ফেরি চলাচল করছিল। এ ছাড়াও আজকালের মধ্যে এ সেক্টরে আরো ১টি ডাম্ব ও একটি কে-টাইপ ফেরি যুক্ত হবে বলে জানা গেছে। মাওয়া সেক্টরের কাঠালবাড়ী ও শিমুলিয়া প্রান্তে পদ্মার দু পাড়েই ৪টি করে ফেরি ঘাট সচল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিজিএম খালেদ নেওয়াজ।
অপরদিকে চট্টগ্রাম-বরিশাল-খুলনা/মোংলা মহাসড়কের ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তী ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট ফেরি সেক্টরে গতকাল সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় ৩টি কে-টাইপ ফেরির সাহায্যে ২শ’ যানবাহন পারাপারের পরেও শতাধিক অপেক্ষমান ছিল। ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের সর্বাধিক দৈর্ঘ্যরে এ ফেরি সেক্টরে কমপক্ষে ৫টি সচল ফেরি প্রয়োজন হলেও রয়েছে মাত্র ৩টি। ঐ একই মহাসড়কের ভোলা ও বরিশালের মধ্যবর্তী ভেঁদুরিয়া-লাহারহাট সেক্টরে ৩টি ইউটিলিটি ফেরির ১টি প্রায়ই বন্ধ থাকছে। ফলে সেখানে জরুরী ভিত্তিতে ‘কেতকী’ নামের একটি কে-টাইপ ফেরি মোতায়েন করা হলেও তা আজকালের মধ্যে মাওয়া সেক্টরে নিয়ে যাবার সম্ভবনা রয়েছে। ফলে ভোলা ও বরিশালের মধ্যবর্তী এ ফেরি সেক্টরে নতুন করে সংকট সৃষ্টির আশংকা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। গতকাল সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় ভেদুরিয়া-লাহারহাট সেক্টরে ২৮৮টি যানবাহন পারাপারের পরেও শতাধিক অপেক্ষমান ছিল।
তবে এসব কিছুর পরেও বিআইডব্লিউটিসি আসন্ন ঈদ উল ফিতরের আগে পরের অন্তত ১০ দিনে দেশের ফেরি সেক্টরগুলোতে লক্ষাধিক যানবাহন সহ অন্তত ৫ লাখ যাত্রী পারপারের লক্ষ্যে প্রস্তুতি রয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।