বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে ঈদ বিশেষ সেবার আগাম টিকিট বিক্রি শুরুর আগেই শেষ বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে ঈদ বিশেষ সেবার আগাম টিকিট বিক্রি শুরুর আগেই শেষ - ajkerparibartan.com
বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে ঈদ বিশেষ সেবার আগাম টিকিট বিক্রি শুরুর আগেই শেষ

7:04 pm , June 8, 2018

রুবেল খান ॥ ঢাকা-বরিশাল রুটে বেসরকারি লঞ্চের ঈদ বিশেষ সেবা শুরু হবে আগামী ১৪ জুন থেকে। তাই গতকাল শুক্রবার থেকে বিশেষ সেবার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির টিকিট বুকিং শুরুর কথা ছিল। কিন্তু শুরুর পূর্বেই ঢাকা থেকে আসা ও বরিশাল থেকে ফেরার ওই তিন শ্রেনীর কোন টিকিট নেই। সকল টিকিট বুকিং হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সকল নৌ-যানের কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে। বিশেষ করে নতুন চালু হওয়া বিলাসবহুল লঞ্চের ক্ষেত্রে এমনটি বেশি দেখা গেছে। গতকাল শুক্রবার বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের সুরভী, পারাবত, সুন্দরবন, কীর্তনখোলা, এ্যাডভেঞ্চার ও গ্রীন লাইন কাউন্টারে গিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। তাদের কাছে টিকিট না পেলেও কালোবাজারীদের কাছে রয়েছে। বাড়তি টাকা দিলেই মিলছে টিকিট।

বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে চলাচলকারী বিলাসবহুল লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারেও তাদের বিশেষ ১৪ জুন থেকে শুরু হবে। ঝামেলা এড়াতে ৮ জুন থেকে বিশেষ সেবার টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় লঞ্চ মালিকরা। তবে তার আগে টিকিট পেতে আগ্রহীদের কাছ থেকে স্লিপ গ্রহন শুরু করে তারা।

বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের এমভি সুরভী লঞ্চ’র নিয়মিত যাত্রী তারেক হাসান জানান, ১৪ জুন ঢাকা থেকে বিশেষ সেবার টিকিট পেতে স্লিপ গ্রহন করা হয়। তাকে ৮ জুনের মধ্যে টাকা জমা দিয়ে টিকিট গ্রহন করতে বলা হয়। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুটি ডাবল কেবিনের স্লিপ নিয়ে টিকিট আনতে প্যারারা রোডে সুরভী কাউন্টারে যোগাযোগ করেন। কিন্তু টিকিট আর পাওয়া যায়নি। টাকা জমা দিতে দেরি হয়েছে বলে অজুহাত দিয়ে যাত্রীকে ফেরত পাঠিয়ে দেন কাউন্টারের থাকা রাকিব । এমন অভিযোগ শুধু তারেকের নয়, আরো বহু যাত্রীই সুরভী সহ অন্যান্য লঞ্চে টিকিট পাওয়া নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন।

যাত্রীদের অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হতে গতকাল শুক্রবার বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন লঞ্চের বুকিং কাউন্টারে যোগাযোগ করা হয়। এসময় যাত্রীদের অভিযোগের বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া গেছে। সকালে নগরীর ফজলুল হক এভিনিউতে সুন্দরবন লঞ্চ কাউন্টারে টিকিট এর জন্য যোগাযোগ করা হয়। দেখা যাত্রী কেবিনের টিকিট পেতে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। কিন্তু কেউ টিকিট পাচ্ছেন না। সুন্দরবন লঞ্চ’র বুকিং কাউন্টারে থাকা ব্যক্তিদের কাছে ঢাকা থেকে ১০ থেকে ১৪ জুনের মধ্যে যে কোন একদিনের ডাবল এবং সিঙ্গেল কেবিন’র টিকিট। কিন্তু কেবিন শব্দটি শোনার সাথে সাথে জানিয়ে দেয়া হয় কেবিন খালি নেই। একই বুকিং কাউন্টারে ঈদ পরবর্তী ২৩ বা ২৫ জুনের কেবিন খালি আছে কিনা প্রশ্ন করা হয়। তখন বলা হয় ঈদের পরে একমাস কোন বুকিং খালি নাই।

একই ভাবে প্যারারোডে সুরভী কাউন্টারে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সেখান থেকেই বিমুখ হয়ে ফিরতে হয়। নিজের পরিচয় দিয়ে কেবিনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, সুরভী কাউন্টার থেকে বলা হয়, বিশেষ সেবার টিকিট দেয়ার দায়িত্ব শুধু আমাদের। কিন্তু কে টিকিট পাবে আর কে পাবে না সেটা নির্ধারন করেন মালিক পক্ষ। রোজার মধ্যে স্লিপ দেয়া হয়েছে। এখন যারা স্লিপ নিয়ে আসে আমরা শুধুমাত্র তাদের কাছ থেকে টাকা রেখে টিকিট দিয়ে দিচ্ছি। নতুন করে কেবিন বুকিং দেয়ার সুযোগ নেই।

যোগাযোগ করা হয় এ্যাডভেঞ্চার এর বুকিং কাউন্টারে। সেখানে গিয়েও একই চিত্র ফুটে উঠে। পূর্বে থেকে চলাচল করা এ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চে কেবিন তো মেলেই নেই, এমনকি গতকাল থেকে চলাচল শুরু করা এ্যাডভেঞ্চার-১০ লঞ্চটি যাত্রা শুরুর আগেই কেবিন একমাসের জন্য বুক হয়ে গেছে।

তবে কীর্তনাখোলা লঞ্চ কাউন্টারে গিয়ে মেলে ঈদ পরবর্তী ফিরতী যাত্রার একটি ডাবল কেবিন। নির্ধারিত ভাড়ায় ২৩ জুনের ওই টিকিট গ্রহন করা হয়। কাউন্টারের ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আগে এলে আগে নীতিতে তারা বিশেষ সেবার কেবিনের টিকিট বিক্রি করে থাকেন। সে অনুযায়ী ২৩ জুনের একটি কেবিন খালি ছিলো। যে কারনে সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে কেবিনটি দেয়া গেছে।

এদিকে দিবা সার্ভিসের জাহাজেরও একই অবস্থা। বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে চলাচলকারী এমভি গ্রীন লাইন’র দুটি কাউন্টারে যোগাযোগ করা হয় ১৩ ও ১৪ জুনের দুটি টিকিট এর জন্য। প্যারারা রোড ও কাকলির মোড়ের বুকিং কাউন্টারে ঢাকা থেকে দুই দিনের দুটি টিকিট নেই বলে জানিয়ে দেয়া হয়। এর পাঁচ মিনিটের মাথায় এক ব্যক্তিকে টিকিটের জন্য কাকলির মোড়ে বুকিং অফিসে পাঠানো হয়। প্রথমে নেই জানিয়ে দেয়া হলেও বাড়তি ৫০০ টাকায় টিকিট পেয়ে যায় ওই ব্যক্তি। ঈদকে কেন্দ্র করে গ্রীন লাইনের বাড়তি বানিজ্য ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

অবশ্য বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন লঞ্চ মালিক পক্ষের সাথে কথা বললে তারা বিশেষ সার্ভিসের টিকিট না পাওয়ার বিষয়ে পাল্টা যৌক্তি তুলে ধরে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে তাদের টিকিট সংকট থাকে। তার মধ্যে ঈদের আগে লাখ লাখ মানুষ লঞ্চে আসা যাওয়া করে। যে কারনে যাত্রীরা আগে ভাবেই কেবিন বুকিং দিয়ে রাখে। মালিক পক্ষ ঈদের আগে পড়ে চাপ সামলাতে আগে ভাগেই টিকিট দিয়ে দেন। অবশ্য অনেক অনেক ক্ষেত্রে যারা পূর্বে টিকিট বুকিং দিয়ে থাকেন তারা তাদের টিকিট বাতিল করেন। তাই ওই টিকিটটি নতুন কাউকে দেয়া সম্ভব হয়। এর বাইরে কোন অনিয়মের সুযোগ নেই। কালোবাজারিদের কাছে টিকিট থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, লঞ্চের কিছু স্টাফ থাকে যারা আত্মীয় স্বজনদের নাম দিয়ে টিকিট বুকিং দেয়। যা পরবর্তীতে দালালের মাধ্যমে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। সেসব স্টাফদের চিহ্নিত করতে পারলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT